ইসরায়েলে এত বড় বিক্ষোভ-ধর্মঘটের কারণ কী

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা থেকে গত শনিবার ছয় জিম্মির মৃতদেহ উদ্ধারের পর ইসরায়েলজুড়ে নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়। ডাকা হয় দেশজুড়ে ধর্মঘট।

প্রায় ১১ মাস আগে গাজা যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলে এত বড় ও ব্যাপক বিক্ষোভ আগে কখনো হয়নি।

গত শনিবার দক্ষিণ গাজার রাফা এলাকায় একটি সুড়ঙ্গ থেকে ছয় জিম্মির মরদেহ উদ্ধার করেন ইসরায়েলি সেনারা। তাঁদের মধ্যে একজন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক ছিলেন। তাঁরা হলেন কারমেল গ্যাট, অ্যাডেন ইয়েরুশালমি, হার্শ গোল্ডবার্গ-পলিন, আলেকসান্দার লোভানভ, ওরি ড্যানিনো ও আলমগ সারুসি।

ছয় জিম্মির মরদেহ উদ্ধারের পর সাধারণ ইসরায়েলিদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। ইসরায়েলজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ।

গত রোববার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের বিরুদ্ধে কয়েক লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা জিম্মিদের মুক্তির জন্য অবিলম্বে চুক্তির দাবি জানান।

গতকাল সোমবার ইসরায়েলের প্রধান ট্রেড ইউনিয়ন হিস্ট্রাড্রট দেশজুড়ে ধর্মঘট পালন করে। ধর্মঘটে তেল আবিবসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর কার্যত অচল হয়ে পড়ে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সে সময় ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়।

গত বছরের নভেম্বরে এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির মধ্যে বেশ কয়েকজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় জীবিত ও মৃত অবস্থায় বেশ কিছু জিম্মিকে উদ্ধার করেন ইসরায়েলি সেনারা।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, গাজায় হামাসের হাতে এখনো ৯৭ জিম্মি আছেন। আর মোট মৃত্যু হয়েছে ৩৩ জিম্মির।

ইসরায়েলি বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, গাজা থেকে জিম্মিদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে একটি চুক্তিতে উপনীত হতে বারবার ব্যর্থ হয়েছেন নেতানিয়াহু। এখনো যাঁরা জিম্মি আছেন, তাঁদের মুক্ত করতে তাঁর সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

বিক্ষোভকারীদের দাবি, গাজায় থাকা বাকি জিম্মিদের প্রাণ রক্ষায়, তাঁদের নিরাপদে ইসরায়েলে ফিরিয়ে আনার জন্য নেতানিয়াহু সরকার তার বর্তমান অবস্থান বদল করুক। সরকার দ্রুত একটি চুক্তি করুক।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ছয় জিম্মিকে উদ্ধারে কাছাকাছি পৌঁছানোর কিছু আগে তাঁদের হত্যা করে হামাস।

জিম্মি মৃত্যুর ঘটনায় ‘কড়া’ জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন নেতানিয়াহু।

তবে এসব কথায় উল্টো নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ ইসরায়েলিদের ক্ষোভ আরও বেড়ে গেছে।

গত রোববার ইসরায়েলে অভূতপূর্ব বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে তীব্র ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণে হওয়া বিক্ষোভে অনেক সড়ক বন্ধ হয়ে যায়।

ইসরায়েলের সর্ববৃহৎ ট্রেড ইউনিয়ন হিস্ট্রাড্রট গতকাল সোমবার দেশজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দেয়। এই ট্রেড ইউনিয়নের সদস্যসংখ্যা প্রায় আট লাখ। ধর্মঘটে ইসরায়েলের অর্থনৈতিক কার্যক্রম অনেকাংশে অচল হয়ে যায়। পরে ইসরায়েলের একটি শ্রম আদালত শ্রমিকদের কাজে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন।

ধর্মঘট নিয়ে ইসরায়েলি রাজনীতিবিদদের মধ্যে বিভক্ত দেখা গেছে। ধর্মঘট বন্ধ করতে দেশটির চরম ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে একটি জরুরি আবেদন জমা দেন।

স্মোট্রিচ গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিরোধী। তিনি হিস্ট্রাড্রটের ধর্মঘটে যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদের বেতন না দেওয়ারও নির্দেশনা দেন।

স্মোট্রিচের ভাষ্য, হিস্ট্রাড্রটের প্রধান আরনন বার-ডেভিড ইসরায়েলের অর্থনীতিকে দুর্বল করার মাধ্যমে মূলত হামাসের পক্ষই বেছে নিয়েছেন।

ইসরায়েলের বিরোধী দলের নেতা ইয়ার লাপিদ সরকারকে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ধর্মঘটেও সমর্থন দেন।

ইয়ার লাপিদের অভিযোগ, নেতানিয়াহু সরকার ইসরায়েলকে একটি গভীর নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

নেতানিয়াহু সরকারের চরম বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের মধ্যেও জনগণ অবিশ্বাস্য ধৈর্য দেখিয়ে চলছে বলে মনে করেন ইয়ার লাপিদ।

গাজায় মানবিক সংকট দিন দিন আরও তীব্র হচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছিল। কিন্তু এই আলোচনায় কোনো অগ্রগতি নেই।

ইসরায়েলের ভেতর ও বাইরে থেকে এখন বলা হচ্ছে, নেতানিয়াহুর কারণেই চুক্তি হচ্ছে না। চুক্তির ক্ষেত্রে তিনি অপ্রাসঙ্গিক ও উদ্ভট সব দাবি যুক্ত করছেন। এই দাবিগুলো তাঁর রাজনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

হামাসের রাজনৈতিক শাখার জ্যেষ্ঠ নেতা খলিল আল-হাইয়া গতকাল সোমবার আল জাজিরাকে বলেন, নেতানিয়াহু জিম্মিদের বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে থাকা কয়েকজন বয়স্ক ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দিতেও রাজি হচ্ছেন না।

হামাসের দিক থেকে তোলা এই অভিযোগটি এখন পর্যন্ত স্বীকার বা অস্বীকার করেনি ইসরায়েলের নেতানিয়াহু সরকার।

No comments

Powered by Blogger.