বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক শেষ পর্যায়ে

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত পলাতক আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলায় আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন গতকাল সোমবার শেষ হয়েছে। আগের দিন রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন করে।
আগামীকাল বুধবার রাষ্ট্রপক্ষ আইনগত জবাব দেবে। সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানিয়েছেন, বুধবার লিগ্যাল রিপ্লাইয়ের পর বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে রায়ের তারিখ নির্ধারণ করতে পারেন ট্রাইব্যুনাল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয় গত রবিবার। প্রথম দিন প্রসিকিউটর মো. সাহিদুর রহমান যুক্তি উপস্থাপন করেন। গতকাল দুপুর পৌনে ১টার দিকে তাঁর যুক্তি শেষ হয়। দুপুরের বিরতির পর আসামিপক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. আব্দুস শুকুর খান যুক্তি উপস্থাপন করেন। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে তাঁর যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়। ওই সময় ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশনকে ২৬ ডিসেম্বর লিগ্যাল রিপ্লাই দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে মুলতবি করেন।
বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে মোট আটটি অপরাধের বিষয়ে ২২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যের ব্যাপারে যুক্তি উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর। এক পর্যায়ে প্রসিকিউটর জানান, অঞ্জলি দাসকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় অঞ্জলির ভাই দেব কুমার দাস সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাচ্চু রাজাকার অঞ্জলিকে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে তাঁদের বাড়ি এসেছিলেন। রাজি না হওয়ায় তাঁকে তুলে নিয়ে যান তিনি। নিরুপায় হয়ে অঞ্জলির বাবা বাচ্চুর শ্বশুর চান কাজীর মাধ্যমে বললে কদিন পর অসুস্থ অবস্থায় অঞ্জলি বাড়ি ফিরে আসেন। এরপর অঞ্জলিকে আবার নিতে এলে অঞ্জলি বিষপানে আত্মহত্যা করেন। এই অভিযোগ প্রমাণে প্রতিবেশী রওশন আলী বিশ্বাসও সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষীরা জানিয়েছেন, অঞ্জলির মৃত্যুর পর তাঁকে মাটি চাপা দিতে চেয়েছিলেন বাচ্চু রাজাকার। পরে অঞ্জলির বাবা তাঁকে দুই হাজার টাকা দিয়ে দাহ করেন। সক্ষীদের সাক্ষ্য থেকে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। প্রসিকিউটর এ মামলায় আসামি বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাজা প্রদানের আর্জি পেশ করেন।
এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আব্দুস শুকুর খান যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন। তিনি বলেন, বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য বিশ্বাসযোগ্য নয়। যেসব অপরাধের কথা বলা হয়েছে সেগুলোর সঙ্গে আসামি আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু জড়িত ছিলেন না। এসব অপরাধ পাকিস্তানি বাহিনী করেছে। তিনি বলেন, প্রসিকিউশন অপরাধ প্রমাণ করতে পারেনি।
গত ৪ নভেম্বর বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে আটটি সুনির্দিষ্ট ঘটনায় অভিযোগ গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনালে তাঁর বিরুদ্ধে ১০টি ঘটনায় ২২টি অভিযোগের ভিত্তিতে মোট ৪৪৮ পৃষ্ঠার অভিযোগ দাখিল করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.