কুমিল্লায় এক দাপুটে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে খুনের মামলা- ৭ বছর ধরে বিচারের আশায় ঘুরছে নিহত বিল্লালের অসহায় পরিবার by শাকিল মোলস্না

ঘটনা ২০০৩ সালের। ঘটনাস্থল কুমিল্লার চান্দিনা। তখন মতায় বিএনপি। অভিযোগ ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী বিলস্নাল হোসেনকে নির্যাতনে খুন করে লাশ গুম। ঘটনার মূল নায়ক ছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও তৎকালীন চান্দিনা পৌর চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম,
যিনি বর্তমানে কুমিল্লা (উঃ) জেলা বিএনপির সভাপতি। চান্দিনা থানার অদূরে খোরশেদ আলমের বাড়িতেই ঘটনা তবুও মতার দাপটের কারণে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার ব্যাপারে পুলিশের তদনত্ম বেশি দূর এগোতে পারেনি। আদালতে মামলা হলেও মতার দাপটে তা খারিজ করে দেয়া হয়। সর্বশেষ গত ৩০ জানুয়ারি চান্দিনা থানায় মামলা করেন নিহতের বোন সেলিনা বেগম। গ্রেফতার হন খোরশেদ আলম ও তাঁর কর্মচারী। বর্তমানে ওই বিএনপি নেতা কুমিলস্না কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক থাকলেও তাঁর সহযোগীরা ওই চাঞ্চল্যকর মামলাকে ভিন্ন দিকে ধাবিত করতে অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিল্লালের অসহায় পরিবার।
মামলার অভিযোগ ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, জেলার মুরাদনগর উপজেলার বড় আলীর চর গ্রামের মৃত আঃ জলিলের পুত্র বিলস্নাল হোসেন ভাঙ্গারী ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করত। প্রায়ই সে চান্দিনায় গিয়ে বিএনপি নেতা খোরশেদ আলমের কাছ থেকে পুরনো লোহা লক্কড় ক্রয় করত। ২০০৩ সালের ১৫ জুন খোরশেদ আলমের বাড়িতে গিয়ে লোহা মাপজোকের সময় কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ওই বিএনপি নেতা এবং তাঁর সহযোগীরা নির্মমভাবে পিটিয়ে বিলস্নালকে মেরে ফেলে। বিলস্নালের মৃতু্যর পর প্রভাবশালী ওই বিএনপি নেতা ওই খুনের ঘটনাকে ধাপাচাপা দিতে তৎপর হয়ে ওঠেন। তখন বিষয়টি নিয়ে এলাকায় জানাজানি হলেও কেউ ওই বিএনপি নেতার বিরম্নদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। এমনকি থানা পুলিশও ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে অনুসন্ধানে যায়নি। থানায় নূ্যনতম একটি জিডিও রেকর্ড করা হয়নি। বিলস্নালের মৃতু্য নিশ্চিত হবার পর বিএনপি নেতা খোরশেদ আলম তাঁর সহযোগীদের নিয়ে বাড়ির পাশের একটি ঝোপে নিয়ে লাশ মাটিতে পুঁতে রাখেন। এ ঘটনার খবর পেয়ে ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রী কালী বেগম চান্দিনায় খোরশেদ আলমের বাড়িতে গিয়ে তার স্বামীর কথা জিজ্ঞেস করলে তাকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। পরে সে বিগত ২০০৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুমিলস্না পুলিশ সুপার বরাবরে একটি আবেদন করলে পুলিশ বিষয়টি সুরাহা করতে খোরশেদ আলমকে চাপ দিলে ১ লাখ টাকা দিয়ে কালী বেগমকে বিদায় করে। পরে কালী বেগম স্বামীর হত্যা নিয়ে আর বেশি দূর এগোতে পারেনি। পরবতর্ীতে বিগত ২০০৭ সালের ১৯ ফেব্রম্নয়ারি কুমিলস্না শহরের গর্জনখোলা এলাকার অপর এক ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী সহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে খোরশেদ আলম ও তার অপর এক ভাইয়ের বিরম্নদ্ধে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে ঘটনার নামমাত্র তদনত্ম করলেও আসামি ও সাীদের জিজ্ঞাসাবাদ না করেই ১৩ মার্চ মামলার চূড়ানত্ম প্রতিদেন দাখিল করলে আদালত ৪ এপ্রিল মামলাটি খারিজ করে দেয়। আদালত ও পুলিশের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বিলস্নালের স্বজনরা ওই হত্যার বিচার পাবার আশা অনেকটা ছেড়েই দিয়েছিল। অবশেষে গত ৩০ জানুয়ারি কুমিলস্না শহরের কাটাবিল এলাকার সকুন মিয়ার স্ত্রী সেলিনা বেগম বাদী হয়ে তার ভাই বিলস্নাল হোসেনকে হত্যার অভিযোগে খোরশেদ আলমসহ ৫ জনের বিরম্নদ্ধে চান্দিনা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় অপর অভিযুক্তরা হচ্ছেন খোরশেদ আলমের ভাই মোসলেহ উদ্দিন, আবুল কালাম আজাদ (মনু), কর্মচারী আবুল কাসেম, দুলাল চন্দ্র দাস। এ মামলায় ৩০ জানুয়ারি খোরশেদ আলম ও তার কর্মচারী দুলালকে পুলিশ গ্রেফতার করে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদনসহ পর দিন কুমিলস্নার আদালতে প্রেরণ করে।
গত ৪ ফেব্রম্নয়ারি বৃহস্পতিবার মামলার শুনানি শেষে কুমিলস্নার ৫নং সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক গাজী ছাইদুর রহমান জামিন ও রিমান্ড শুনানি নামঞ্জুর করে খোরশেদ আলমকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন। এদিকে বিলস্নালের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন বর্তমানে আওয়ামী লীগ ৰমতায় থাকলেও ওই বিএনপি নেতা ও তার সহযোগীরা চাঞ্চল্যকর ওই মামলাকে ভিন্ন দিকে ধাবিত করতে নানা অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এ ব্যাপারে বিলস্নালের অসহায় পরিবার প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হসত্মপে কামনা করেছেন। এদিকে সোমবার সরেজমিন চান্দিনায় গিয়ে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজনের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায় ভয়ে তারা কেউই প্রকাশ্যে ও নাম প্রকাশ করে খোরশেদ আলমের বিরাগভাজন হতে চান না। চান না বিরম্নদ্ধে কোন তথ্য দিতে । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিএনপি নেতা জানান ওই বিএনপি নেতা মতার দাপট দেখিয়ে তৃণমূলের মতামত না নিয়েই চান্দিনা উপজেলার বিএনপির সভাপতি হওয়ার পর কৌশলে জেলা বিএনপির সভাপতিও হয়েছেন। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ঘটনার পরেই যদি ঘটনার সুষ্ঠু তদনত্ম হতো তাহলে এ নিয়ে এত বিতর্ক উঠত না, সুষ্ঠু তদনত্ম করে এর রহস্য বের করা উচিত। সোমবার সন্ধ্যায় চান্দিনা থানা, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ নুরম্নল আফছার ভূইয়া জানান, 'ওই মামলার ঘটনার সময় অনেক আগের, তাই কম সময়ে এ মামলার রহস্য উদ্্ঘাটন করা সম্ভব না হলেও তদনত্মে অনেক অগ্রগতি হয়েছে, লাশ কোথায় গুম করা হয়েছিল তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।'

No comments

Powered by Blogger.