সাবেক মন্ত্রী ও আমলাদের বিচার শুরু-ব্রাজিলের লুলা সরকারের বৈধতা হুমকিতে

ব্রাজিলে এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় দুর্নীতির বিচার শুরু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। ভোট কেনার অভিযোগে সাবেক প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভার সরকারের বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে বিচারের মুখে দাঁড় করানো হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে লুলা সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।


লুলা সরকারের ৩৮ জন মন্ত্রী, আইনপ্রণেতা, ব্যবসায়ী ও ব্যাংকারের বিরুদ্ধে ২০০২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত কংগ্রেসে ভোট কেনার অভিযোগ তোলা হয়েছে। ব্রাজিলের গণমাধ্যমে এ বিচারকে ‘শতাব্দীর বিচার’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বিচার উপলক্ষে ৩৮ নেতার কাউকেই গ্রেপ্তার করা হয়নি। এমনকি তাঁরা বৃহস্পতিবার আদালতেও উপস্থিত হননি।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারক কার্লোস আয়ার্স ব্রিত্তো অভিযুক্তদের নাম ও অভিযোগের বিস্তারিত বর্ণনার মাধ্যমে দুর্নীতির মামলাটির বিচার শুরু করেছেন। ভোট কেনার পাশাপাশি তাঁদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, মানি লন্ডারিং ও প্রতারণার অভিযোগও রয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁদের সর্বোচ্চ ৪৫ বছর পর্যন্ত সাজা ভোগ করতে হবে।
বিবাদীরা দাবি করেছেন, এই মামলার বিচার করার এখতিয়ার আদালতের নেই। তবে বিচারকাজের শুরুতেই এ দাবি নাকচ করে দিয়েছেন আদালত।
লুলার ওয়ার্কার্স পার্টি (পিটি) ও ক্ষমতাসীন জোটের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের অতিরিক্ত বেতন-ভাতা প্রদানের অভিযোগও উঠেছে। তবে বামপন্থী দলটির (পিটি) প্রতিষ্ঠাতা লুলা এ অভিযোগে অভিযুক্ত নন। লুলা ২০০৩ সালে প্রথম ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। ২০১১ সালে তাঁর কাছ থেকে ক্ষমতা গ্রহণ করেন তাঁর দলেরই দিলমা হুসেফ।
২০০৫ সালে লুলার প্রথম মেয়াদে কংগ্রেস সদস্যদের ঘুষ দেওয়ার ঘটনা ঘটে। পিটির সদস্যরা অর্থের বিনিময়ে তাঁদের ভোট কেনেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
কৌঁসুলিরা অভিযোগ করেন, এই অর্থ সরকারি কোম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপনী বাজেট থেকে সরিয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়। ওই প্রতিষ্ঠানটির মালিক মার্কোস ভ্যালারিও ডি সুজারও বিচার চলছে।
ক্যানসারে আক্রান্ত লুলা সিলভা (৬৬) বৃহস্পতিবার সাও পাওলোতে সাংবাদিকদের জানান, মামলার বিচারকাজ সম্পর্কে তিনি খোঁজখবর রাখছেন না। অ্যাটর্নি জেনারেলরা ব্যাপারটি দেখছেন। লুলা জানান, তিনি প্রতারণার শিকার। দলের হয়ে তিনি জনগণের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
মামলাটির গুরুত্ব সম্পর্কে ব্রাসিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ডেভিড ফিসার জানান, ব্রাজিলের রাজনীতির বিশ্বাসযোগ্যতা দোদুল্যমান। ব্রাজিলের রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্য এটি একটি পরীক্ষা।
কৌঁসুলিরা মনে করেন, সাবেক চিফ অব স্টাফ ও লুলার রাজনৈতিক অনুচর হোসে দিরসিউ (৬৬) হলেন এই দুর্নীতির প্রধান হোতা। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁকে ১৫ বছর জেল খাটতে হবে।
বিরোধী দল ব্রাজিলিয়ান সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিএসডিবি) দাবি অনুযায়ী, কংগ্রেস সদস্যদের পাঁচ কোটি ডলার ঘুষ দেওয়া হয়েছে। এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.