যেন ব্যালেরিনা by রয়া মুনতাসীর

পাদুকাজোড়ার তলানি বলতে গেলে নেই। দেখে অবশ্য বোঝা যাচ্ছে খুবই আরামদায়ক। হালকা ও পাতলা। পায়ের কয়েকটি আঙুলের ওপর ভর করে রীতিমতো নাচতেও সাহায্য করে এগুলো। মেয়েদের পায়ে গোলাপি জুতা; ছেলেদের পায়ে সাদা অথবা কালো জুতা।
বলছিলাম ব্যালেরিনা বা ব্যালে জুতার কথা, যেগুলো পাশ্চাত্যে একসময় শুধু নাচেই ব্যবহার করা হতো। তবে এখন ব্যালে-নাচিয়েদের পা থেকে নেমে সঙ্গী হয়েছে চলার পথে, তরুণীদের পায়ে।
কথায় আছে, পা ঢাকা থাকলে ঠান্ডা অনেক কম লাগে। সারা দিনের চলাফেরায় ব্যালেরিনা শীতের সময় অনেক জনপ্রিয় হয়েছে এ কারণে। কিশোরী-তরুণী ছাড়িয়ে এখন মাঝবয়সীদের পছন্দের তালিকায় উঠে এসেছে এ পাদুকা। বাজার ঘুরে এর রকমারিতা দেখে কিছুটা অবাকই হতে হয়।
দু-তিন বছরে এর চাহিদার কারণেই নকশায় নিয়ে এসেছে ভিন্নতা। ব্যালেরিনার সামনের দিকের আকারকে ওপেন টো, ক্লোজ টো, পয়েন্টি টো, রাউন্ড টোসহ বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। বাটার অ্যাডভারটাইজিং ম্যানেজার রাজিব জাহান জানান, যেসব ব্যালেরিনার সামনে খোলা আছে, সেগুলো গরমের সময় বেশি জনপ্রিয়তা পায়। অন্যদিকে, যেসব ব্যালেরিনার সামনের দিকটি আটকানো, শীতের সময় এগুলোর চাহিদা বেড়ে যায়। বাটায় যেসব ব্যালেরিনা পাওয়া যায়, সেগুলো টেক্সটাইল, চামড়া ও সিন্থেটিক কাপড়ের তৈরি।
ব্যালেরিনা কেনার সময় কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। পা দুটি আরামে রাখাই হচ্ছে ব্যালেরিনার অন্যতম কাজ। জুতা পরার পর যদি আরাম না লাগে, তাহলে বাকি সব সৌন্দর্যই বৃথা। অনেকের পায়ের পাতার সামনের দিকটা একটু চওড়া হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে পরার পর আঙুলে ব্যথা লাগছে কি না, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। আরবান ট্রুথের মূল প্রতিষ্ঠান প্রাইড গ্রুপের বিপণন যোগাযোগ ব্যবস্থাপক সুম্বাল মোমেন বলেন, ব্যালেরিনা পায়ে দেওয়ার পর পায়ের আঙুল বের হয়ে থাকলে দেখতে ভালো লাগে না। এ কারণে আঙুল ঢেকে থাকবে—এ ধরনের ব্যালেরিনা কেনা উচিত। যারা উচ্চতায় একটু খাটো, তাদের জন্য পয়েন্টি ব্যালেরিনা উপযুক্ত। পাশাপাশি যতটা সম্ভব হালকা নকশার ব্যালেরিনা পরা উচিত। ব্যালেরিনা জমকালো দাওয়াতে মানানসই জুতা নয়। বরং সারা দিনের চলাফেরা ও বন্ধুদের আড্ডাতেই চোখ ধাঁধাবে বেশি।
ব্যালেরিনা সব ধরনের পোশাকের সঙ্গেই মানিয়ে যায়। এখন তো শাড়ির সঙ্গেও অনেকে ব্যালেরিনা পরছেন। সালোয়ার-কামিজ আর পাশ্চাত্য পোশাকের সঙ্গে তো সব সময়ই পরা হচ্ছে। গ্যালারি অ্যাপেক্সের বিপণন বিভাগের এক্সিকিউটিভ ব্যান্ড ইয়াশনা চৌধুরী বলেন, শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে একটু চোখা আছে সামনে, এ ধরনের ব্যালেরিনা ভালো লাগে। এ ধরনের পোশাকের সঙ্গে কিটেন হিল ও সেমি ওয়েজেস ব্যালেরিনাও মানানসই হবে। লেগিংস ছাড়াও জিনস, স্কার্ট ও ক্যাপ্রির সঙ্গে পরতে পারবেন। তবে স্কার্ট যেন একদম গোড়ালি অবধি না আসে; তাহলে কিছুটা খাটো লাগবে দেখতে।
বাজার ঘুরে বিভিন্ন রকমের ব্যালেরিনা দেখা গেল। দোকানে ক্রেতাদের চাহিদার কথা মনে রেখেই লাল, নীল, কালো, হলুদ, গাঢ় সবুজ, সাদা যে ধরনেরই আপনি চান, খুঁজে পাবেন সহজেই। প্রিন্ট, মেটাল, পুঁতি, বিডস প্রভৃতি দ্বারা অলংকৃত করা হচ্ছে ব্যালেরিনাকে। উপাদান হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে স্যাটিন, চামড়া, ক্যানভাস, টেক্সটাইল। বাংলাদেশে তৈরি ব্যালেরিনাগুলোকে পুরোপুরি পাশ্চাত্য ধাঁচে না করে কিছুটা নকশা বদল করে নেওয়া হয়। যাতে এ দেশের পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে পরা যায়। ইয়াশনা চৌধুরী বলেন, ‘সামনেই আমরা জ্যামিতিক নকশার প্রিন্ট ফুটিয়ে তুলব ব্যালেরিনাতে। দেশীয় ঐতিহ্যের ছোঁয়া পাওয়া যাবে এতে।’
পা ঢাকা থাকে বলে শীতে ব্যালেরিনার কদর বেড়ে যায় অনেকখানি। মডেল: সাবিহা। কৃতজ্ঞতা: বাটা

No comments

Powered by Blogger.