প্রাণের স্পন্দন, তবে এখনও পাইরেটের বই বিক্রি- বইমেলা প্রতিদিন

অন্য সকল মাসের চেয়ে ফেব্রুয়ারির রং বাঙালীর কাছে আলাদা। বসন্তের আগমনে গাছে গাছে নানা রঙের ফুলের বন্যা বয়ে যায় বলে নয়। ভাষা আন্দোলনের প্রাণ আমাদের ভেতর এ সময়ে নতুন সঞ্জীবনী শক্তি নিয়ে জেগে ওঠে, তাই।
আর এ শক্তির প্রকাশ দেখি অমর একুশের বইমেলায়। ধুলোমুক্ত সোমবারের বইমেলায়ও ছিল প্রাণের স্পন্দন। তরম্নণ-তরম্নণীদের ছিল সরব উপস্থিতি। শুধু মেলা প্রাঙ্গণের বটতলা, বয়রাতলা ও লেখক কুঞ্জেই নয়, একাডেমীর সামনের সড়কদ্বীপের ডিভাইডারও ছিল তাঁদের আড্ডার স্থল। তবে খালি হাতে নয়, অনেকের হাতেই ছিল বইয়ের প্যাকেট। এদিন মেলায় এসেছিলেন দেশের প্রধান কবি সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক আব্দুলস্নাহ আবু সায়ীদ, সাংবাদিক কে. জি মুসত্মাফা, শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক কামাল লোহানী, বাংলা একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ, কবি সাইফল বারী প্রমুখ। এদিন নতুন বই এসেছে ১০১টি। রবিবার টাস্কফোর্স কতর্ৃক বন্ধকৃত ৫টি স্টল বন্ধই ছিল, কিন্তু একটি সূত্র জানিয়েছে যে, ৩০টি স্টলকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে, তাদের অনেকেই এখনও পাইরেটেড ও অনুমতিবিহীন অনুবাদ গ্রন্থ বিক্রি করছে।

মোড়ক উন্মোচন
এদিন মেলায় প্রায় দু'ডজন বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে। এর মধ্যে সৈয়দ শামসুল হক মোড়ক উন্মোচন করেন এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী ও কবি সাইফুল বারীর কবিতার বই শীতের বিবর্ণ বিকেল বইটির। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ও সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ মোড়ক উন্মোচন করেন শাহাদাত সোহাগের কানা মামার মন্টু বইটির। আবু সেলিমের পটল মামার টিউশন্বিইটির মোড় খোলেন কে.জি মুসত্মাফা।

লেখকদের কথা
এদিন মেলায় প্রথম এসেছেন সৈয়দ শামসুল হক। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আজ প্রথম এসেছি। শরীর ভাল নয়, তাই চেয়েছিলাম আরও কয়েক দিন পরে আসব। কিন্তু কবির বন্ধুর অনুরোধ ফেলতে পারলাম না। তিনি আরও বলেন, সাইফুল বারী একজন প্রকৃতই কবি, শুধু সে-ই নয়, ৪০ বছর বয়সের পর যারাই কবিতা লেখেন, তাঁদের আমার নমস্য। কারণ বুকে আগুন না থাকলে এ বয়সে কবিতা আসে না। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, শুনেছি টাস্কফোর্স অনিয়ম করার কারণে মেলার ৫টি স্টল বন্ধ করে দিয়েছে। এটা লেখক, পাঠক, প্রকাশক সবার জন্য ভাল খবর। অধ্যাপক আব্দুলস্নাহ আবু সায়ীদ বলেন, এখানে তারম্নণ্যের উদ্দীপনা, উন্মাদনা ও গতি থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। আগেও ছিল, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। সেই তারম্নণ্য, সেই স্বপ্ন, সেই একই উন্মাদনা এখন যে শক্তিতে হচ্ছে, আগামীতে হবে আরও বেশি গতিতে। এটাই তারম্নণ্যের ধর্ম। মেলায় তরম্নণদের বই বেশি আসা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, নতুনরাই তো লিখবে, তাঁদের বইতো বেশি আসবে। জীবনের ধর্ম প্রৌঢ়রা জলে যাবে, সেই মঞ্চ দখল করবে তরম্নণরা। মেলা প্রাঙ্গণ প্রসঙ্গে বলেন, বইমেলার জন্য আরও একটু বেশি জায়গা দরকার। বাংলা একাডেমীর একটা ঐতিহ্যিক গুরম্নত্ব আছে, এখানে যদি সেই বাড়তি জায়গা হয় তাহলে ভাল, না হয় অন্য কোথাও মেলা নিয়ে যাওয়া দরকার। এত মানুষ, এত প্রাণ, এত উৎসাহ এর তো জায়গা দেয়া দরকার। কামাল লোহানী বলেন, সময়ের পরিবর্তন হয়েছে, তাই মুক্তিযুদ্ধের বই বেশি প্রকাশ পাচ্ছে। আগে প্রকাশকরা মুক্তিযুদ্ধের বই প্রকাশে সাহস পেত না, এখন সেগুলো প্রকাশ করছে।

প্রকাশকের কথা
পাইরেসি বই প্রসঙ্গে শোভা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান বলেন, বাংলা একাডেমীর নীতিমালা মেনেইতো সবাই স্টল নেয়, তারপরও কিভাবে পাইরেটেড বই ঢোকে? এবার টাস্কফোর্স থাকায় তা ধরা পড়ছে, কিন্তু অন্যান্য বছরতো বাংলা একাডেমী তা জেনেও ধরেনি। পাইরেটেড বইয়ের কারণে শুধু যে প্রকাশক ঠকছে তা হয়, পাঠক ও লেখকও ঠকছে। অনেক প্রকাশকের চরিত্রই রাজনীতিবিদদের মতোই। স্টল বরাদ্দ নেয়ার সময় বলে এক কথা, কিন্তু কাজের বেলায় করে অন্য কিছু।

নতুন বই
এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ১০১টি। এর মধ্যে কবিতার বই সবচেয়ে বেশি, ২৪টি, উপন্যাস ২১টি, গল্প ১২টি, ছড়া ৮টি উলেস্নখযোগ্য। এদিন সবচেয়ে বেশি ৫টি করে বই প্রকাশ করেছে ইত্যাদি, মিজান ও কল্পনা প্রকাশনী। এদিনের উলেস্নখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে সাংবাদিক দিলীপ দেবনাথের শব্দ চিনত্মা চমৎকারা, এনেছে দিব্য প্রকাশ। ড. জাহাঙ্গীর আলমের কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়নমূলক বই কৃষি ও কৃষক এনেছে, শামসুজ্জামান খান সম্পাদিত বাংলা সন ও পঞ্জিকা: ইতিহাস ও ঐতিহ্য সূচীপত্র, মুক্তিযুদ্ধ : উপেৰিত গেরিলা অধ্যাপক আবু সায়ীদের এই বইটি এনেছে চারম্নলিপি, সেলিনা হোসেনের মুক্তিযুদ্ধের গল্প এনেছে ইত্যাদি, মোহাম্মদ আমীনের বঙ্গবন্ধু চিরনত্মন মহামানব এনেছে আগামী, পলল এনেছে নিতাই সেনের ওমর খৈয়াম, ড. তাজউদ্দিনের আইনেস্টাইনের বিশ্ব এনেছে উৎস, আব্বাসউদ্দীনের দিনলিপি ও আমার শিল্পী জীবনের কথা এবং মোজাফ্ফর আহমেদের জাতীয়তাবাদের অর্থনীতি ও অন্যান্য এনেছে প্রথমা।

No comments

Powered by Blogger.