১৩ বছর পর কালো শকুন by উজ্জ্বল মেহেদী

কালো শকুন। নিকষ কালো পেখম আর তীক্ষ চোখ। পৃথিবীর বিরলতম ভবঘুরে স্বভাবের এই পাখি বাংলাদেশের বাসিন্দা নয়। পথ ভুলে অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় এরা বাংলাদেশে আসে। উড়তে না পারলেই ধরা পড়ে। সর্বশেষ ১৯৯৯ সালে একটি কালো শকুন ধরা পড়েছিল।
এবার প্রায় ১৩ বছর পর ধরা পড়ল আরেক কালো শকুন সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে। হাওর এলাকার মানুষ মাছখেকো ইগল (প্যালাসেস ফিশিং ইগল) পাখির সঙ্গে পরিচিত। বিলে আর বন-ঝোপঝাড়ে দেখা মেলে ইগলের। কালো শকুনটির আকৃতির সঙ্গে এই ইগলের কিছুটা মিল রয়েছে। ১২ ডিসেম্বর রাতে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার করচার হাওরপারের কেজাউরা গ্রামে আবদুল কাদিরের বাড়ির উঠানে বসেছিল কালো শকুনটি। আর উড়তে পারছিল না। কাদির একে ধরে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখেন। খবর পেয়ে আশপাশের এলাকার কৌতূহলী মানুষের ভিড় লেগে যায় তাঁর বাড়িতে। নাম না জানা পাখিটি নিয়ে বিশ্বম্ভরপুর থানার পুলিশের দ্বারস্থ হতে হয় তাঁকে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছে পাখিটি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী চিকিৎসা ও প্রাণিসম্পদ অনুষদের ডিন আ ন ম আমিনুর রহমান পাখিটির ছবি দেখে একে কালো শকুন বলে শনাক্ত করেন। তিনি জানান, মধ্য এশিয়ার বাসিন্দা কালো শকুন (Black Vultuৎe) পৃথিবীর বিরলতম একটি পরিযায়ী পাখি। একে ভবঘুরে শকুনও বলা হয়ে থাকে। তাদের স্বভাবগত কারণে অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় উড়তে গিয়ে পথহারা হয়। ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশে প্রথম একটি কালো শকুন ধরা পড়েছিল। এরপর আরও দুবার দুটো কালো শকুন ধরা পড়েছিল।
পাখি বিশেষজ্ঞ শরীফ খান প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে নরসিংদী এলাকায় একটি কালো শকুন ধরা পড়ে। সেটি জাতীয় চিড়িয়াখানায় দেওয়া হয়েছিল। এর আগের বছর এভাবে আরেকটি কালো শকুন ধরা পড়ে। সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরে ধরা পড়া কালো শকুনটি সম্ভবত দেশে ধরা পড়া চতুর্থতম। শরীফ খান বলেন, এরা পাহাড়ের খাদে কিংবা উঁচু গাছে বাসা বাঁধে। বছরে মাত্র একটি ডিম পাড়ে এবং সেটি ফুটে বাচ্চা বের হয়। বিশ্বম্ভরপুরে ধরা পড়া কালো শকুনটি অপ্রাপ্তবয়স্ক বলে জানিয়ে শরীফ খান বলেন, ‘কালো শকুন শুধু বিরলই নয়, বিরলতম একটি পরিযায়ী পাখি। তাই এটিকে জাতীয় চিড়িয়াখানায় দেওয়া উচিত।’

No comments

Powered by Blogger.