রাশিয়ার সতর্কতা-রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার হবে আসাদের 'রাজনৈতিক আত্মহত্যা'

সিরিয়ার সশস্ত্রবিরোধীদের কাবু করতে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করলে তা তার জন্য 'রাজনৈতিক আত্মহত্যার' শামিল হবে। তাই সিরিয়া সরকার এ পথে হাঁটবে না বলে বিশ্বাস করে রাশিয়া।
শেষ উপায় হিসেবে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার করতে পারে দামেস্ক_আন্তর্জাতিক মহলের এমন উদ্বেগের মধ্যে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ গতকাল সোমবার এ মন্তব্য করেন।
গত শনিবার ল্যাভরভ দাবি করেন, সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্রের মজুদ নিরাপদ জায়গাতেই আছে। সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রাসায়নিক সরঞ্জাম একটি বা দুটি জাগয়ায় জড়ো করেছে তারা।
এ অবস্থায় গতকাল সিরিয়াবিষয়ক জাতিসংঘ ও আরব লীগের বিশেষ দূত লাখদার ব্রাহিমি প্রেসিডেন্ট আসাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠক প্রসঙ্গে ব্রাহিমি সাংবাদিকদের বলেন, 'সংকট নিরসনে কী করণীয়, সে ব্যাপারে আমরা মতামত তুলে ধরেছি।' সর্বশেষ গত ১৯ অক্টোবর দামেস্ক সফর করেছিলেন ব্রাহিমি।
গত রবিবার লেবানন থেকে সিরিয়ায় যান ব্রাহিমি। সিরীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও তাঁর বৈঠকের কথা রয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, ২১ মাস ধরে চলমান সংঘাতে দেশটিতে ৪৪ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। আহতের সংখ্যা অনির্ণিত।
এদিকে গত রবিবার সরকারি বাহিনীর বিমান হামলায় সিরিয়াজুড়ে ১৮০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে বিরোধীরা। এর মধ্যে মধ্যাঞ্চলীয় হামা প্রদেশের হালফায়া শহরে বিমান হামলায় ৯০ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোও প্রায় একই সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর দাবি করেছে। কোনো পক্ষই সঠিক সংখ্যা নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ হামলার পাঁচ দিন আগেই শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এটিকে 'মুক্তাঞ্চল' ঘোষণা করে বিদ্রোহীরা। রাশিয়ার সরকারি মালিকানাধীন ইংরেজি ভাষার টেলিভিশন চ্যানেল আরটিকে দেওয়ার সাক্ষাৎকারে ল্যাভরভ জানান, রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের কোনো পরিকল্পনা নেই_প্রেসিডেন্ট আসাদ এ কথা মস্কোকে একাধিকারবার নিশ্চিত করেছেন। ল্যাভরভ বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি না, সিরিয়া রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার করবে। যদি তারা করে, তা হবে আসাদ সরকারের জন্য রাজনৈতিক আত্মহত্যা।'
ভিডিও আদান-প্রদানের ওয়েবসাইট ইউটিউবে প্রকাশিত একাধিক ভিডিওচিত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থাগুলো জানিয়েছে, হালফায়া শহরের একটি বেকারিতে বিমান হামলায় প্রায় ৯০ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন। তাদের বেশির ভাগের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বিমান হামলার সময় বেকারিটিতে প্রায় এক হাজার মানুষ ছিল। সামের আল-হামাউয়ি নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, 'কত মানুষ নিহত হয়েছে, তা বলা অসম্ভব। আমি সেখানে স্তূপাকারে পড়ে থাকা মৃতদেহ দেখেছি।' তিনি বলেন, 'তিন দিন ধরে আমরা রুটি পাচ্ছিলাম না। আজ (রবিবার) পাওয়া যাবে জেনে আমরা সবাই সেখানে ভিড় করেছিলাম।'
যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানিয়েছে, উত্তরাঞ্চলীয় আলেপ্পো শহরেও বিমান হামলা চালিয়েছে সরকারি বাহিনী। সেখানে ১৩ জন মারা গেছে। দামেস্কের উত্তরে সাকবা শহরেও বিমান হামলা হয়েছে। সব মিলিয়ে রবিবার পুরো দেশে ১৮০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। সূত্র : এএফপি, বিবিসি, টেলিগ্রাফ।

No comments

Powered by Blogger.