ডিবি কর্মকর্তা আরাফাতকাণ্ডে লজ্জিত এলাকাবাসী

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও নিয়ে সারা দেশের ন্যায় বরিশালেও ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাস্তায় পরে থাকা লাশ একটি ভ্যানে স্তূপ করছে পুলিশ সদস্য।

লাশের স্তূপ করতে ব্যস্ত পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি হলেন ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেন। তিনি বরিশালের হিজলা উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের পূর্বকান্দি গ্রামের মুন্সি বাড়ির বাসিন্দা আরিফ সিকদারের বড় ছেলে।

প্রায় দুই বছর আগে ঢাকা জেলার গোয়েন্দা বিভাগে যোগ দেন। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে পড়াশোনা করেন।

তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আরাফাত সবার বড়। আরাফাত হোসেন গ্রামের সবার কাছে আরজু নামে বেশি পরিচিত। আরাফাতের বাবা আরিফ সিকদার বদরটুনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। তিনি হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।

গণমাধ্যম সূত্রে মানুষ জানতে পারেন, ঢাকার সাভারের আশুলিয়া থানায় গত ৫ আগস্ট এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে এবং ভ্যানে তোলা ওই লাশগুলোর পরিচয় যেন নিশ্চিত না যায়, সে কারণে লাশগুলো পুড়িয়ে বীভৎস করে দেওয়া হয়েছে। এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও লাশ পোড়ানোর ঘটনায় পুলিশ সদস্য আরাফাত হোসেনের জড়িত থাকায় বিস্মিত ও লজ্জিত তার (আরাফাত) উপজেলা ও গ্রাম থেকে শুরু করে পুরো জেলার বাসিন্দারা।

আরাফাতের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, টিনশেডের দোতলা ঘরটি তালাবদ্ধ। তালাবদ্ধ ঘরের বিষয়ে একই বাড়ির বাসিন্দা ও আরাফাতের মামাতো ভাইয়ের স্ত্রী সানজিদা বেগম বলেন, আরাফাতের ভাইয়ের স্ত্রী এক সঙ্গে তিন কন্যাসন্তান প্রসব করেছেন। তাদের দেখাশোনার জন্য প্রায় চারমাস আগে থেকে পরিবারের সবাই ঢাকায় আছেন।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওর বিষয়ে তিনি বলেন, ভিডিওটি আমি দেখেছি। হেলমেট হাতে পুলিশের ভেস্ট পরা লোকটি হলেন আমাদের আরজু (আরাফাত) ভাই। এই বাড়িতে বউ হয়ে এসেছি ১৬ বছর। এর মধ্যে আরজু ভাইকে হাতেগোনা কয়েকবার বাড়িতে আসতে দেখেছি। গত বছরও তিনি বাড়িতে এসেছিলেন। তার সম্পর্কে এলাকার কেউ খারাপ মন্তব্য করতে পারবেন না। তবে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে যা দেখলাম, তাতে পুরো বিষয়টিতে আরও মানবিক হওয়া যেত।

আরাফাতের গ্রামের বাড়ি সংলগ্ন মেমনিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের দপ্তরি আব্বাস উদ্দিন বলেন, আরাফাত হোসেন আমাদের সিনিয়র বড় ভাই। এইচএসসি পাসের পরে তিনি ঢাকায় পড়াশোনা করেছেন। তাই এলাকায় যাতায়াত অনেকটা কম ছিল। তিনি কোনোদিন এলাকার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তবে তার বাবা আরিফ উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে।

তিনি বলেন, ভিডিও দেখার পর মন ভেঙে গেছে। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যাই হোক না কেন, মৃত ব্যক্তির লাশ নিয়ে এভাবে তাচ্ছিল্য করা ঠিক হয়নি। এ ঘটনা দেখে তার ওপর এলাকাবাসীর শ্রদ্ধাবোধ কমে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা নুর মোহম্মদ সরদার বলেন, পুলিশের চাকরি নেওয়ার পর আরাফাত গ্রামের বাড়িতে কম আসত। আরাফাতকে জড়িয়ে আশুলিয়া থানায় এলাকায় ভ্যানে লাশ উঠানো নিয়ে নানা কথাশুনে প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। পরে ভিডিও দেখে নিজের কাছেই খুব খারাপ লেগেছে।

তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষকের ছেলে হয়ে এমন কাজটি সে করতে পারেন না। তার এ কর্মকাণ্ডে শুধু হরিনাথপুর কিংবা হিজলা উপজেলার মানুষই নয় পুরো বরিশালবাসী এ ঘটনায় লজ্জিত।

No comments

Powered by Blogger.