মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার- আযাদের বিরুদ্ধে যুক্তি শেষ পর্যায়ে

জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সদস্য (রুকন) পলাতক আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যুক্তি উপস্থাপন শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে বাকি রয়েছে রাষ্ট্রপক্ষের আইনগত ব্যাখ্যা। এ জন্য ২৬ ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ গতকাল সোমবার প্রথমে দ্বিতীয় দিনের মতো যুক্তি উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সাহিদুর রহমান। তাঁর যুক্তি উপস্থাপন শেষে আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আবদুস শুকুর খান যুক্তি দেন।
অভিযোগের বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপনকালে সাহিদুর রহমান বলেন, পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ৮ জুন আযাদসহ চার-পাঁচজন দুই নারীকে ধর্ষণ করেন। পরে আযাদ তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে বাড়ি লুট করেন। রাষ্ট্রপক্ষের ১৩ ও ১৪তম সাক্ষী এ বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ষষ্ঠ অভিযোগ অনুসারে, আযাদ মুক্তিযুদ্ধকালে ১৯ জ্যৈষ্ঠ ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের চিত্তরঞ্জন ও বাদলকে গুলি করে হত্যা করেন। রাষ্ট্রপক্ষের দ্বিতীয় সাক্ষী চিত্তরঞ্জনের স্ত্রী জ্যোৎস্না রানী, চিত্তরঞ্জনের প্রতিবেশী ও রাষ্ট্রপক্ষের চতুর্থ সাক্ষী ধলা মাতব্বর এবং নবম সাক্ষী নগেন চন্দ্র মণ্ডল ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী।
কৌঁসুলি বলেন, সপ্তম অভিযোগে বলা হয়েছে, হাসামদিয়া গ্রামের গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটে আযাদ অংশ নেন। এটা রাষ্ট্রপক্ষের ১৬, ১৭, ১৮, ১৯ ও ২০ নম্বর সাক্ষীর সাক্ষ্যে রয়েছে। ৮ নম্বর অভিযোগ, আযাদ উজিরপুর গ্রামের গুরুদাসের মেয়েকে অপহরণ করে আটকে রাখেন। ছাড়া পাওয়ার সাত-আট দিন পর মেয়েটি আত্মহত্যা করে। এ ঘটনা রাষ্ট্রপক্ষের ১১, ১২ ও ১৩ নম্বর সাক্ষীর জবানবন্দিতে রয়েছে।
আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন: রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আবদুস শুকুর খান যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, আযাদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত হয়নি। তিনি রাজেন্দ্র কলেজে পড়তেন—এ তথ্য তদন্ত কর্মকর্তা চিঠির মাধ্যমে জেনেছেন, নিজে ওই কলেজে যাননি। সাক্ষীদের বক্তব্যে এসেছে, আযাদ বাহারদিয়া মাদ্রাসায় পড়েছেন, কিন্তু তার কোনো নথি নেই। আযাদের সম্পর্কে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের কাছেও কোনো তথ্য নেই।
আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ফরিদপুরে আযাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড প্রমাণের জন্য একাত্তরের বইপত্র, দেশি-বিদেশি পত্রপত্রিকাও উপস্থাপন করেননি। আযাদ আলবদর কমান্ডার বা রাজাকার ছিলেন না এবং সাক্ষীরা তাঁকে চিনতেন না। সাক্ষীরা ৪০ বছর পরে ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কেননা, এত আগের ঘটনা এভাবে বর্ণনা করা যায় না।
এ সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, কিছু কিছু ঘটনা মানুষ অনেক দিন পরও ভোলে না, আবার কিছু কিছু ঘটনা মানুষ সহজেই ভুলে যায়।
এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, আযাদের বিরুদ্ধে একাত্তরের পরে দালাল আইনে মামলা হয়েছিল। কিন্তু আইন অনুযায়ী একই অভিযোগে এক ব্যক্তির দুবার বিচার হতে পারে না। সাক্ষীরা অনেক তথ্যই তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেননি, কিন্তু জবানবন্দিতে বলেছেন। এ থেকে বোঝা যায়, তাঁর বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে নানা অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার বিভিন্ন অভিযোগের ঘটনাগুলো পাকিস্তানি সেনারাই ঘটিয়েছে, আযাদ ঘটনাস্থলে ছিলেন না। এ জন্য তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক।
পরে রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থাপিত যুক্তির আইনগত ব্যাখ্যার জন্য দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
কাদের মোল্লার চার আবেদনের আদেশ ২৬ ডিসেম্বর: একই ট্রাইব্যুনালে গতকাল জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় চারটি আবেদনের বিষয়ে শুনানি হয়েছে। তাঁর আইনজীবী তাজুল ইসলাম এই শুনানি করেন। আবেদন চারটি হলো: আসামিপক্ষের আরও ছয় সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেখার অনুমতি, আসামির বিরুদ্ধে পল্লবী ও কেরানীগঞ্জ থানায় দুটি মামলার প্রত্যায়িত অনুলিপি এবং কমপ্লেইন রেজিস্ট্রারের অনুলিপি সরবরাহ। শুনানির পর ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে আদেশের জন্য ২৬ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন।

No comments

Powered by Blogger.