বাবুবাজারে চালকল মালিক খুন ॥ টাকার ব্যাগ ছিনতাই- খিলগাঁওয়ে পঙ্গু গৃহকত্রর্ীকে হত্যা ॥ মালামাল লুট

রাজধানীর বৃহৎ চালের পাইকারি বাজার বাবুবাজারে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে উত্তরবঙ্গের চালের এক কল মালিককে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে। এ সময় সন্ত্রাসীরা তার টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে সড়ক অবরোধ ও বিৰোভ মিছিল করেছে। আজ বুধবার ব্যবসায়ী হত্যাকা-ের প্রতিবাদে বাবুবাজারে সমসত্ম চালের দোকান বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা ধর্মঘট ডেকেছে। এদিকে খিলগাঁওয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়েছে। এ সময় ডাকাতরা বাড়ির পঙ্গু গৃহকর্ত্রীকে হত্যা করে প্রায় ১১ লাখ টাকার মালামাল লুট করেছে। পুলিশ ঘটনার পর এক ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে। মঙ্গলবার পুলিশ ও মেডিক্যাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেল সোয়া ৩টায় কুষ্টিয়া জেলার সদর থানার বিআইপি চালকলের মালিক আফিল উদ্দিন মিয়া (৩৫) রিক্সাযোগে পুরনো ঢাকার বাবুবাজার ৭নং 'টিপু সুলতান পয়েন্ট' ভবনের সামনে থামেন। এ সময় দু'দিক থেকে ৪টি হোন্ডাযোগে ৮ যুবক তার রিক্সার গতিরোধ করে। একপর্যায়ে অস্ত্রধারী যুবকরা ব্যবসায়ী আফিল উদ্দিন মিয়ার কাছ থেকে ১৫/২০ লাখ টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়। ধসত্মাধসত্মির একপর্যায়ে যুবকরা তার বাম পাঁজরে বুকে গুলি চালিয়ে টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। পরে বাবুবাজার ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা ৪/৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করতে করতে পালিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত অবস্থায় ব্যবসায়ী আফিল উদ্দিন রিক্সা থেকে নিচে পড়ে ঘটনাস্থলে মারা যায়। ঘটনাটি মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়লে বাবুবাজার শত শত চাল ব্যবসায়ী দোকানপাট বন্ধ করে বিৰোভে ফেটে পড়ে। এ সময় ব্যবসায়ীরা বাবুবাজার, নয়াবাজার, ইংলিশ রোডের মুখে মিটফোর্ড আরমানিটোলা রাসত্মাঘাট বন্ধ করে বিৰোভ মিছিল করে। বিৰুব্ধ ব্যবসায়ীরা ব্যবসায়ী আফিল উদ্দিনের লাশ নিয়ে বিৰোভ মিছিল করে রাসত্মা প্রদৰিণ করে। খবর পেয়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র্যাব ঘটনাস্থলে এসে টানা ২ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সন্ধ্যার পর পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক কর্ তে;াদের আশ্বাসের প্রেৰিতে পরে ব্যবসায়ীরা সড়ক অবরোধ তুলে নেয়। এ সময় গুলিসত্মান থেকে ইংলিশ রোড, ধোলাইখাল, বংশাল, নয়াবাজার, মিটফোর্ড, বাবুবাজার, বাদামতলীসহ এর আশপাশে ভয়াবহ যানজট লেগে যায়। পরে রাতে পুলিশ ব্যবসায়ী আফিল উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করে মিটফোর্ড মেডিক্যাল হাসপাতাল কলেজ মর্গে পাঠায়।
নিহতের স্ত্রী রম্নমা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, স্বামী আফিল উদ্দিন মিয়ার কুষ্টিয়া জেলা সদরে বিআইপি রাইস মিল রয়েছে। সেখান থেকে ট্রাকে ট্রাকে চাল এনে রাজধানীর বৃহৎ চালের বাজার বাবুবাজার, বাদামতলীসহ বিভিন্ন স্থানে পাইকারিভাবে চাল সরবরাহ করত। স্বামীর মূল চালের ব্যবসা ছিল বাবুবাজারে। সে সুবাদে বাবুবাজার মূল সড়কে ৭নং 'টিপু সুরতান পয়েন্ট' ভবনের ৬ তলায় ৫ বছরের সনত্মান রায়েলাকে নিয়ে বাড়া থাকতাম। প্রতিদিনের ন্যায় স্বামী আফিল উদ্দিন মিয়া মালিবাগ এলাকার বিভিন্ন দোকান থেকে টাকা তুলে রিক্সাযোগে বাসায় ফিরছিল। বাসার গেটের সামনে রিক্সা থামিয়ে নামার মুহূর্তে সন্ত্রাসীরা স্বামী আকিল উদ্দিন মিয়াকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।
এদিকে সন্ত্রাসীদের গুলিতে ব্যবসায়ী আফিল উদ্দিন হত্যাকা-ের প্রতিবাদে বাবুবাজার-বাদামতলী ব্যবসায়ী সমিতি অফিসে এক জরম্নরী বৈঠকে বসেন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। এ ব্যাপারে বাবুবাজার-বাদামতলী ব্যবসায়ী সমিতি সাধারণ সম্পাদক মোঃ নিজামউদ্দিন জনকণ্ঠকে জানান, ব্যবসায়ী আফিল উদ্দিন হত্যাকা-ের প্রতিবাদে বুধবার সারাদিন বাবুবাজার-বাদামতলীর চাল ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করবে। এটি অনির্দিষ্টকালেরও হতে পারে বলে তিনি ইঙ্গিত দেন। সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, ব্যবসায়ী আফিল উদ্দিল হত্যাকা-ের আসামিদের অচিরেই গ্রেফতার ও দ্রম্নত বিচার চাই। এলাকায় শানত্মিশৃঙ্খলা, উন্নতি ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা চাই। তা না হলে আরও কঠোর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে।
রাত সোয়া ৭টায় কোতোয়ালি থানায় যোগাযোগ করা হলে ডিউটি অফিসার জানান, এখনও মামলা হয়নি। নিহতের পিতার নাম হাজী মোঃ মোজাম্মেল হোসেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলা সদরের হাইচর গ্রামে।

খিলগাঁওয়ে ডাকাতি ॥ গৃহকত্রর্ী খুন
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, সোমবার দিবাগত রাত ৩টায় খিলগাঁও থানাধীন পূর্ব গোড়ান এলাকার ৩২২/১ নম্বর তিনতলা ভবনের দোতলার বারান্দার গ্রিল কেটে ১০/১২ জনের ডাকাত দল ঘরে প্রবেশ করে। এ সময় ডাকাতরা বাড়ির গৃহকত্রর্ী প্যারালাইজ রোগী রিজিয়া বেগমের (৭০) হাত-পা-মুখ বেঁধে ফেলে। পরে তার সঙ্গে থাকা ঘুমনত্ম কাজের মেয়ে সাবিনাকে মারধর করে। একপর্যায়ে ডাকাতরা কাজের মেয়েকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পাশের কৰে গৃহকর্ত্রীর ছেলে কবিরকে ডাকতে বলে। কাজের মেয়ে সাবিনা দরজা নক করে বলে গৃহকত্রর্ী রিজিয়া বেগমের শরীর অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাড়াতাড়ি উঠেন। পরে ছেলে কবির দরজা খোলার মুহূর্তে ডাকাতরা তাকেও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলে। পরে কবির ও তার স্ত্রীর হাত-পা-মুখ বেঁধে ফেলে। এ সময় ডাকাতরা তাদের কাছ থেকে আলমারীর চাবি নেয়। পরে আলমারি তালা খুলে ৩৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, নগদ ১৫ হাজার টাকা ও ২/৩টি মোবাইল সেট লুট করে পালিয়ে যায়। এ সময় কাজের মেয়ে নিচতলা গেটের তালা খুলে চিৎকার দিরে স্থানীয়রা এসে তাদের উদ্ধার করে। খবর পেয়ে র্যাব ও পুলিশ ঘটনাস্থল এসে গৃহবধূ রিজিয়া বেগমের লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়। পুলিশ জানায়, কাজের মেয়ে সাবিনা নিচে এসে এক ডাকাতকে ঘোরাফেরা করতে দেখে। পরে পুলিশ ওই ডাকাতকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। সংশিস্নষ্ট সূত্রগুলো জানায়, নিহত বিধবা মহিলা রিজিয়া বেগম দীর্ঘদিন প্যারালাইজ শয্যাশায়ী ছিলেন। ১ বছর আগে তাঁর দুই ছেলে কবির ও কাইয়ুম ১৮ বছর সৌদি আরব থেকে চাকরি শেষে দেশে আসেন। তাঁরই পৈত্রিক তিনতলা ভবনের নাম রাখে 'জননী ভিলা।' এলাকার বখাটে যুবকরা এই ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে বলে সংশিস্নষ্ট সূত্রগুলো জানায়। এ ঘটনায় খিলগাঁও থানায় হত্যা ও ডাকাতি মামলা হয়েছে। নিহতের স্বামীর নাম মৃত আব্দুস সাত্তার।

No comments

Powered by Blogger.