স্কুলছাত্রী পিঙ্কির আত্মহত্যা, অপহরণকারী রনির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি

বখাটের উৎপাত আর পরিবারের তিরস্কার ও ধিক্কারে অঙ্কুরেই ঝরে গেল স্কুলছাত্রী পিঙ্কির জীবন। পুরনো ঢাকার ধলপুর সিটি কর্পোরেশন স্কুলের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী সাদিয়া আক্তার পিঙ্কির (১৪) আত্মহনন নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। একদিকে বখাটে রনি অপহরণের পর দিনের পর দিন তাকে খুবলে খেয়েছে, অন্যদিকে তার বোনের তিরস্কার ‘তুই আত্মহত্যা কর আমরা কখনও তোকে ঘরে তুলে নেব না।’ এসব কারণে লজ্জা ক্ষোভ অপমানে ঘরে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে পিঙ্কি। এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, রনি নামের বখাটের জঘন্যতম কর্মকা-ে কিশোরী পিঙ্কিকে জীবন দিতে হয়েছে। তাদের সাফ কথা, শীঘ্রই এর বিচার করতে হবে। আর কতকাল এসব বখাটের ঘৃণ্য কর্মকা-ে কত তরুণী আত্মহননের পথ বেঁচে নেবে এলাকাবাসীর প্রশ্ন। সোমবার সকালে পিঙ্কির লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এরপর তার মরদেহ স্বজনের হাতে হস্তান্তর করে পুলিশ। পরে তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানার বুরিঙ্গা গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
নিহত পিঙ্কির দাদী সেলিনা বেগম জানান, রবিবার দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে বখাটে রনির বোন পাখি অজ্ঞাত এক মহিলাকে নিয়ে উত্তর মান্ডার পিঙ্কিদের বাসায় আসে। এ সময় রনির জামিনের বিরোধিতা করার জন্য রনির বোন পাখি তাদের সঙ্গে ঝগড়া শুরু করে। তিনি জানান, তখন পাখিকে বলি পিঙ্কিকে আপনার ভাই রনি জোরপূর্বক তুলে নিয়ে তার জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। আপনারা সম্মানজনক উপায়ে পিঙ্কিকে বিয়ে করে ঘরে তুলে নেন। তারপর আমরা মামলা প্রত্যাহার করে নেব। তখন পাখি ক্ষিপ্ত হয়ে, পিঙ্কিকে উদ্দেশ করে বলতে থাকে ‘তুই আত্মহত্যা কর, আমরা কখনও তোকে ঘরে তুলে নেব না।’ এ কথা শোনার পরে লজ্জায় ক্ষোভে অপমানে পিঙ্কি ঘরের মধ্যে ঢুকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। পিঙ্কির দাদী সেলিনা বিলাপ করে বলছিলেন, ওরা আমার নাতনি পিঙ্কির হাসি ভরা মুখ মলিন করে দিয়েছে। আমার দাদু পিঙ্কি জীবনের মায়া ত্যাগ করে চলে গেছে। আমি বখাটে রনি ও বোন পাখিসহ তার পরিবারের লোকজনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যাতে আর কোন মেয়েকে যেন এভাবে জীবন দিতে না হয়। নিহতের বাবা বাবুল মিয়া জানান, এক বছর ধরে রনি প্রায় সময়ে পিঙ্কির স্কুলে যাওয়ার পথে তাকে উত্ত্যক্ত করত। পিঙ্কি তার প্রেমে সাড়া দেয়নি। এরই জের ধরে গত ২৮ নবেম্বর স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে বখাটে রনি ও তার বন্ধু জনি পিঙ্কিকে অপহরণ করে। এ ঘটনায় তিনি যাত্রবাড়ী থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন। তিনি আরও জানান, মামলার পর যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানা পুলিশের সহায়তায় পিঙ্কিকে উদ্ধার করে। অপহরণকারী বখাটে রনিকে গ্রেফতার করে। ওই অপহরণ মামলায় রনি এখন জেলহাজতে। এ ঘটনার পর থেকে রনির পরিবার ও বন্ধুবান্ধব তাকে ও মেয়েকে প্রায়শই হুমকি দিত। মামলা তুলে নেয়ার জন্য রনির বোনসহ কয়েকজনে লোকলজ্জা ও পরিবারের সম্মানের কথা বিবেচনা করে রনির সঙ্গে পিঙ্কিকে বিয়ে দিতে সম্মত হয়েছিলেন। কিন্তু রনি জেলে যাওয়ার পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে পিঙ্কি ও তার পরিবারের সদস্যদের মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দেয়া শুরু করে। ঘটনার দিন বিকেলে বখাটে রনির বোন পাখি ও এক মহিলা তাদের উত্তর মান্ডার ছাতা মসজিদ কলোনির বাড়িতে এসে মামলা তুলে নেয়ার জন্য পিঙ্কিকে হুমকি দেয়। এরপর রনির বোন পাখি পিঙ্কিকে মারার জন্য তেড়ে এসে, অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। পরে বলে, তোর মত খারাপ মেয়েকে রনির ঘরের বউ হিসেবে আমরা মেনে নেব না। এতে অভিমানী মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। এ ব্যাপারে মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম জানান, এ ঘটনায় নিহতের পিতা বাবুল হোসেন বাদী হয়ে মুগদা থানায় মামলা করেছে। তবে এখনও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। উল্লেখ্য, রবিবার সন্ধ্যায় মুগদা থানাধীন উত্তর মান্ডা ছাতা মসজিদ কলোনির বাসা থেকে সাদিয়া আক্তার পিঙ্কিকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে অচেতন অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালে আনলে কর্তব্যর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

No comments

Powered by Blogger.