সুখ শান্তি গণতন্ত্র মিয়ানমার থেকে উঠে গেছে

সেনাশাসনাধীন মিয়ানমার থেকে সুখ-শান্তি-নিরাপত্তা একেবারেই উঠে গেছে। ২০১৭ সাল ছিল দেশটির গণতন্ত্র ও শান্তিবিরোধী বহু নারকীয় ঘটনার সাক্ষী। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে খ্যাতনামা আইনজীবী ও সংবিধান সংস্কারের পক্ষে বলিষ্ঠ কণ্ঠ ইউ কো নির হত্যাকাণ্ড। গত বছরের এই সময় গুপ্তহত্যার শিকার হন তিনি।
তার এ গুপ্তহত্যার ঘটনা দেশটিতে বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রহীনতার অন্যতম প্রধান উদাহরণ। এ হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সেনাশাসিত মিয়ানমারে গণতন্ত্র ও শান্তির পথের অগ্রযাত্রা থমকে গেছে। ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলসের আইন অনুষদের সিনিয়র প্রভাষক ও অস্ট্রেলিয়ার লোবি ইন্সটিটিউটের গবেষক মেলিসা ক্রোচ দি ইন্টারপ্রেটারে লেখা বিশেষ এক নিবন্ধে এমনটাই মন্তব্য করেছেন। গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতার পক্ষে কথা বলায় ঠাণ্ডা মাথায় কো নিকে হত্যা করা হয়েছে। তাই গণতন্ত্রের জন্য এটা একটা বড় ধরনের আঘাত। তাকে হত্যা করার কারণ, তিনি মিয়ানমারের নেত্রী ও বর্তমান সরকারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির রাজনৈতিক দল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) প্রধান আইনি পরামর্শক হিসেবে বেশ খ্যাত ছিলেন। গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সেনা প্রণিত সংবিধান সংস্কারের মাধ্যমে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার জন্য কাজ করছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম মিয়ানমার সরকারের ব্যাপক নিন্দা জানায়। সংবিধান সংস্কারের জন্য ইউ কো নির আন্দোলনের ডাক মিয়ানমারে একটা বিপ্লবী আবেগ তৈরি করে। পুরনো সংবিধান সংশোধন ও নতুন করে সংবিধান প্রণয়নের জন্য প্রকাশ্যে অব্যাহতভাবে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন তিনি। এনএলডির সংবিধান পরিবর্তনের প্রচেষ্টা দেশটির সেনাবাহিনী ও সরকারের ভূমিকার প্রতি এক হুমকি তৈরি করে। কারণেই পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়। সু চির জন্য যে বিশেষ একটি পদ (স্টেট কাউন্সেলর) সৃষ্টি করা হয়, তার পেছনেও কো নির অবদান রয়েছে। এই পদ সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে সু চিকে বৈধতা দেয়। তা সত্ত্বেও কো নির হত্যার ব্যাপারে কোনো কথা বলেন নি সু চি। যেমনিভাবে তিনি নীরব ছিলেন রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতার ব্যাপারে।

No comments

Powered by Blogger.