নারীদের উচ্চ রক্তচাপ বংশগতির ধারা মোকাবেলা

সেই নারীর মা তার পূর্ণ বয়স্ক জীবনের গোটাটাই উচ্চ রক্তচাপের জন্য বিটাব্লকারস ওষুধ সেবন করে আসছেন। সেই নারীর বয়স এখন ৩৬ : রক্তচাপের কোন সমস্যা নেই।
হৃদরোগ নিয়ে মেয়ে কি ভাববেন মেয়ে যে ব্যাপারটি সম্বন্ধে অবহিত তা হলো : ৬৫ বছরের আগে, মা-বাবা, প্রথম ধাপের স্বজনদের হৃদরোগ থাকলে; একজন মহিলা আত্মীয়ের ভবিষ্যতে হৃদরোগের জোর সম্ভাবনা। যদিও হৃদরোগ পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো হৃদরোগ নারীদের মধ্যে পহেলা নম্বর ঘাতক। তাই নারীদের মধ্যে হৃদরোগ সম্বন্ধে সচেতনতা স্পষ্ট করা জরুরী। পুরুষের চেয়ে ১০ বছর পরে এদের রোগভোগ হয়, উপসর্গও হয় অন্যরকম। যেমন বমিভাব, মাথা ঝিমঝিম, দুুশ্চিন্তা, পেটে ব্যথা এবং রোগভবিষ্যও পুরুষের তুলনায় খারাপ। আর হার্ট এটাক হয়েছে এমন ধারণা নারীদের হয় কম, তাই হাসপাতাল ইমার্জেন্সিতেও তারা আসে দেরিতে।
সুসংবাদ হলো ৮০% হৃদরোগ হলো প্রতিরোধযোগ্য এবং ঝুঁকিগুলো আগে বা পরে যে কোন সময় হোক জানলে জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব।
পারিবারিক ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে ঝুঁকিটা জানা ভালো প্রথমে। উচ্চ রক্তচাপ পরিবার পরম্পরায় ধাবিত হয় এবং স্ট্রোক, হৃদরোগ ও কিডনি রোগের একটি বড় ঝুঁকিও বটে। এই ক্রনিক চিকিৎসা সমস্যায় ধমনীতে রক্তের চাপ বেড়ে যায়। তাই হৃদযন্ত্রকেও শরীরের সরবরাহের জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে জোরে রক্তকে প্রবাহিত করতে হয়, এজন্য হৃদযন্ত্রেরও কঠোর শ্রম করতে হয়।
উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ একই জিনিস নয় : এটি হলো হৃদরোগের প্রধান ঝুঁকি। সেই নারীর মা কত দীর্ঘ সময় রক্তচাপের চিকিৎসা নিয়েছেন তা যেমন বিবেচনার বিষয়, তেমনি তার অন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে কিনা তাও জানার বিষয়। যেমন ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ ও শরীরের বেশি ওজন থাকলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রক্তচাপ থাকতে পারে। জীবনযাপন রীতি যেমন খুব মদ্যপান, ধূমপান উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে।
হৃদরোগের ঝুঁকি আসে দুইটি রূপে : একটি হলো পরিবর্তনযোগ্য এবং অন্যটি হলো অপরিবর্তনীয় : নিয়ন্ত্রণ সাধ্য নয়।
যেসব ঝুঁকি পরিবর্তনযোগ্য নয় সেগুলো হলো : বয়স, জেন্ডার, (নারীদের চেয়ে পুরুষদের ঝুঁকি বেশি), এবং গোত্র (আফ্রিকান, এশিয়ান, ল্যাটিন আমেরিকানদের উচ্চ ঝুঁকি) নারীদের ঋতুবন্ধ হলো পুরুষের সমান ঝুঁকি।
আশ্বস্ত করার মতো সংবাদ হলো : উচ্চ রক্তচাপ হলো হৃদরোগের এমন ঝুঁকি যা পরিবর্তন সাধ্য : জীবনরীতি পরিবর্তন ও ওষুধ দিয়ে একে বদলানো যায়। হৃদরোগ ঠেকাতে হলে রক্তচাপ লক্ষ্য হবে ১৪০/৯০-এর নিচে রাখা। যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে রক্তচাপ অর্জন করতে হবে ১৩০/৮০-এর নিচে। স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং ধূমপান বর্জন করাও চাই।
পরিবারে উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস থাকলে সচেতন হওয়া বেশ জরুরী। এই সচেতনতা জীবনযাপন রীতি বদলাতে উদ্বুদ্ধ করবে : স্বাস্থ্য ভাল রাখা, ঝুঁকিগুলো নিয়ন্ত্রণ করা, রক্তচাপ কমা, রক্তে কোলেস্টেরল, ওজন সব জেনে এদেরকে স্বাস্থ্যসম্মত মানে রাখা, ঝুঁকিগুলো সম্বন্ধে সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনরীতি অনুসরণ করে ভবিষ্যতে হৃদরোগের সম্ভাবনা অনেকটাই কমানো যায়।

অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী

No comments

Powered by Blogger.