সাবেক পরিচালকসহ আটজনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা- ১৩০ টাকার ইনজেকশন রাজশাহী মেডিকেল কেনে ৪৮০ টাকায়

১৩০ টাকা দামের ইনজেকশন ৪৮০ টাকা, ৬২ টাকার ইনজেকশন ২০০ টাকা, ১১ টাকা ৬৩ পয়সার ট্যাবলেট ২৫ টাকায় কেনা হয়েছে। এমনি করে ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১৬ ধরনের ইনজেকশন, ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল ‘অতিরিক্ত’ দাম দিয়ে কিনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এতে সরকারের ক্ষতি হয়েছে দুই কোটি ১৩ লাখ ১৬ হাজার ১০০ টাকা।
ওই টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আটজনের বিরুদ্ধে নগরের রাজপাড়া থানায় গতকাল সোমবার একটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মামলায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল লতিফকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন: হাসপাতালের সাবেক উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ, ওষুধ সরবরাহকারী ঠিকাদার নগরের লক্ষ্মীপুর এলাকার ফাহিম মেডিকেল হলের স্বত্বাধিকারী মতিউর রহমান, রেনেটা লিমিটেডের রাজশাহী ডিপো অপারেশনসের ব্যবস্থাপক রবিউল হোসেন, জেসন ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের ঢাকার জ্যেষ্ঠ আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক সহিদুল আলম, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের আনিসুর রহমান, একমি ল্যাবরেটরিজের এম এ মান্নান ও এসিআইয়ের শেখ মোহাম্মদ আলী। এর মধ্যে আনিসুর, মান্নান ও আলী রাজশাহীর আঞ্চলিক বিক্রয় ব্যবস্থাপক।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে এমএসআর (ওষুধ) সামগ্রী কেনা বাবদ পাঁচ কোটি ৭০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৮০ টাকা বরাদ্দ করা হয়। দরপত্রে স্কয়ার, রেনেটা, একমি, এসিআই ও জেসন ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড এবং রাজশাহী নগরের লক্ষ্মীপুর এলাকার ফাহিম মেডিকেল হলের স্বত্বাধিকারী মতিউর রহমান অংশ নেন। কিন্তু দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সঙ্গে গোপন চুক্তি অনুযায়ী পাঁচটি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা তাঁদের দরপত্র প্রত্যাহার করে নেন। এই সুযোগে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান ফাহিম মেডিকেল হলকে ওষুধ সরবরাহের জন্য কার্যাদেশ দেয় কমিটি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পাঁচ কোটি ৭০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৮০ টাকায় হাসপাতালে ১৩৩ ধরনের ওষুধ ও ওষুধ সামগ্রী সরবরাহ করে। এর মধ্যে ১৬ ধরনের ক্রয়ে হাসপাতালের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় দুই কোটি ১৩ লাখ ১৬ হাজার ১০০ টাকা। ঘটনা জানাজানির পর অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
দুদকের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে, দরপত্রে বিভিন্ন ওষুধ বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের দেওয়া দর অনুযায়ী, ৬২ টাকা দামের সেফট্রিয়াজোন (১ জিএম) ইনজেকশন কিনতে হয়েছে ২০০ টাকায়। শুধু এই ইনজেকশন ৬২ হাজারটি কেনা বাবদ হাসপাতালের ক্ষতি হয়েছে ৮৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। ১৩০ টাকা দামের ইনজেকশন ডুবুটামিন ৪৮০ টাকা করে দেড় হাজার পিস কেনা হয়েছে। প্রতি ইনজেকশনে ৩৫০ টাকা করে ক্ষতি হয়েছে পাঁচ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ১১ টাকা ৬৩ পয়সা দামের অ্যাজিথরোমিসিন ট্যাবলেট কেনা হয়েছে ২৫ টাকা করে। এই ট্যাবলেট ৭০ হাজার পিস কিনে ক্ষতি হয়েছে নয় লাখ ৩৫ হাজার ৯০০ টাকা।
এমনি করে ২৯৭ টাকা দামের ইনজেকশন ৪০০ টাকায়, ৭৭ টাকা দামের ইনজেকশন ১২৫ টাকায়, ৪৬ টাকা ৩১ পয়সা দামেরটি ৭০ টাকায়, ৪১ টাকা ৪২ পয়সার দামেরটি ৬৫ টাকায়, ৪০ টাকা দামেরটি ১৫০ টাকায়, ২২ টাকা ১০ পয়সা দামেরটি ৪৫ টাকায়, ২০ টাকা ১৯ পয়সা দামেরটি ৪৫ টাকায়, ১৭ টাকা ৯৫ পয়সার দামেরটি ২২ টাকায়, পাঁচ টাকা ৯৭ পয়সার দামেরটি সাড়ে নয় টাকায় ও চার টাকা ২৯ পয়সা দামের ইনজেকশন ১৩ টাকা ৩৫ পয়সায় কেনা হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ টাকা ৭৯ পয়সা ও পাঁচ টাকা ৯৩ পয়সা দামের দুই ধরনের ট্যাবলেট ১২ টাকা করে, ১১ টাকা ৫৮ পয়সা দামের ক্যাপসুল ২৫ টাকা করে কেনা হয়েছে।
দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদ গতকাল ওই মামলাটি করেন। মঞ্জুর মোর্শেদ প্রথম আলোকে বলেন, দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় আসামিরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিল্লুর রহমান বলেন, মামলাটি থানায় দায়ের করা হলেও নিয়ম অনুযায়ী দুদক কর্মকর্তারাই তদন্ত করবেন।
মামলার দুই নম্বর আসামি ও হাসপাতালের সাবেক উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, তাঁর নামে মামলা হওয়ার কথা শোনেননি। এ ব্যাপারে দুদক তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। সে সময় বলেছিল, তারা কোনো অনিয়ম করেনি। সরকারি নিয়মনীতি অনুযায়ী যারা টিকেছে, তাদের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলার প্রধান আসামি হাসপাতালের সাবেক পরিচালক আবদুল লতিফের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.