পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের রায়-আদালত অবমাননা আইন অবৈধ-অসাংবিধানিক

পার্লামেন্টে পাস হওয়া আদালত অবমাননা আইনকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। আইনটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদনের শুনানি শেষে গতকাল শুক্রবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন।


রায়ে বলা হয়, নতুন আইনটি সংবিধানের পরিপন্থী। তা ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিচার থেকে অব্যাহতি দেওয়া সংবিধানের লঙ্ঘন।
পাকিস্তানের পার্লামেন্টে গত ৯ জুলাই আদালত অবমাননা বিল ২০১২ পাস হয়। ১২ জুলাই প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বিলটি আইনে পরিণত হয়। নতুন আইন অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীসহ সরকারের অন্য নির্বাহী কর্মকর্তারা তাঁদের পদে থাকার সময় আদালত অবমাননার দায় থেকে অব্যাহতি পাবেন। আইনটি পাস হওয়ার পর একে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে ২৭টি রিট আবেদন করা হয়।
পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সঙ্গে বিচার বিভাগের অনেক দিন ধরে চলে আসা দ্বন্দ্বের ফল এই 'আদালত অবমাননা আইন'। জারদারির বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা শুরু করার বিষয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির অনীহা ও পরবর্তী সময়ে সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত করার ঘটনারই ধারাবাহিকতা এটি। প্রেসিডেন্ট দায়মুক্তি ভোগ করেন_এ যুক্তিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও জারদারির বিরুদ্ধে মামলা শুরু করার উদ্যোগ নেননি গিলানি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরাফকেও একই আদেশ দিয়েছেন আদালত। মামলা চালু করতে ব্যর্থ হলে তাঁকেও গিলানির ভাগ্য বরণ করতে হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন আদালত। এ অবস্থায় সরকারি কর্মকর্তাদের আদালত অবমাননা থেকে অব্যাহতি দিয়ে আইন করা হয়। মূলত নতুন প্রধানমন্ত্রীকে আদালত অবমাননার হাত থেকে বাঁচাতেই তড়িঘড়ি করে সরকার এ আইন করে।
প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ইফতিখার চৌধুরী রায়ে জানান, নতুন আইনটি সংবিধানের ৬৩(১) (জি) অনুচ্ছেদের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি করে। তা ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের আইনি সুরক্ষার বিষয়টি সংবিধানের লঙ্ঘন। তিনি বলেন, আদালত অবমাননাবিষয়ক কোনো আইন তৈরির অধিকার সরকারের নেই। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করার উদ্দেশ্যেই ওই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে বলে আদালত জানান।
ইফতিখারের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন শাকিরুল্লাহ জান, খিলজি আরিফ হুসাইন, জাওয়াদ এস খাজা ও তাসাদ্দুক।
পাকিস্তানের অ্যাটর্নি জেনারেল ইরফান কাদির আদালতে জানান, আদালতের প্রতি সরকারের অনেক শ্রদ্ধা রয়েছে। আদালতের এ ব্যাপারে অসন্তুষ্ট হওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি আরো জানান, সংবিধানের এক ইঞ্চি বাইরে যাওয়ারও কোনো সাধ্য সরকারের নেই।
উত্তরে বিচারপতি খাজা বলেন, 'আপনারা ইতিমধ্যেই সংবিধান থেকে দুই থেকে তিন ইঞ্চি সরে গেছেন।' নতুন আইন আদালত অবমাননা-সংক্রান্ত কয়েকটি শর্তের উল্লেখ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানান বিচারপতি খিলজি। তা ছাড়া 'উপহাস', 'স্ক্যান্ডাল ছড়ানো' ও 'আদালত অবমাননা' শব্দগুলো নতুন আইনের বহু জায়গায়ই উপস্থিত নেই। সূত্র : ডন।

No comments

Powered by Blogger.