প্রাণের ঢল, নিরাপত্তার অভাব- ১০ স্টলে চুরি, প্রতিবাদ

মাঘ মাস বহাল থাকলেও শীতের প্রভাব সে অর্থে নেই। বেলা ডুবলেও গরম কাপড় গায়ে চড়ানোর প্রয়োজনীয়তা বোধ হয় না, আবার গুমটভাবও নেই। তবে মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে আকাশ ছিল মেঘলা, রোদ মাঝে-মধ্যেই হারিয়ে যাচ্ছিল মেঘের আড়ালে।
এমনই কোমল প্রীতিকর আবহাওয়া বেড়ানোর জন্য খুবই দারুণ। আর এ সুযোগটি হাতছাড়া করেনি অনেক নগরবাসীই। বিকালে চলে আসেন বইমেলায়। মেলার গেট খোলার পরই বাড়তে থাকে পাঠক-দর্শনার্থীর ভিড়। সন্ধ্যার পর নামে প্রাণের ঢল। ভিড় যাই হোক মেলায় বই-পুসত্মকের সংসর্্পশে এলে পাঠ্যাভ্যাস যে তৈরি হয়, এই ভেবেও অনেকে মেলায় এসেছেন। মেলায় শৃঙ্খলা আছে, কিন্তু নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সোমবার রাতেও ১০টি স্টলে চুরি হয়েছে। মেলার প্রথম দশ দিনে এই দ্বিতীয়বারের মতো চুরি হলো। আর এই চুরিটি হয় রাসত্মার স্টলগুলোতে। এ জন্য রাসত্মার স্টলগুলোর প্রকাশকরা মঙ্গলবার তাদের স্টল আধা ঘণ্টা বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানায়। এ সময় তাঁরা একাডেমীর মূল গেটও খুলতে দেননি। ফলে এদিন মেলা তিনটার পরির্বেত সাড়ে তিনটায় শুরম্ন হয়। এ দিন মেলায় এসেছিলেন কথা সাহিত্যিক আবুল হাসনাত আব্দুল হাই, ইমদাদুল হক মিলন, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার প্রমুখ। আর নতুন বই এসেছে ১০৮টি। নজরম্নল মঞ্চে এদিনও এক ডজনের বেশি বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়।

মেলায় আবার চুরি
মেলায় আবার চুরি হয়েছে। এবার ১০টি স্টলে। স্টলগুলো হলো_মেলা, মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম, স্পন্দন, শামীম পাবলিশার্স, সালমা বুক ডিপো, পদাতিক নাট্য সংসদ, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, বিশ্ব বাংলা কবিতা উৎসব, কাব্য মঞ্চ ও ইসকন। এই সব স্টলই একাডেমীর সড়ক দ্বীপে অবস্থিত। এর আগে গত ৫ ফেব্রম্নয়ারি শুক্রবার রাতে ৪টি স্টলে চুরি হয়। সে স্টলগুলো হলো_ ইমন, আমীর শিলা ও খোসরোজ প্রকাশনা। প্রথমবার চুরির পর মেলা কমিটির সদস্য সচিব সাহিদা বেগম বলেছিলেন, বাইরে (রাসত্মার স্টলগুলোতে) নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করবেন। এবারও তিনি সাংবাদিকদের একই কথা বললেন এবং জানালেন, চুরির বিষয়টি রমনা থানাকে অবহিত করেছেন। চুরি যাওয়া স্টলগুলোর পৰে মেলা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী দোহা সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর নিজের স্টল থেকে ৫ হাজার টাকার বই চুরি হয়েছে। কোন কোন স্টলে আরও বেশি ২৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার বইও চুরি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলা একাডেমীর চার দেয়ালে ভেতরে আর বাইরে স্টল বরাদ্দ পাওয়ার জন্য একই পরিমাণ টাকা দিতে হয়েছে, কিন্তু আমাদের নিরাপত্তার দিকে সেভাবে নজর দিচ্ছে না একাডেমী। আমরা ছোট প্রকাশক, মেলা থেকে আমাদের কত টাকাই বা লাভ হবে? এভাবে যদি চুরি হতে থাকে, তাহলে তো কিছুই থাকবে না।

আজ নজরম্নল মঞ্চে
আজ নজরম্নল মঞ্চে মোড়ক উন্মোচন হবে কবিতার বই 'শূন্যতা'র। বিকাল সাড়ে তিনটায় কবি জাহিদা উর্মির এই বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করবেন কবি বেলাল চৌধুরী। এ সময় আরও উপস্থিত থাকবেন জনকণ্ঠের সম্পাদক আতিকুলস্নাহ খান মাসুদ, উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খান, নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায় ও কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন।

লেখকদের কথা
এদিন মেলায় প্রথম এসেছেন লেখক আবুল হাসনাত আব্দুল হাই। বসেছিলেন আগামীর স্টলে। সেখানে বসেই তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার মতে এখনও মেলা পুরোপুরি জমে উঠেনি। অনেক বই এখনও আসা বাকি। আরও ৩/৪ দিন পর থেকে মেলা জমবে। তবে এখন যাঁরা আসছে, তাঁদের মধ্যে পাঠকের চেয়ে দর্শনার্থীর সংখ্যাই বেশি। এটাও একটা ভাল লৰণ। কারণ বইয়ের সংস্পর্শে আসতে আসতেই গড়ে উঠবে পাঠ্যাভ্যাস। তরম্নণ লেখক প্রসঙ্গে বলেন, অনেক তরম্নণই এখন ভাল লিখছেন, এটা আশার কথা এবং আমাদের সাহিত্যের জন্য ভাল লৰণ। তবে সবাই ভাল লিখছেন এটাও বলা যাবে না। কিন্তু আমাদের পাঠকদের রম্নচি দিন দিন উন্নত হচ্ছে। নিম্নমানের বই নিয়ে এখন কেউ আর সাহিত্যাঙ্গনে টিকে থাকতে পারবে না। এটা বাজারে একটা গুণ, কোন বই থাকবে আর কোনটা থাকরে না তা বাজারই নির্ধারণ করে দেয়। তিনি আরও বলেন, আমাদের এখানে সৃজনশীল বইয়ের পাঠক এখনও খুব একটা গড়ে উঠেনি, তবে পাঠকদের চিনত্মা চেতনায় বেশ পরিবর্তন লৰ্য করা যাচ্ছে। যা আশার কথা।

নতুন বই
এদিন নতুন বই এসেছে ১০৮টি। তার মধ্যে কবিতার বই সবচেয়ে বেশি, ৩৩টি। উপন্যাস ১৮টি, গল্প ১৫টি, প্রবন্ধ ১২টি উলেস্নখযোগ্য। এদিন মিজান ও নওরোজের সবচেয়ে বেশি ৫টি করে বই এসেছে। এদিনকার উলেস্নখযোগ্য নতুন বই- আব্দুস শাকুরের নির্বাচিত কড়চা ও প্রশানত্ম মৃধা সম্পাদিত অগ্রন্থিত কায়েস আহমেদ, এনেছে ঐতিহ্য। সাংবাদিক জিয়াউদ্দিন খোকার গল্পের বই হিজল বনে শিকারি শহর ও সমীর আহমেদের এই বিষ এই অমৃত, এনেছে মিজান পাবলিশার্স। মুক্তচিনত্মা এনেছে অধ্যাপক দুলাল সরকারের কবিতার বই আগুনের ডালপালা। রামশংকর দেবনাথ সম্পাদিত হেলাল হাফিজ : কষ্টের ফেরিওয়ালা ও বিপাশা ম-লের ১০০ প্রেমের কবিতা এনেছে বিভাস। জর্জ হায়দার অনূদিত ড. আব্দুল মুকিত চৌধুরীর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, দাউদ হায়দারের জন্মেই আমার আজন্ম পাপ, এনেছে নওরোজ। অবসর এনেছে সিতারা ফেরদৌসের ঢাকাই রান্না। প্রতিভা এনেছে সরকার মীনার নারী বিষয়ক প্রবন্ধ-নিবন্ধ। আবু বকর সিদ্দিক মিলনের একুশের কান্না, এনেছে মুক্তদেশ। মাওলা এনেছে সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিনের রচনা সমগ্র-১ ও মুনতাসীর মামুনের দুঃসময়ের দিনগুলি এবং আবীর আহাদের বঙ্গবন্ধু : কারাজীবন সংগ্রাম স্বাধীনতা, এনেছে বাতিঘর।

No comments

Powered by Blogger.