ছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ-শান্ত থাকার আহবান মনমোহনের

ভারতের নয়াদিল্লিতে ছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভরতদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তিনি নারীদের নিরাপত্তা বাড়াতে সম্ভাব্য সব কিছু করারও আশ্বাস দেন। এদিকে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুরো রাজধানীকে প্রায় দুর্গ বানিয়ে ফেলেছে পুলিশ।
যন্তরমন্তর ছাড়া শহরের আর কোথাও গতকাল সোমবার বিক্ষোভকারীদের সমবেত হতে দেওয়া হয়নি। নয়াদিল্লি ডিস্ট্রিক্টের অন্য এলাকাগুলোয় ১৪৪ ধারা অব্যাহত রয়েছে। বিক্ষোভকারীরা ওই দিন ইন্ডিয়া গেটের সামনেও জড়ো হওয়ার চেষ্টা চালায়।
নির্যাতিতার শারীরিক অবস্থা এখনো অপরিবর্তিত। তবে চিকিৎসকরা জানান, মানসিকভাবে বেশ স্থিতিশীল রয়েছেন তিনি। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত ইতিবাচক। গত রবিবারও তাঁর শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়। এ নিয়ে এক সপ্তাহে কয়েক দফা অস্ত্রোপচার করা হলো। এরই মধ্যে তাঁর পুরো চিকিৎসা খরচ বহনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এদিকে দিল্লিতে নারীদের ওপর যৌন নির্যাতনের মামলাগুলোর জন্য শিগগিরই দ্রুত বিচার আদালত গঠন করা হবে বলে জানা গেছে।
গত ১৬ ডিসেম্বর চলন্ত বাসে ছয় মদ্যপের হাতে ধর্ষণের শিকার হন ফিজিওথেরাপির ২৩ বছরের এই ছাত্রী। তাঁকে ও তাঁর বন্ধুকে দুর্বৃত্তরা রড দিয়ে পেটায়। পরে বাস থেকে ছুড়ে ফেলে দেয়। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল সোমবার টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে বলেন, 'মানুষের ক্ষুব্ধ হওয়ার সংগত কারণ আছে। আমারও তিনটি মেয়ে আছে। আপনাদের (বিক্ষোভকারী) মনের অবস্থা আমি বুঝতে পারছি। আমি, আমার স্ত্রী ও আমার পরিবারও ওই ঘৃণ্য অপরাধের শিকার মেয়েটির জন্য উদ্বিগ্ন।' মনমোহন বিক্ষোভকারীদের প্রতি শান্ত থাকার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রীর কথার প্রতিধ্বনি পাওয়া যায় নির্যাতিত মেয়েটির বাবার কণ্ঠেও। আইনগত কারণে তাঁর নাম প্রকাশ করা হয়নি। গত রবিবার হিন্দি ভাষার চ্যানেল নিউজ২৪ নেটওয়ার্কে তিনি বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বলেন, 'সহিংসতা নয়, পুলিশকে সহায়তা করুন। আমার মেয়ের জন্য প্রার্থনা করুন আপনারা।'
নয়াদিল্লিতে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো ১৪৪ ধারা অব্যাহত ছিল। পুলিশ প্রতিবাদকারীদের ওই দিন শুধু যন্তরমন্তর এলাকায় বিক্ষোভ করতে দিয়েছে। তবে রাইসিনা হিলে অবস্থিত রাষ্ট্রপতি ভবনের দিকে বা ইন্ডিয়া গেটের কাছে কাউকে ঘেঁষতেই দেয়নি। গতকালও ৯টি পাতাল রেলস্টেশন বন্ধ ছিল।
দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারক দারমার মুরুগেসান গত রবিবার জানান, আগামী ২ জানুয়ারি ছুটি শেষে আদালত বসার সঙ্গে সঙ্গে দিল্লির যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলোর বিচারে দ্রুত বিচার আদালত গঠন প্রসঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পাঁচটি দ্রুত বিচার আদালত গঠন করা হবে বলে জানান তিনি।
পুলিশের দুই কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত : দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর তেজেন্দ্র খান্না সাংবাদিকদের জানান, দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগে গতকাল পুলিশের দুই সহকারী কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, 'পাশাপাশি এ ঘটনা প্রতিরোধে পুলিশ কেন ব্যর্থ হয়েছে, দুজন ডেপুটি কমিশনারকে এর কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছি।' খান্না যুক্তরাষ্ট্র সফরে ছিলেন। ওই সফর সংক্ষিপ্ত করে গতকালই তিনি দিল্লিতে ফেরেন।
কমিশনারের পদত্যাগ চাইলেন তদন্ত কমিশনের প্রধান : দিল্লি পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা কমিশনার নীরাজ কুমারের পদত্যাগের দাবিতে এবার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন সরকার গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের প্রধান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি জে এস ভার্মা। তিনি বলেছেন, 'নীরাজের পদত্যাগ করা উচিত।' ভার্মা বলেন, 'শীর্ষ পর্যায় থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। আমি আশা করব, দিল্লির পুলিশ কমিশনার এই মুহূর্তে পদত্যাগ করুন।' ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা তদন্তে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে গত শনিবার এই তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন হাইকোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি লীলা শেঠ ও সাবেক প্রধান আইনজীবী গোপাল সুব্রামানিয়াম।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে ক্ষোভ : কোনো ঘটনায় আন্দোলন-বিক্ষোভ হলেই সব জায়গায় সরকারকে যেতে হবে কেন_এমন প্রশ্ন তুলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্দে। গতকাল সাংবাদিকদের জবাবে সিন্দে বলেন, 'স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ইন্ডিয়া গেটে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনা করার দাবি তোলা সহজ। কিন্তু আগামীকাল যদি আরেকটি দল সেখানে গিয়ে বিক্ষোভ করে, পরের দিন যদি কংগ্রেস ও বিজেপি গিয়ে বিক্ষোভ করে, তার পরের দিন যদি মাওবাদীরা অস্ত্র হাতে এসে হাজির হয় এবং বলা হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেন সেখানে যাননি, তবে?' তিনি বলেন, 'ভবিষ্যতেও যেকোনো সরকারের ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটতে পারে। সরকারকে সব জায়গায়ই যেতে হবে?' সিন্দের এ বক্তব্য ক্ষোভের আগুন উসকে দিয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। সূত্র : এএফপি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি।

No comments

Powered by Blogger.