প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের সাক্ষাৎ: বাংলাদেশের পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এরপর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। সাক্ষাৎকালে হেলেন লাফেভ বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে অভিনন্দন জানাতে পেরে যুক্তরাষ্ট্র আনন্দিত। আগামী দিনগুলোতে ঢাকা ও ওয়াশিংটন আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। হাজার হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভিসা প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস চলতি সপ্তাহে কনস্যুলার সেবা পুনরায় চালু করবে এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শ্রম, আইনের শাসন এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ঘনিষ্ঠভাবে সহায়তা করবে। ওয়াশিংটন যুক্তরাষ্ট্রে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন ইতিমধ্যে শুরু করেছে এবং তিনি আশা প্রকাশ করেন এই প্রক্রিয়া আরও দ্রুততর হবে। রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দাতা যুক্তরাষ্ট্র। এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা বাড়ানোর ফলে রোহিঙ্গাদের মাসিক খাদ্য সহায়তার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র পাশে থাকায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস ওয়াশিংটনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বহুমাত্রিক সহায়তার ক্ষেত্রে কক্সবাজারের ক্যাম্পে বসবাসরত দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আর্থিক সহায়তা অব্যাহত রাখার বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো।
অন্তর্বর্তী সরকার আমূল সংস্কার কার্যক্রম সম্পাদনের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের এই কূটনীতিককে বলেন, একটি যৌক্তিক সময় পরে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে বন্যাদুগর্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে দাতাগোষ্ঠীকে একটি ‘কমন প্ল্যাটফরম’ গঠন এবং সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। সাক্ষাৎকালে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফেভ বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি এবং সংখ্যালঘুদের বিষয় নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক ‘সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত’ এবং অন্তর্বর্তী সরকার সকল নাগরিকের মানবাধিকার সুরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সাক্ষাৎকালে মানবাধিকার ইস্যু, সাইবার সিকিউরিটি আইন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও বিভিন্ন পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জানান, ন্যায়বিচার নিশ্চিতের লক্ষ্যে তার সরকার বাংলাদেশে একটি প্রসিকিউটোরিয়াল সার্ভিস স্থাপনে সহায়তা করার চেষ্টা করছে।
ড. ইউনূসকে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের অভিনন্দন
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সোমবার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি ফোন করে ড. ইউনূসকে এ অভিনন্দন জানান। ফোনালাপে ইউএনএইচসিআর প্রধান নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশকে পুনর্গঠনের জন্য তিনি ‘অবিশ্বাস্য দায়িত্ব’ গ্রহণ করেছেন। ফোনালাপে উভয় নেতা রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে চলমান সংঘাতের কারণে হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষের বিষয়ও আলোচনায় উঠে আসে। অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে বসবাসরত দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সম্মানজনক এবং স্বেচ্ছায় নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য তার সহায়তা কামনা করেন। তিনি বাংলাদেশের ক্যাম্পে বেড়ে ওঠা তরুণ রোহিঙ্গা সন্তানদের একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গঠনে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার সহায়তা কামনা করেন।
ইউএনএইচসিআর হাইকমিশনার নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি সাইডলাইন বৈঠকের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ জানান। ফিলিপ্পো গ্রান্ডি প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, এ বছর অক্টোবর মাসে তার বাংলাদেশ সফরের পরিকল্পনা রয়েছে।
No comments