জেনিনে পানি-বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল

ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের জেনিনে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গতকাল রোববার দখল করা ওই এলাকায় টানা পঞ্চম দিনের মতো অভিযান চালানো হয়। এদিকে অভিযানের অংশ হিসেবে জেনিনে পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল।

কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়াই জেনিনে বড় ধরনের অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। সাঁজোয়া যান, ড্রোন ও স্নাইপারদের সহায়তায় শত শত ইসরায়েলি সেনা এ অভিযান শুরু করে। স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসসহ ফিলিস্তিনি বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর যোদ্ধাদের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হচ্ছে।

বর্তমানে জেনিন শহরের বেশি ভাগ অংশে পানি ও বিদ্যুৎ নেই। ঘটনার আকস্মিকতায় বিপাকে পড়েছে জেনিনের বাসিন্দারা। তারা পানি ও খাদ্যসংকটে ভুগছেন।

গত পাঁচ দিনের অভিযানে জেনিনে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানকার শরণার্থীশিবির। সেখানকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। এই শরণার্থীশিবিরে ২০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির বসবাস।

জেনিন শহর থেকে এই অভিযানের সংবাদ সংগ্রহ করছেন আল-জাজিরার সাংবাদিক নিদা ইব্রাহিম। তিনি বলেন, ‘সেখানে আমার দেখা এটি সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক অভিযান।’

এদিকে পশ্চিম তীরের পাশাপাশি গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল রোববার জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় ২৪ ঘণ্টায় গাজায় আরও ৪৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় ৪০ হাজার ৭৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৯৪ হাজার ১৫৪ জন।
ছয় জিম্মির মরদেহ উদ্ধার

দক্ষিণ গাজায় টানেল থেকে ছয় জিম্মির মরদেহ উদ্ধার করার কথা জানিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। গত শনিবার তাঁদের মরদেহ উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর গতকাল রোববার দেওয়া এক বিবৃতির বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, রাফা এলাকায় ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গের ভেতর গত শনিবার ওই সব মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার দুই দ্বৈত নাগরিক রয়েছেন।

মরদেহ উদ্ধার হওয়া জিম্মিদের নাম প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। তাঁরা হলেন কারমেল গ্যাট, অ্যাডেন ইয়েরুশালমি, হার্শ গোল্ডবার্গ-পলিন, আলেকসান্দার লোভানভ, আলমগ সারুসি ও মাস্টার সার্জেন্ট ওরি ড্যানিনো।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল দানিয়েল হাগারি বলেছেন, ‘প্রাথমিক মূল্যায়ন অনুযায়ী, আমরা সেখানে পৌঁছানোর অল্প সময় আগে হামাস সন্ত্রাসীরা তাঁদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে।’

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। ওই সময় জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয় আরও ২৫১ জনকে। গত বছরের নভেম্বরে গাজায় সাত দিনের যুদ্ধবিরতির সময় হামাস শতাধিক জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল।

এদিকে জিম্মিদের মুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার পদক্ষেপ না নেওয়ায় দেশজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে, স্থানীয় সময় গতকাল সন্ধ্যায় জনগণকে রাজপথে নেমে আসারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গাজায় পোলিও টিকাদান শুরু

গাজায় আনুষ্ঠানিকভাবে গতকাল পোলিও টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে তিন দিনের এই টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। টিকাদানের সুযোগ দিতে গাজায় তিন দিন হামলা বন্ধে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল।

ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের পর সড়কের পাশে পড়ে আছে একটি গাড়ির ধ্বংসস্তূপ

No comments

Powered by Blogger.