২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন-মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী by পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য্য

২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যেকোনোভাবেই হোক সংবিধানের বাধ্যবাধকতার কারণে এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।
এ ছাড়া বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী অভ্যন্তরীণ রুটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট পরিচালনা করতে বিমান ও পর্যটনমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে আগামী বছর জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের সংক্ষিপ্তসার অনুমোদন দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ মেয়াদে এটাই হবে রাষ্ট্রপতির শেষ ভাষণ। ওই সময় অনির্ধারিতভাবে নির্বাচনের প্রসঙ্গ আলোচনায় ওঠে। আইনসচিব সংবিধানে নির্বাচন সম্পর্কে কী আছে, তা পড়ে শোনান বৈঠকে। তিনি বলেন, সংবিধান অনুসারে মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে এবং মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আইনসচিবের এ মন্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের বাধ্যবাধকতার কারণে যেকোনোভাবেই হোক ২৫ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হতে হবে।
অভ্যন্তরীণ রুটে বিমানের ফ্লাইট চালুর নির্দেশ : সূত্র জানায়, বৈঠকে অভ্যন্তরীণ রুটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট পরিচালনা করতে বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খানকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যেসব রুটে বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে সেসব রুটে বড় বিমান না হলেও কম সিটের বিমান পরিচলনার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বিমানের এয়ারক্রাফট সংকটের কথা তুলে ধরে বৈঠকে জানান, এ মুহূর্তে বিমানের বহরে ছোট এয়ারক্র্যাফট না থাকায় তারা ফ্লাইট পরিচলনা করতে পারছে না। তবে বিমান ছোট এয়ারক্রাফট কেনার চেষ্টা করছে এবং টাকা পেলেই অল্প সিটের এয়ারক্রাফট কিনবে বলে জানান ফারুক খান।
এ ব্যাপারে মুহাম্মদ ফারুক খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনার কথা স্বীকার করে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান পরিচালনার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি। টাকা পেলে ছোট আকারের এয়ারক্রাফট কিনে অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান পরিচালনা করব।' তবে এ মুহূর্তে সিলেট ও চট্টগ্রামে বিমানের ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রী।
ফারুখ খান বলেন, 'আপাতত আমি বেসরকারি আকাশ পরিবহন সংস্থা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে পরামর্শ দিয়েছি ছোট ২০ সিটের এয়ারক্রাফট কিনে ঈশ্বরদী ও বরিশালে পরিচলনা করতে। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজও ছোট আকারের উড়োজাহাজ কেনার চেষ্টা করছে।'
সূত্র জানায়, বৈঠকে কয়েক মন্ত্রী বিমানের বর্তমান কর্মকাণ্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, বিমান যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারছে না। তাঁরা বিমানকে বেসরকারি পরিচলনায় দেওয়ারও সুপারিশ করেন। তবে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে ভিন্ন মত পোষণ করে বলেন, প্রতিটি দেশে ন্যাশনাল ফ্ল্যাগ ক্যারিয়ার থাকে, বাংলাদেশেও থাকবে।
গত বছরের ১ আগস্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকে দেশের সব বিমানবন্দর সচল করতে এবং সেগুলোতে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি প্রতিটি বিমানবন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিরও নির্দেশ দেন তিনি; কিন্তু এরপর এ ব্যাপারে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। সে সসয় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন জি এম কাদের।
দেশে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে। অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর আছে পাঁচটি ও শর্ট টেকঅফ অ্যান্ড ল্যান্ডিং (এসটিওএল) স্টেশন কার্যকর আছে সাতটিতে। প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও বছরের পর বছর ১১টি বিমানবন্দরে গত কয়েক বছরে একটিও বেসরকারি বিমান ওঠানামা করেনি।
অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ঢাকায় শাহজালাল (রা.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামে শাহ আমানত (রা.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিলেটর ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যাত্রী পরিবহনে ব্যবহৃত হচ্ছে। সৈয়দপুর, যশোর ও বরিশাল বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ রয়েছে। তবে সৈয়দপুরে সপ্তাহে একদিন ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। শাহ মখদুম (রাজশাহী) বিমানবন্দরটি দুটি ফ্লাইং ক্লাব ব্যবহার করছে। এসটিওএল স্টেশনগুলো বহু আগেই পরিত্যক্ত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে কুমিল্লা বিমানবন্দর ভারতের কলকাতা-আগরতলা বিমান চলাচলে সহায়তার জন্য নেভিগেশনে, ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর দুগ্ধ উৎপাদনে, তেজগাঁও, বগুড়া ও শমসেরনগর বিমানবন্দর বিমানবাহিনীর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর লালমনিরহাট ও ঈশ্বরদী বিমানবন্দর দুটি একেবারে অলস অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে।
ধন্যবাদ প্রস্তাব গৃহীত : মন্ত্রিসভার বৈঠকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের দুটি প্রস্তাব গৃহীত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ধন্যবাদ প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
জাতিসংঘ ৬৬তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের উত্থাপিত 'জনগণের ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন মডেল' গত ১৮ ডিসেম্বর এবং বাংলাদেশের উত্থাপিত অটিজম সচেতনতাবিষয়ক প্রস্তাবটি সাধারণ পরিষদে গত ১২ ডিসেম্বর গৃহীত হয়।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন ভূঞা এ ধন্যবাদ প্রস্তাবের কথা জানান। এ ছাড়া বৈঠকে জাতীয় সংসদের নববর্ষের অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি যে ভাষণ দেবেন এর সংক্ষিপ্তসার অনুমোদন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.