যৌতুক চাওয়ার ঘটনায় তদন্ত-হিরণের বক্তব্য নাকচ করলেন ফারজানা

শিক্ষক শওকত হোসেন হিরণ ও তার ফুপু তাহমিনা খানমের বিরুদ্ধে ওঠা যৌতুক চাওয়ার অভিযোগের তদন্ত শেষ হয়েছে। পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পৃথকভাবে ঘটনার তদন্ত করেন। এদিকে গত সোমবার রাতে কলাপাড়া প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে কলাপাড়ার মাদ্রাসা রোড এলাকার মোঃ শাহ আলম খানের ছেলে শওকত হোসেন হিরণ যৌতুক দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, একটি মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে তার এবং তার পরিবারের সুনাম নষ্ট করছে।


তিনি বলেন, ঘটকের মাধ্যমে একমাস উভয়ের পরিবারের মধ্যে আলোচনা শেষে ১১.১১.১১ তারিখে বিয়ের দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছিল। হিরণ প্রশ্ন তোলেন, যেখানে বিয়ে ঠিক করার আগে যৌতুক চাওয়া হয়নি সেখানে বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে যৌতুক দাবি কতটা যুক্তিযুক্ত। হিরণের এসব বক্তব্য অবশ্য নাকচ করে দিয়েছেন ফারজানা ইয়াসমিন নিপা। সমকালকে তিনি বলেন, হিরণের বক্তব্য হাস্যকর। অন্যদিকে যৌতুক দাবির ঘটনায় হিরণ ও তার ফুপুর শাস্তি দাবিতে আজ বরগুনার আমতলীতে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছে।
পটুয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আবদুল কাদের জানান, সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তদন্ত পরিচালিত হয়। এ সময় জিডির কপি, লিখিত বক্তব্য, ভিডিও ফুটেজ, স্থিরচিত্রসহ উভয় পক্ষের লিখিত বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার তিনি মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠিয়ে দিয়েছেন। তিনি আরও জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ পাওয়ার পর দুই শিক্ষকের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিখিল চন্দ্র হালদার জানান, মঙ্গলবার সকালে তিনি ফারজানা ইয়াসমিন নিপার বাড়ি পরিদর্শন করেছেন। আজ বুধবার মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিদারে আলম মোহম্মদ মাকসুদ চৌধুরী সমকালকে বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে বিয়ের আসরে ভুল বোঝাবুঝি থেকে ঘটনাটি ঘটেছে।
সংবাদ সম্মেলনে হিরণ বলেন, বিয়েটি স্মরণীয় করতে ১১.১১.১১ তারিখ সকাল ১১টা ১১ মিনিটে বিয়ে সম্পন্ন হয়। বৌ ভাতের সব আয়োজনও সম্পন্ন হয়েছিল। অথচ ফারজানা ইয়াসমিন নিপা তার প্রেমিককে বিয়ে করার জন্য আমাকে যৌতুক দাবির অপবাদ দেন। তালাক দেওয়ার ঘোষণায় আমার পরিবারের প্রতিটি সদস্য মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে।
কলাপাড়ার চাকামইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিরণ সংবাদ সম্মেলনে বিয়ের দিনের ভিডিও ফুটেজ উপস্থাপন করেন। এ সময় তিনি বলেন, বিয়ের পয়নামায় দেওয়া একটি নেইল পলিশ রিমুভার নিয়ে উভয় পক্ষের কথা কাটাকাটি হয়। অথচ আমাকে হয়রানি করার জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেন, নিপার দুলাভাই গলাচিপা উপজেলার সাংবাদিক এ ঘটনার জন্য দায়ী।
হিরণের অভিযোগের জবাবে ফারজানা
গতকাল টেলিফোনে ফারজানা ইয়াসমিন নিপা বলেন, 'আমার যদি প্রেমই থাকবে তাহলে পরিবারের সিদ্ধান্তের এ বিয়েতে রাজি হব কেন। এ ছাড়া বিয়ের তারিখ ঠিক হওয়ার পর এক মাস সময় ছিল। তখন বরপক্ষ নিশ্চয় আমার সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়েছিল। নিপা প্রশ্ন তোলেন, তখন কি তারা কিছু জেনেছিল?'
নিপা আরও বলেন, 'আমি দীর্ঘদিন ঢাকায় পড়াশোনা করেছি। কোনো ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলে আমার অভিভাবকের সম্মতিতে সেই ছেলেকেই বিয়ে করতাম। এ ছাড়া আমার প্রেম আছে কি-না সে ব্যাপারে হিরণের ফুপু আগেই জানতে চেয়েছিলেন। এখন এ ধরনের প্রশ্ন তোলা অবান্তর, হাস্যকর।' নিপা বলেন, 'জমি বিক্রি করে বাবা আমার বিয়ের খরচ জোগাড় করেছিলেন। আমি এ টাকা নষ্ট হতে দিতাম না।'
ফারজানাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ
যৌতুকবিরোধী ভূমিকার জন্য ইডেন কলেজের সাবেক ছাত্রী ফারজানা ইয়াসমিন নিপাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহফুজা চৌধুরী। গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তিনি নিপাকে বীর ইডেনকন্যা হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ফারজানার সাহসী ও প্রতিবাদী ভূমিকার জন্য আমরা অহঙ্কারবোধ করছি। ইডেন কলেজের সব শিক্ষক, ছাত্রী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী ফারজানাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.