চীনকে টক্কর দিতে আফ্রিকায় সেনা ঘাঁটি গাড়ছে ভারত

বিদেশের মাটিতে প্রথম সামরিক ঘাঁটি বানাতে যাচ্ছে ভারত। দেশের বাইরে সামরিক উপস্থিতি বাড়াতে এবার আফ্রিকায় সেনা ঘাঁটি গড়ে তুলছে দেশটি। হর্ন অব আফ্রিকা থেকে প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার দক্ষিণে দ্বীপরাষ্ট্র সেশেলসের সঙ্গে এ বিষয়ে একটি চুক্তি করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সামরিক শক্তিতে চীনকে টক্কর দিতে এমন সেনাঘাঁটি বানানোর পরিকল্পনা নিয়েছে ভারত। আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, আফ্রিকায় ভারতের এ সামরিক ঘাঁটি চীনের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দেবে। চুক্তিটি স্বাক্ষরের আগে অ্যাসাম্পশন আইল্যান্ডে ভারতীয় সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের প্রস্তাব অনুমোদন দেয় সেশেলসের মন্ত্রিসভা। এরপরই আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর করে উভয় দেশ। ২৭ জানুয়ারি সেশেলসের রাজধানী ভিক্টোরিয়ায় চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ভারতের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর। এখন সেশেলসের পার্লামেন্টে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে চুক্তিটি। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেশেলসের জন্য শুধু নয়, এই চুক্তি ভারতের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত মহাসাগরে সামরিক উপস্থিতি দ্রুত বাড়াচ্ছে চীন। ভারতকে ঘিরে বিভিন্ন দেশে বন্দর এবং পরিকাঠামো গড়ে তুলেছে তারা। ভারতও কয়েকটি পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের বাইরে তথা ভারত মহাসাগরের বিভিন্ন অংশে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে ভারত। কিন্তু কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হর্ন অব আফ্রিকায় চীন সামরিক ঘাঁটি তৈরি করে ফেলেছে গত বছরেই। এ খবর ভারতের জন্য খুব স্বস্তিদায়ক ছিল না।
ভারত মহাসাগরের পশ্চিমাংশে বড়সড় সামরিক পরিকাঠামো গড়ে তোলা দিল্লির জন্য খুব জরুরি হয়ে পড়েছিল। অবশেষে এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে চুক্তি স্বাক্ষরিত হল। আফ্রিকায় গড়ে ওঠা চীনা ঘাঁটি জিবুতি থেকে ২ হাজার ৪৫৩ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। অ্যাসাম্পশন আইল্যান্ডে পুরোদস্তুর সামরিক পরিকাঠামো গড়ে তোলার ছাড়পত্র পেল ভারত। এ চুক্তি চীনের রক্তচাপ বাড়াবে বলে মনে করছেন যুদ্ধ বিশেষজ্ঞরা। ভারত মহাসাগরে সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর লক্ষ্যে পূর্বে ও পশ্চিমে অনেক দেশের সঙ্গেই যোগাযোগ বাড়াচ্ছে ভারত। ভারত মহাসাগরের পূর্বাংশে ভিয়েতনাম, ব্রুনেই ও ফিলিপাইনে ভারতীয় নৌসেনার নিয়মিত উপস্থিতি রয়েছে। ভারত মহাসাগরের পশ্চিমাংশেও একইভাবে সামরিক উপস্থিতি সুনিশ্চিত করতে সেশেলস ও মরিশাসের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চালাচ্ছে নয়াদিল্লি। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সেশেলস সফরের সময়েই দেশটির সঙ্গে চুক্তি করে ভারত। কিন্তু সেশেলসের পার্লামেন্টে চুক্তি রূপায়ণের প্রস্তাবটি আটকে যায়। তখন থেকে ঝুলেই ছিল চুক্তি। যে প্রেসিডেন্টের আমলে চুক্তি হয়েছিল, সেই জেমস মিশেল ২০১৬ সালে পদত্যাগ করেন এবং নতুন প্রেসিডেন্ট হন ড্যানি ফরে। ২০১৭ সালে ড্যানি ফরে জানিয়ে দেন, ভারতের পক্ষে ওই চুক্তির আইনি বৈধতা থাকলেও সেশেলসে নেই। চুক্তিটি নিয়ে যে নতুন করে ভাবতে হবে বলে ইঙ্গিত দেন ফরে। এরপর ফের সক্রিয় হয় ভারত। জয়শঙ্কর গত অক্টোবরে দেশটিতে যান। শুধু প্রেসিডেন্টের সঙ্গে নয়, বিরোধী দলের সঙ্গেও তিনি বৈঠকে বসেন। দু’পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে চুক্তিতে বেশ কিছু সংশোধনী আনা হয়। ড্যানি ফরে এবং বিরোধী দলীয় নেতা বেভেল রামকলাবন, দু’জনেই চুক্তির শর্তাবলিকে সবুজ সংকেত দেন।

No comments

Powered by Blogger.