মুশফিকদের নিয়ে চন্দরপলের ক্লাস

দেবেন্দ্র বিশুকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে চলে গেছেন ড্যারেন স্যামি। কিন্তু মাঠের মাঝখানে শিবনারায়ণ চন্দরপলকে ঘিরে ওটা আবার কিসের ‘সংবাদ সম্মেলন’? খেলা শেষ। কোথায় ড্রেসিংরুমে গিয়ে আরাম করবেন তা না, মাঠের মাঝে হাত নেড়ে নেড়ে কী বোঝাচ্ছেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের? উদ্যোগটা মুশফিকুর রহিমেরই ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের লিয়াজোঁ অফিসার ফাহিম মুনতাসিরের মাধ্যমে অনুরোধ পাঠিয়েছিলেন, চন্দরপল যদি খেলা শেষে তাঁদের সঙ্গে একটু কথা বলেন। চন্দরপল না করেননি।
খেলা শেষে বাংলাদেশের আট ক্রিকেটারকে মাঠে দাঁড়িয়েই দিলেন অনেক পরামর্শ। মুশফিক নিজে জানতে চেয়েছিলেন, চন্দরপলের ব্যাটিংয়ের মূল মন্ত্রটা আসলে কী? উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ব্যাটসম্যান যেভাবে শুরু থেকেই জমে যান, কোনো বোলারের মনে এই বিশ্বাস জন্মানো কঠিন, তাঁকেও আউট করা সম্ভব। কীভাবে হওয়া যায় ও রকম ব্যাটসম্যান? নিজের কথা বলতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতাটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন চন্দরপল, ‘কখনোই মনে হয়নি আমরা তোমাদের আউট করছি। তোমরা নিজেরাই নিজেদের আউট করেছ। এটা যেন ভবিষ্যতে না হয়। উইকেটে গিয়ে আগে স্থির হতে হবে। সেট হয়ে যাওয়ার পরও সব বলেই মারতে হবে, ব্যাপারটা এমন নয়।’
চন্দরপলের কাছে শাহরিয়ার নাফীসেরও ছিল একই প্রশ্ন। সঙ্গে বাড়তি জানতে চেয়েছেন ফুটওয়ার্ক নিয়ে। ইনিংসের শুরুতে পা চলতে চায় না শাহরিয়ারের। তাতে সমস্যায় পড়তে হয় মাঝেমধ্যেই। কিন্তু চন্দরপলকে তো দেখেছেন, কোনো ফুটওয়ার্ক ছাড়াই রানের পর রান করে যেতে! কীভাবে সম্ভব? ‘ছোটবেলায় যখন খেলা শুরু করি, তখন থেকেই অনেক বাউন্সার সামলাতে হয়েছে। ওই সময় আমরা জায়গায় দাঁড়িয়েই খেলার চেষ্টা করতাম। সেই থেকে অভ্যাস হয়ে গেছে। অফ স্টাম্পটা কোথায় আছে জানলে আসলে ফুটওয়ার্ক কোনো সমস্যা নয়। আর কে কী বলল, সেটা নিয়ে ভাববে না। বল বুঝে নিজের খেলাটা খেলতে চেষ্টা করবে।’
নিজের খেলার প্রতি আত্মবিশ্বাস রাখার ব্যাপারে বিশেষভাবেই জোর দিয়েছেন চন্দরপল। তামিমের প্রশ্নটাও ছিল অনেকটা এ বিষয়েই, ‘আমি কীভাবে খেলব’ জাতীয়। বাংলাদেশ দলের এই বাঁহাতি ওপেনার মেরে খেলতে পছন্দ করেন। কিন্তু কোচরা অনেক সময় পরামর্শ দেন ভিন্ন পথ ধরতে। এ অবস্থায় করণীয় কী? চন্দরপলের পরামর্শ, ‘তুমি নিজে যা তাই...। মানুষের পরামর্শ নেবে, কিন্তু নিজে যেভাবে খেলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করো, আমার মনে হয় সেভাবেই খেলা উচিত।’
তুলে মারা শটগুলোতেও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতা খুঁজে পেয়েছেন চন্দরপল। যতটা সম্ভব নিচে নিচে খেলার পক্ষে চন্দরপল। তুলে মারলেও সেটি যেন অনেক ওপরে উঠে না যায়। তাতে ক্যাচের আশঙ্কা বাড়ে। বল বেশি ওপরে ওঠানোর চেয়ে বেশি দূরে নেওয়ার চিন্তাটাই থাকা উচিত বলে মনে করেন চন্দরপল।
তামিম-মুশফিকদের পাশে দাঁড়িয়ে ইমরুল কায়েস, রুবেল হোসেন, নাসির হোসেন, মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী, ইলিয়াস সানিরাও মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনেছেন চন্দরপলের কথা। এখন সেসব কথা তাঁদের মনে থাকলেই হয়। বড় মাপের ক্রিকেটারদের ঘিরে বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের এমন জটলা যে দেখা গেছে আগেও!

No comments

Powered by Blogger.