ছায়ানটে তিন দিনব্যাপী কত্থক নৃত্যোৎসব শুরু

 শাস্ত্রীয় নৃত্যের অন্যতম একটি জনপ্রিয় ধারা কত্থক নৃত্য। অভিব্যক্তির সঙ্গে মুদ্রার সমন্বয়ে গল্পচ্ছলে উপস্থাপিত এ ভারতীয় এ নৃত্যধারার নিরলস চর্চা করছেন অনেকেই। এ নৃত্যের অনুরাগীর সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন।
সে প্রেক্ষাপটে এ নৃত্যের সাধনায় সম্পৃক্তদের শৈল্পিক রূপ-মাধুর্য মেলে ধরা ও উৎসাহিত করতে শুরু হলো তিনদিনব্যাপী কত্থক নৃত্যোৎসব। প্রথমবারের মতো এ উৎসবের আয়োজন করেছে কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়।
সোমবার পৌষের হিমেল সন্ধ্যায় ছায়ানট সাংস্কৃতিক ভবন মিলনায়তনে মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক সংগঠনের পরিচালক সাজু আহমেদ। উৎসব উদ্বোধন করেন নৃত্য ব্যক্তিত্ব লায়লা হাসান। অনুষ্ঠানে নৃত্যগুরু সৈয়দ আবুল কালামকে প্রদান করা হয় জীনাৎ জাহান স্মৃতি সম্মাননা পদক। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শিল্পী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রেজোয়ান আলী, শিল্পকলা একাডেমীর নৃত্য পরিচালক দীপা খন্দকার ও নৃত্যশিল্পী আনিসুল ইসলাম হীরু। আলোচনা শেষে ছিল নৃত্য পরিবেশনা।
কত্থক নৃত্যানুরাগীদের দারুণ ভিড় জমেছিল এ আয়োজনে। কত্থক নাচের নানা আঙ্গিকের পরিবেশনা মুগ্ধ করে নৃত্যপ্রেমী দর্শকদের। নূপুরের ঝংকারে অভিব্যক্তির সঙ্গে মুদ্রার মেলবন্ধনে পরিবেশিত হয় স্পন্দন, বন্দনা, চতুরঙ্গ, পানঘাট, মেঘ মল্লিকা, তারানাসহ নানা আঙ্গিকের নাচ। এসব নাচ পরিবেশন করেন সাজু আহমেদ, ঐশী, রুহি, সুকন্যা, বেনজীর, নির্ঝর, তুষ্টি, সাথী, নিঝুম প্রমুখ নৃত্যশিল্পী।
আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় সেমিনারের মাধ্যমে একই স্থানে শুরু হবে দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন শেখ মেহেদী হাসান। আলোচনায় অংশ নেবেন আমানুল হক, রেজোয়ান আলী, মুনমুন আহমেদ, তাবাস্্সুম আহমেদ, আবিদুর রহমান, কাজী রকিবুল হক, পার্থপ্রতীম দাস, নীলুফার ওয়াহিদ পাপড়ী, বেনজির সালাম ও তিলোত্তমা সেনগুপ্তা। দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধ্যায়। এতে অতিথির বক্তব্য রাখবেন নৃত্য ব্যক্তিত্ব আমানুল হক, গোলাম মোস্তফা খান ও বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি মিনু হক।
বুধবার তৃতীয় দিনের সান্ধ্যকালীন আয়োজনে প্রধান অতিথি থাকবেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী। রবীন্দ্র নৃতনাট্য ভাবনাবিষয়ক আলোচনায় অংশ নেবেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও নৃত্যশিল্পী শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন রামুর ঘটনায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সঙ্গে একাত্ম হয়ে পরিবেশিত হবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নৃত্যনাট্য চ-ালিকা। সাজু আহমেদের নির্দেশনায় পরিবেশন করবে সিলেটের নৃত্যশৈলী।
বিজয় মঞ্চে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গান ॥
বিজয় দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনের বিজয় মঞ্চে চলছে মাসব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। দিন বদলের সংগ্রামে সাফল্য ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার/মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নে অব্যাহত বিজয়ের অঙ্গীকার স্লোগানে অনুষ্ঠানের আয়োজক মুক্তিযুদ্ধের ৪২তম বিজয় উৎসব জাতীয় উদ্যাপন কমিটি। সোমবারের সাংস্কৃতিক আয়োজনে ছিল মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গান ও কবিতা আবৃত্তির পরিবেশনা।
কবি মাহবুব-উল-আলম চৌধুরীর দুঃসময় ১৯৭১ কবিতাটি আবৃত্তি করেন আসলাম শিহির। একক কণ্ঠে গান শোনান স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী তিমির নন্দী। গেয়ে শোনান বাংলার হিন্দু বাংলার বৌদ্ধ বাংলার খ্রিস্টান বাংলার মুসলমান/আমরা সবাই বাঙালী ও শোনো একটি মুজিবুরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি শিরোনামের দুটি গান। কান্তা নন্দীর কণ্ঠে গীত হয় একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়, কর্ণফুলিরে সাক্ষী রাখিলাম তোরে, কি বাঁশি বাজাইলোরে। সবশেষে পরিবেশিত হয় বাউল গান। দেলোয়ার বাউল গেয়ে শোনান বাউলা কে বানাইল রে, পরাধীনের শিকল ভেঙে এবং আসত যদি প্রাণবন্ধু দুঃখ রইল না। সোনিয়া বয়াতি পরিবেশন করেন বন্দে মায়া লাগাইছে ও আজি কুলহারা কলংকিনী।
এর আগে প্রথম পর্বে ছিল আলোচনা। এতে অংশ নেন বস্ত্রমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া প্রমুখ। আলোচনায় বক্তরা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ও তাদের অনুসারীদের ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
মুক্তিযুদ্ধে সিরাজগঞ্জ বইয়ের প্রকাশনা উৎসব ॥ একাত্তরে স্বাধীনতা সংগ্রামে শত্রুর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল দেশের নানা প্রান্তের মানুষ। এসব অঞ্চলের মানুষের মতোই পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েছিল সিরাজগঞ্জের বাসিন্দারা। সেসব ঘটনা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সিরাজগঞ্জ শীর্ষক বই লিখেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান দুদু। গ্রন্থটিতে সিরাজগঞ্জ জেলার চার শতাধিক মুক্তিযোদ্ধার পরিচিতসহ রয়েছে নানা তথ্য। সোমবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়নে বইটির প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বইটির উপদেষ্টা সম্পাদক আলী নিয়ামত। আলোচনায় অংশ নেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আশরাফ উদ্দিন খান, এ্যাডভোকেট বেলায়েত আলী, অধ্যাক্ষ এমএ কালাম, এমদাদ হোসেন প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ গোলাম হায়দার।
আলোচনা শেষে আবাহন কালচারাল ক্লাবের আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাচ, গানসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থাপন করেন উদীয়মান শিল্পীরা।

No comments

Powered by Blogger.