যুদ্ধবিরতির দাবিতে ফুঁসছে ইসরাইল

গাজায় যুদ্ধবিরতির চুক্তি স্বাক্ষরের দাবিতে ক্ষোভে ফুঁসছে ইসরাইলের জনতা। দেশটির প্রধান শ্রম ইউনিয়ন সোমবার এ দাবিতে বৃহৎ ধর্মঘট আহ্বান করে। এতে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো ইসরাইল। হাজার হাজার মানুষ একই দাবিতে রাজপথে নেমে আসেন। গাজায় ৬ জিম্মির লাশ উদ্ধারের পর এই বিক্ষোভ নতুন মাত্রা পেয়েছে। বিক্ষুব্ধ জনতার সঙ্গে রোববার রাতে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের ধস্তাধস্তি হয়েছে। গাজায় যুদ্ধ শুরু হয় প্রায় ১১ মাস আগে। তারপর সরকারবিরোধী যেসব প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম বৃহৎ আন্দোলন এটা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। ফিলিস্তিনের যোদ্ধাগোষ্ঠী হামাসের কাছে যেসব জিম্মি এখনো আছেন তাদেরকে উদ্ধারের জন্য একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছার জন্য ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানান তারা। পশ্চিম জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর অফিস। এর বাইরে এবং তেল আবিবে অসংখ্য ইসরাইলি জমায়েত হয়ে সব সড়ক বন্ধ করে দেয়। এ জন্য গঠন করা হয়েছে ‘হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম’।

গাজায় জিম্মিদের পরিবারের প্রতিনিধিরা এই ফোরাম থেকে বিবৃতিতে বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধ এবং জীবিত জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে চুক্তি করতে নেতানিয়াহু ব্যর্থ হয়েছেন। এ জন্য সর্বশেষ ৬ জিম্মিকে হত্যা করা হয়েছে। এসব জিম্মিকে গত প্রায় ১১ মাস জীবিত রেখেছিল হামাস সদস্যরা। অবশেষে কয়েকদিন আগে তাদের সবাইকে হত্যা করেছে তারা। এ জিম্মিদের অন্যতম কারমেল গাট। তার কাজিন গিল ডিকম্যান ইসরাইলি সরকারের ওপর আরও কঠোর চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এক্সে লিখেছেন, সব জিম্মিকে ফেরত না আনা পর্যন্ত রাজপথে নেমে আসুন এবং দেশ অচল করে দিন। বাকি জিম্মিদের এখনো রক্ষা করা সম্ভব। ইসরাইলের হারেটজ পত্রিকার কলামনিস্ট গিডিওন লেভি আল জাজিরাকে বলেছেন, সরকারে থাকা তার ডানপন্থি দলগুলোর পক্ষ নিয়েছেন নেতানিয়াহু। এই দলগুলো হামাসের সঙ্গে কোনো রকম ছাড় দেয়ার বিরোধী। ফলে জিম্মিদের বিষয়ে কতো চিন্তা করে। লেভি আরও বলেন, ইসরাইলে বর্তমান জোট সরকারে সবচেয়ে বড় দল নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি। তিনি নিজে বিপুল ক্ষমতার অধিকারী। দল তাকে সমর্থন করে। ফলে সরকারের ভেতর থেকে যেসব চ্যালেঞ্জ আছে তা খুবই সীমিত। বাস্তবে, একমাত্র চ্যালেঞ্জ হতে পারে রাজপথ। তবে তাতে কী পরিণতি হবে তা বলার মতো সময় আসেনি। গত বছর ৭ই অক্টোবরের পরে প্রথমবারের মতো ইসরাইলের সবচেয়ে বড় ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন ‘হিস্তাদ্রুট’ যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য আহ্বান করে সাধারণ ধর্মঘট। ইউনিয়ন বলেছে, সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে ইসরাইলের প্রধান বিমান পরিবহনের প্রাণকেন্দ্র বেন গুরিয়ন এয়ারপোর্ট বন্ধ থাকবে। ব্যাংকিং, স্বাস্থ্যসেবা খাত সহ ইসরাইলের প্রধান প্রধান অর্থনৈতিক খাতকে বন্ধ করে দেয়ার উদ্যোগ হিসেবে এ কর্মসূচি নিয়েছে তারা। হিস্তাদ্রুটের প্রধান কর্মকর্তা আরনন বার-ডেভিড বলেন, একটি চুক্তিপত্র না পেয়ে আমরা পাচ্ছি শুধু মৃতদেহের ব্যাগ। ইসরাইলের উচ্চ প্রযুক্তি খাতের প্রধান ম্যানুফ্যাকচারার এবং উদ্যোক্তারা তাকে সমর্থন করেছেন বলে তার দাবি। ৬ জন জিম্মির সর্বশেষ মৃত্যুতে ইসরাইলে জনগণের মধ্যে ভয়াবহ ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তাই ইসরাইলের অর্থনীতিতে আঘাত করার জন্য সবচেয়ে শক্তিধর কণ্ঠস্বর এক হয়েছে। সোমবার ইসরাইলের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র তেল আবিবও শাটডাউন ঘোষণা করা হয়। এই ধর্মঘটকে সমর্থন দিয়েছে ম্যানুফ্যাকচারারস এসোসিয়েশন অব ইসরাইল। জিম্মিদের জীবিত ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে নৈতিক দায়িত্ব পালনে সরকার ব্যর্থ বলে তারা অভিযোগ করছে। এই এসোসিয়েশনের প্রধান রন তোমার বলেন, জিম্মিদের ফেরত আনা ছাড়া আমরা যুদ্ধ বন্ধ করতে সক্ষম হবো না। আমরা আমাদেরকে সমাজে পুনর্বাসন করতে সক্ষম হবো না। এমনকি ইসরাইলের অর্থনীতিকে পুনর্বাসন করতে সক্ষম হবো না। ধর্মঘটে সমর্থন দেয়ার কথা জানিয়েছেন ইসরাইলের বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইয়াইর লাপিদ।

তবে দেশ জুড়ে এই ধর্মঘটকে বন্ধ করতে আদালতের কাছে আর্জেন্ট আবেদন জমা দিতে অ্যাটর্নি জেনারেল গালি বাহারাভ-মিয়ারাকে অনুরোধ করেছেন অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ। চিঠিতে তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার সঙ্গে রাজনীতিকরা সিদ্ধান্ত নেন। সে বিষয়ে অন্যায়ভাবে যেহেতু প্রভাব খাটানো হচ্ছে তাই এই ধর্মঘটের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। তিনি আরও বলেন, ব্যাপক আকারে ধর্মঘটে বহির্গামী ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার ফলে দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। তিনি আরও বলেছেন, হামাস এবং ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে অনেক মাস ধরে আলোচনা চলছে। কিন্তু চুক্তিতে না পৌঁছার জন্য নেতানিয়াহুকে দায়ী করেছেন অনেকে। ওদিকে যুদ্ধ শুরুর পর কমপক্ষে ৪০,৭৩৮ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল। পক্ষান্তরে তাদের পক্ষে নিহত হয়েছে ১১৩৯ জন। হামাস জিম্মি করে প্রায় আড়াইশ’ মানুষকে।

No comments

Powered by Blogger.