যত্রতত্র বালাইনাশকের দোকান, বিক্রেতারা ‘বড় ডাক্তার’

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় পথঘাট বালাইনাশকের দোকানে ছেয়ে গেছে। এসব দোকানের বিক্রেতারা কৃষকদের কাছে যাচ্ছেতাইভাবে এগুলো বিক্রি করছেন; বিশেষ করে মুদির দোকানে শিশুখাদ্যের পাশাপাশি খোলা বালাইনাশক ঝুঁকিপূর্ণভাবে বিক্রি করা হচ্ছে।
এভাবে বালাইনাশক বিক্রির কারণে একদিকে যেমন বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে, তেমনি ফসলের ক্ষতির পাশাপশি মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে।
জানা গেছে, উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নে প্রায় ৬০০ বালাইনাশকের দোকান রয়েছে। এসব দোকানের বেশির ভাগেই কোনো নীতিমালা মানা হয় না। অনেকে অন্য কোনো ব্যবসার সঙ্গে, আবার অনেকে নিজ বাড়িতে দোকান খুলে বসেছেন। বিক্রেতাদের বেশির ভাগেরই বালাইনাশক বিষয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান নেই। বালাইনাশকের প্রয়োজন হলেই এলাকার কৃষকেরা এসব দোকানির কাছে ছুটে যান, তাঁদের পরামর্শেই ওষুধ নেন। কৃষকদের কাছে এসব দোকানিই ‘বড় ডাক্তার’!
গত বুধবার উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে নাট মরিচাই আদর্শ গ্রাম এলাকায় আবদুল কাইয়ুমের দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, তাঁর মুদি দোকানে চাল, ডাল, লবণ, সাবান থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের শিশুখাদ্য বিক্রি হচ্ছে; একই সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে সার ও বালাইনাশক। এ বালাইনাশক আবার খোলা অবস্থাতেই বিক্রি হচ্ছে। মুদির দোকানে এভাবে খোলা অবস্থায় বালাইনাশক বিক্রি কেন করছেন—এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি তাঁর কাছে। আবদুল কাইয়ুম বলেন, ‘হামার কোনো লাইসেন্স নাই। কোম্পানির লোক অ্যাসা বেচপার কলো, তাই আলুগাছের জন্য কীটনাশক কয়েক দিন হলো বেচা শুরু করেচি। আর করম না।’
উপজেলার দামগাড়া গ্রামের বালাইনাশক বিক্রেতা এনামুল হাসান বলেন, ‘হামি পেরাইমারি পাস করিচি। মানষে অ্যাসা হামাক কীটনাশকের নাম কলে হামি তাকে সেটি দেই।’ ভায়েরপুকুর এলাকায় আলুখেতে কথা হয় চাষি তাজমিলুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা খেতে পোকা দেখা দিলে কীটনাশকের জন্য দোকানে গিয়ে দোকানিকে বললেই তিনি ওষুধ দেন।’ উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় নিবন্ধন রয়েছে ৪০০টি বালাইনাশকের দোকানের। এর বাইরেও অনেকে বালাইনাশক বিক্রি করেন। বিভিন্ন কোম্পানির লোকজন এসে এলাকার মানুষকে প্রলুব্ধ করছেন বালাইনাশক বিক্রির জন্য। ফলে অনেকে মৌসুমি ব্যবসা হিসেবে এ ব্যবসা বেছে নিয়েছেন। এসব দোকান নিয়ম করে পরিদর্শন করতে যে লোকবলের প্রয়োজন, তা উপজেলায় নেই।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, আলুর আবাদকে কেন্দ্র করে কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী এই ব্যবসায় নামেন। তাঁরাই মূলত নীতমালা না মেনে বালাইনাশক বিক্রি করেন। বিষয়টি কঠোরভাবে দেখা হবে।

No comments

Powered by Blogger.