মন্ত্রিত্বের এক বছর অনুভূতি, অনুভব by আবদুল লতিফ সিদ্দিকী

ব্যক্তিসত্তার বিমূর্ত বৈশিষ্ট্য হিসেবে কবিত্ব, পাণ্ডিত্য, মন্ত্রিত্ব, ঋষিত্ব প্রভৃতি গুণাত্মক অভিধা ভিন্ন ভিন্ন মানব-মূর্তিকে যেমন স্পষ্ট অবয়বে মেলে ধরে তেমনি প্রত্যেকটি প্রত্যয় আবার সংশ্লিষ্ট ধারকের ভাবমূর্তিও অবধারিতভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। যে চারটি বিমূর্ত লণের কথা উল্লেখ করেছি তার মধ্যে মন্ত্রিত্বই যে সবচেয়ে অপ্রাকৃত ও বিষয়-সাপে


আচরণিকতায় অর্জিত সে ব্যাপারে সংশয় থাকবার কথা নয় এবং এটিই সম্ভবত ব্যক্তির ওপর আরোপিত সবচেয়ে খণ্ডিত কাল-পরিসর হয়ে থাকে। পাণ্ডিত্যের বিচ্ছিন্নতা, ঋষিত্বের নিমগ্নতা কিংবা কবিত্বের আত্মতা উজিয়ে মন্ত্রিত্বের কোলাহলমুখর উদ্যাপন জনতার জঙ্গম স্রোতে বেসামাল ঢেউয়ের রেখায় এঁকেবেঁকে এগিয়ে চলা, যদিও তরঙ্গের অভিঘাত সে ণকালে মিলিয়ে যায়। নেতৃত্বের নৈমিত্তিক স্পর্ধা মন্ত্রিত্বকে তবু ছুঁয়ে দেখতে চায় এবং কখনও কখনও স্পর্শের সেই উত্তাপ কারও কারও অনুভবে ধরা দেয় যোগ্যতা ও অঙ্গীকারের যূপকাষ্ঠে।
১৯৩৭ সালের মতো একটি জন্মবিন্দু থেকে যে রেখার পথচলা শুরু, তিয়াত্তর বছরের আবর্তনে তা এখন পরিণত সঞ্চরণপথ; পথের প্রান্তে এসে মন্ত্রিত্বের ণভঙ্গুর মুকুট পরে দাঁড়িয়েছি_ মুকুটের মর্যাদা রার অনিবার্য হুলিয়া কাঁধে চেপে ক্রান্তিকালের জিজ্ঞাসা-জর্জরিত আমি; মন্ত্রিত্বের বর্ষপূর্তি হতে চলেছে বলে আত্ম-বর্ণিত আমলনামায় চোখ রেখে বৈচারিক পর্যবেণের দায় এসে গেছে। এ দায় মাথা পেতে নিতে কুণ্ঠিত নই বলে আত্মমূল্যায়নের খেরোখাতা খুলে বসতে পিছপা নই এতটুকু। জনপ্রতিনিধিত্বের অবিচ্ছিন্ন অংশীদারিত্ব আমাকে দায়বদ্ধতার মন্ত্র শিখিয়েছে। স্বতঃপ্রণোদিত জনসমর্পণ যার রাজনৈতিক শক্তির নিয়ামক তার প েজবাবদিহিতার গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন স্বভাবসিদ্ধ অনুশীলনের পরিপন্থী কিছু নয়। তাই বিবেকের ব্যক্তিক আদালতে যে কাঠগড়া তাতে দাঁড়িয়ে সবিনয়ে আমার কৈফিয়ত জাতির সামনে তুলে ধরতে প্রস্তুত আছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা ভারসাম্যপূর্ণ নেতৃত্বের আওতায় মন্ত্রিপরিষদে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হই। আমি জানি সংসদীয় গণতন্ত্রের মতাকাঠামো যে সুচিন্তিত সংস্থাপনায় স্থিত তাতে মন্ত্রিত্বের আনুপাতিক গুরুত্ব রাষ্ট্রপতি-শাসিত সরকার পদ্ধতির চেয়ে উচ্চতর বলে কোন মন্ত্রীর অভিষেকজনিত মর্যাদা ও তার উদ্যাপনে একটি বাড়তি আকর্ষণের সম্ভাবনা নাকচ করা যায় না। রাষ্ট্র পরিচালনে অংশগ্রহণ ও অনুশীলন মানবপ্রকৃতিগত অভী্#৮৭৭৬;ারই অংশ এবং মন্ত্রিত্বের নির্বাচন যেহেতু এ প্রবণতার পরিধি-ডিঙানো কোন প্রক্রিয়া নয়, তাই অর্জিত সুযোগের আস্বাদন নিয়ে নৈতিকতা কিংবা শ্রেয়োনীতির কোন জিজ্ঞাসা যদি জাগে তবে তার মীমাংসা এতটা সূক্ষ্ম অনুভূতি-সাপে যে একটু মাত্রাচু্যতি ঘটামাত্র সাংঘাতিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিন্যাসে মন্ত্রিত্ব, প্রেসিডিয়াম সদস্যপদ কিংবা অন্য কোন জাতীয় বা দলীয় অর্জন যে দীর্ঘ-চর্চিত রাজনৈতিক স্বাতন্ত্র্যের স্বীকৃতি তাতে আর সন্দেহ কী! স্বাতন্ত্র্যের এ অনুভূতি আমার রাজনৈতিক অঙ্গীকারকে দৃঢ়বদ্ধ কাঠামোর ওপর চিরদিন স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করেছে। কিন্তু রাজনৈতিক স্বাতন্ত্র্যের অনুভূতি এমন কোন প্রশ্নাতীত শ্রেষ্ঠত্বের নিয়ামক নয় যার ভিত্তিতে মন্ত্রিত্বের প্রয়োগজনিত দায়বদ্ধতার প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যাওয়া চলে। তাছাড়া পাশ কাটিয়ে যাওয়ার দায়সারা সংস্কৃতির প্রতি অনাস্থা প্রকাশ আমার ব্যক্তিসত্তার একটি মৌল শনাক্তিচিহ্ন। আদর্শের ছক-কাটা যে রাজনৈতিক অধ্যায়গুলো পেরিয়ে এসেছি তার প্রতিটি স্তবকে নিষ্ঠা ও সংগ্রামের যুগল অনুভূতি আস্তরিত ছিল।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দীর্ঘ যাত্রাপথে যত ব্যারিকেড অতিক্রম করেছে তার মধ্যে বিগত তত্ত্বাবধায়ক বন্ধ্যাত্বের আড়াই বছর একটি আলাদা যুগসন্ধিণ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। এমন একটি অসাংবিধানিক অন্ধকারের কাল-পর্বে অনেক আলোকিত মুখমণ্ডল যখন অচেনা ঘোরের ভেতর ডুবে যাচ্ছিল তখনও অনুসন্ধানী দু্যতির লণ্ঠন হাতে নিয়ে দুর্যোগের ঝড়ো যাত্রায় ছিলাম নিয়ত কান্তিহীন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই সঙ্কটাপন্ন পরিস্থিতি ডিঙিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সভানেত্রী হিসেবে দলকে সাংগঠনিক নিয়ন্ত্রণে সংহত রাখতে সাহসের যে পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন তার ফলেই গণতন্ত্রের কচু্যত দেশমাতৃকা পুনরায় সাংবিধানিক যাত্রাপথে ফিরে আসতে সম হয়। দলের প্রতি স্থিতিশীল অঙ্গীকার ও প্রত্যয়ী অনুরাগ যা তিনি জীবনের অভিজ্ঞতায় তিলে তিলে সঞ্চয় করেছেন, ক্রান্তিকালের হট্টগোলে সেটা বিন্দুমাত্র বিস্মৃত হননি। বরং দেশপ্রেমের অগি্নপরীায় উত্তীর্ণ হয়ে অবশেষে জননন্দিত প্রধানমন্ত্রীরূপে নিজেকে নিবেদিত করেন জাতীয় উন্নয়নের সু-মহান ব্রতে। মাননীয় নেত্রীর অনুপ্রেরণায় এবং দেশপ্রেমের অঙ্গীকারে আমিও দলের সেই সঙ্কটকালে তাঁর প্রতি সশ্রদ্ধ থেকে সাহসী ভূমিকা পালন করেছি। কারণ আমি দৃঢ়প্রত্যয়ে বিশ্বাস করেছি, ফল যেমন বোঁটার কাছে কৃতজ্ঞ, বোঁটা যেমন ডালের নিকট দায়বদ্ধ অথবা কাণ্ড যেমন শেকড়ের ঋণ স্বীকারে কুণ্ঠা করে না তেমনি আমার দ্বিধাহীন কৃতজ্ঞতা দলের দুর্দিনে প্রকাশ করতে কার্পণ্য করিনি। জীবনের ধারাবাহিক বিকাশের মতো দলের বিকাশকে এক করে দেখেছি ও লালন করেছি বলে সেদিন আমার প্রত্যয়পূর্ণ অঙ্গীকারে এতটুকু চিড় ধরেনি।
২০০৮-এর নির্বাচনী অগি্নপরীায় উত্তীর্ণ, বিপুল জনসমর্থিত আওয়ামী লীগ সরকার যে পাঁচ বছরের রাষ্ট্রপরিচালন ভার পেয়েছে তার এক-পঞ্চমাংশ এরই মধ্যে অতিক্রান্ত হওয়ায় আত্মসমীার সময় এসে গেছে। পাঁচ বছরের পাঁচটি পাঁপড়ির সমবায়ে গঠিত যে 'পঞ্চবর্ষের ফুল', ইতোমধ্যে তার একটি পাঁপড়ি ধুলোয় লুটিয়েছে; ধুলো থেকে তুলে নিয়ে ঘ্রাণ শুঁকে যেমন পাওয়া যাবে না তার প্রকৃত সৌরভ, তেমনি আওয়ামী লীগ সরকারের এক বছরের সময়কালে মন্ত্রী হিসেবে কর্মের সুরভি কতটুকু ছড়াতে পেরেছি তার নিকেশও সত্যিকার অর্থে নিখুঁতভাবে তুলে ধরা এখনই সম্ভব নয়। এটা এজন্য যে, সময়ের একটি পূর্ণাঙ্গ পরিসর ছাড়া অগ্রগতির ক্রমধারায় একটি পর্বের অর্জনকে আলাদা আলোতে পর্যবেণ করা যায় না; পঞ্চাশ বছর যে বৃরে আয়ুষ্কাল, পাঁচ বছরে স্বভাবত তাতে ফল ধরে না। ফলের পত্তন ছাড়া মানুষ তো গাছের কীর্তিকে স্বীকার করে না। অথচ পাঁচ বছরের মাথায় গাছটি উৎপাটিত হলে তার বিরুদ্ধে নিষ্ফলতার অভিযোগ কতটুকু যুক্তিসঙ্গত হতে পারে?
মন্ত্রিত্বের এক বছরের খতিয়ানে চোখ বুলালে খ্যাতির ফিরিস্তি খুঁজে পাওয়া কতটা সহজ হতে পারে সে প্রসঙ্গে না গিয়েও বলা যায় অখ্যাতির আড়ম্বর আদৌ চোখে পড়বে না। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মতো দফতরের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে প্রত্ন-পণ্যে প্রায়-রূপান্তরিত একটি অর্থকরী শস্যের উৎপাদন, বিপণন ও আনুষঙ্গিক উন্নয়ন অভিল্যে রাতারাতি সাফল্যের সুযোগ যেমন নেই, তেমনি পূর্ববর্তী শাসনের পরিত্যক্ত জটলা কাটিয়ে উন্নয়নের মূল সড়কে উঠে আসাও সময়-সাপে ব্যাপার।
মন্ত্রিপরিষদে অন্তভর্ুক্তির পর সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর উদ্দেশে এক বক্তব্যে মন্ত্রিপরিষদকে 'সেবক পরিষদ' হিসেবে উল্লেখের মধ্য দিয়ে মন্ত্রী-জীবনের কর্মকাঠামো মানবমঙ্গলের অনুকূলে নির্ধারণের সঙ্কেত প্রদান করি। সেদিন আমি ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দলগোষ্ঠীর পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কথা ভুলে গিয়ে প্রজাতন্ত্রের সেবক হিসেবে সবাইকে সন্ত্রাস, রাহাজানি ও চৌর্যবৃত্তির বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তযোগ্য সাহসী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাই। জাতিসেবার সেই শপথের স্মৃতি স্মরণ করে মন্ত্রিত্বের অতিক্রান্ত এক বছরে উন্নয়নের অঙ্গীকারে নিজেকে যথাসাধ্য সক্রিয় রেখে কাজ করে গেছি। কালিহাতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস-ক েআয়োজিত মতবিনিময় সভায় সুনীতি অবলম্বনে সুশীল সমাজ গড়ার প্রত্যয় ঘোষণা করে দুর্নীতির বিপ েঅটল অবস্থানে কথা স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করি এবং ব্যক্তিগত স্খলনের েেত্র জবাবদিহিতার হুঁশিয়ারি উচ্চারণও করি। পর্যাপ্ত আহার্য, নিশ্চিন্ত নিদ্রা ও সুস্থ বিনোদনের অধিকার নিশ্চিতকরণের মধ্য দিয়ে সমৃদ্ধতর দেশ গঠনের আশাবাদ সেদিন ব্যক্ত করেছিলাম; দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি, বিগত এক বছরের কর্মকাণ্ডে সে ল্যেই নিবেদিত আছি।
১৯৪৭-এর দেশভাগের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এশিয়ার বৃহত্তম আদমজী জুটমিলসহ যেসব পাটকল প্রতিষ্ঠিত হয় সেগুলো অবাঙালী মালিকানাধীন থাকায় স্বাধীনতা-পরবর্তী কালে পরিত্যক্ত মিলগুলোর জাতীয়করণ হলেও সুষ্ঠু-সুশৃক্মখল ব্যবস্থাপনায় সেগুলো পরিচালিত হয়নি। ১৯৭১-পরবর্তীকালে বিভিন্ন সময় পাকিস্তান-মনস্ক শাসকগোষ্ঠী মতাসীন থাকায় পর্যাপ্ত দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাগত অঙ্গীকারের অভাবে তারা পাট-শিল্পের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় মনোসংযোগ করেনি। তাছাড়া শিল্পোন্নয়ন প্রক্রিয়ায় প্রভাবসঞ্চারী শ্রমিক নেতৃবর্গ পদে পদে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে পাট শিল্পকে পঙ্গুত্ববরণে বাধ্য করতে থাকে।
পাটশিল্পের ছন্দপতনে যেসব নিয়ামকের প্রত্য-পরো ভূমিকা ছিল তার মধ্যে প্রযুক্তির রূপান্তরশীল বিকাশ ছিল তাৎপর্যপূর্ণ; স্বল্প ও সীমিত আয়ের বিশাল জনগোষ্ঠী সস্তা দামের কৃত্রিম তন্তু হাতে পেয়ে ঐতিহ্যবাহী পাটপণ্য থেকে তাৎণিক মোহের বশে মুখ ফিরিয়ে নেয়। কৃত্রিম তন্তুর মূল্য অল্প, চেহারা চাকচিক্যময় এবং গড়নে টেকসই বলে তা সহজেই পাটের বাজার দখল করে নিতে সম হয়। বাজার অর্থনীতির চলমান সংস্কৃতি প্রতিযোগিতার হট্টগোলে পরিবেশবাদী সতর্কবাণী কানে তোলার ফুরসত পায়নি; চোখ-ধাঁধানো কৃত্রিম অাঁশের নতুন পণ্য সস্তায় পেয়ে সারা বিশ্বের হাটুরে জনতা তার দিকে সাগ্রহে ঝুঁকে পড়ে। বিশ্ববাজারে ঘটে যায় পাটপণ্যের নাটকীয় দরপতন; সাথে সাথে গৌরবের পটভূমি মুছতে মুছতে হারাতে থাকে সোনালি অাঁশের উপাখ্যান।
সৃজনশীল পাট-প্রযুক্তি ধ্বংসের চক্রান্তে ১৯৮২ সালে ঈটভথফটঢণ্রদ কণর্সধফণ অভর্্রর্ধর্লণ-এর গবেষণা, উদ্ভাবন ও পণ্য পরিকল্পনা কর্মসূচী বন্ধ করে দেয়। এর ফলে পাটপণ্যের কারবারি পরিসর সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে এবং শুধু কাঁচা পাট বিদেশে রফতানির সুযোগ অবশিষ্ট থাকে। নিয়তির নির্মম পরিহাসে বাংলাদেশের পাট বিদেশ ঘুরে পণ্যে রূপান্তরিত হয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের উন্নয়নকাণ্ড ত্বরান্বিত করলেও পাটের আদি সূতিকাগার বাংলাদেশ ক্রমাগত সুযোগ-বঞ্চিত হতে থাকে।
এক পর্যায়ে সরকার আবার বিরাষ্ট্রীকরণ নীতি গ্রহণ করলেও পাটশিল্পের টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা যায়নি। পূর্বোলি্লখিত কৃত্রিম তন্তুর প্রভাব এসে যুক্ত হয়েছে য়িষ্ণু এ অবস্থার সঙ্গে এবং শেষে বিশৃক্মখল ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র খাতের ৭৭টি পাটকলের মধ্যে অধিকাংশই অব্যাহত লোকসান সইতে না পেরে বন্ধ হয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর রুগ্ন ব্যবস্থাপনা ও অদ পরিচালন কৌশল পাটপণ্যের ট্রাজেডিকে আরও বেশি মাত্রায় ত্বরান্বিত করে। ২০০২ সালে চারদলীয় জোট সরকারের শাসনামলে বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপত্রে দস্তখত দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয় পাটশিল্পের মর্যাদার প্রতীক ঐতিহ্যবাহী আদমজী জুটমিল। ১৯৮০ সালের পরে পাটশিল্পের পদ্ধতিগত উন্নয়নের কোনো ব্যবস্থা গৃহীত না হওয়ায় সময়ের পরিক্রমায় সরকারী মালিকানাধীন মাত্র ২৪/২৭টি পাটকল শেষ পর্যন্ত টিকে আছে, যার মধ্যে ১৬টি চালু এবং ১৪টি লাভজনক উৎপাদনশীল পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে।
সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোপেনহেগেনের বিশ্বজলবায়ু সম্মেলনে পৃথিবীকে সবুজ রাখার প েঅগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। জলবায়ু ব্যবস্থাপনার সঙ্গে পাটসহ অন্যান্য জৈবতন্তু ও কৃষিশস্যের সম্ভাবনার প্রশ্নটি বিজড়িত। প্রতিকূলতামুক্ত, স্থিতিশীল ও পরিবেশবান্ধব জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে পাটচাষের পওে তা সহায়ক হতে পারে।
পাটকৃষি কার্যক্রমে যেসব অন্তরায় উল্লেখযোগ্য সেগুলো হলো বীজসংকট, প্রজাতিগত অনুন্নয়ন, পাট পচানো বা পাটজাগ সংশ্লিষ্ট অদতা। প্রচলিত পাটজাগ ব্যবস্থায় মাটি, গাছ, বর্জ্যসহ যেসব উপকরণ পাট গাছের উপরে চেপে রাখা হয় সেগুলোর সাথে মিথস্ক্রিয়ার ফলে পাটের অাঁশ তিগ্রস্ত হয় এবং ঝকঝকে অাঁশপ্রাপ্তিতে তা সহায়ক নয়। প্রবহমান জলধারায় পাটের অাঁশ বিচ্ছিন্নকরণ সম্ভব হলে অধিকতর টেকসই ও আকর্ষণীয় অাঁশ সংগ্রহ করা সম্ভব। তাছাড় ইতোপূর্বে সরকারী ব্যবস্থাপনায় অবযরমশণঢ ৗর্টধভথ রেমডণ্র্র- প্রকল্পের আওতায় ৗধঠঠমভ ৗর্টধভথ রেটর্ডধডণ প্রথা প্রচলনের মাধ্যমে পাটজাগ সহজীকরণ এবং পাটের গুণগত মানোন্নয়নে অর্থব্যয় হলেও তা ফলপ্রসূ হতে পারেনি। কাজেই সনাতন পন্থা ও ৗধঠঠমভ ৗর্টধভথ পদ্ধতির সংশ্লেষণ ঘটিয়ে নতুন ও কার্যকর পদ্ধতি উদ্ভাবনে পাট-গবেষকদের এগিয়ে আসতে হবে।
পাটশিল্পকে ঐতিহ্যের ধারায় পুনর্প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে ুটভঢর্টমরহ ার্লণ টেডপটথধভথ ইর্ড শিরোনামে একটি নতুন পণ্য-ব্যবহার আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে; প্যাকেজিংয়ের েেত্র সিনথেটিকের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার ল্যে আইনটি প্রণীত হতে চলেছে। বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন থেকে মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত প্রস্তাব পরীা করে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় তারা চাহিদা অনুযায়ী পাটের বস্তা সরবরাহ করতে পারবে কিনা; তাদের প থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ায় বিজেএমসি'র পাঠানো ম্যান্ডেটরি জুট প্যাকেজিং অ্যাক্ট প্রস্তাবনার ওপর বাংলাদেশ জুট এসোসিয়েশনসহ পাট-সংশ্লিষ্ট সব এসোসিয়েশনের মতামত ও পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। এ আইন চূড়ান্ত হলে চাল, চিনি, সার, সিমেন্টসহ অন্যান্য পণ্যের প্যাকেজ করার জন্য পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে। পরিবেশ-বান্ধব সংস্কৃতির অংশ হিসেবে এটা পাটশিল্পের প্রসারের পাশাপাশি প্রাকৃতিক তন্তুনির্ভর সমাজ-সত্তার উদ্বোধন ঘটাবে। এর ফলে এশিয়ার শ্রেষ্ঠ পাটবলয় হিসেবে বাংলাদেশ-ভূখণ্ড তার অতীত গৌরবের অধ্যায়গুলো পুনরুদ্ধারে সম হবে বলে আশা করা যায়।
মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করে নিবিড় পর্যবেণে উপলব্ধি করেছি স্থবিরতা ও অচলাবস্থায় আক্রান্ত একটি খাতকে সচল করে তুলতে গেলে সমন্বিত সংস্কার কর্মসূচী গ্রহণ জরুরী। পাটশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা-সংগঠনের সমবায়ী অংশগ্রহণে মতসংশ্লেষণের ধারায় এ খাতে নতুন উন্নয়ন-গতি সঞ্চার সম্ভব। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশের পাট খাতকে ঐতিহ্যের ব্যাহত ধারা থেকে উদ্ধার করে আবারও চাঙ্গা করে তুলতে সমণ্বিত কর্মোদ্যোগ নেয়া জরুরী। এ ল্যে পাটের গ্রেডগুলোর পুনরায় মান নির্ণয়, চাহিদা-অতিরিক্ত পাট বিদেশে রফতানিকরণ, উন্নত পাট-জাত উদ্ভাবন, উৎকৃষ্ট বীজ উৎপাদন, পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং পাট-উৎপাদনকারী কৃষকদের জন্য ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণে বিধিবদ্ধ কর্মপন্থা গৃহীত হয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুসরণে দীর্ঘদিন বন্ধ-থাকা সিরাজগঞ্জের কওমী জুট মিল এবং খুলনার খালিশপুরে অবস্থিত দৌলতপুর জুট মিল চালুর সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। পাটকল দু'টি চালু করতে প্রয়োজনীয় ১৩৫ কোটি টাকার মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে প্রাপ্য মাত্র ১৩ কোটি টাকায় সীমিত পরিসরে প্রাথমিক উৎপাদন শুরু হচ্ছে। পাটকে আমাদের আত্মপরিচয়ের প্রধান স্তম্ভ হিসেবে স্বীকার করি বলেই পাটপণ্য সামগ্রী বহুমুখীকরণ এবং পাটপণ্য ব্যবহারে ভোক্তাগোষ্ঠীকে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে পাটশিল্পের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার ও পাট-ভিত্তিক উন্নয়ন কাঠামো গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বাঙালী জাতিগোষ্ঠীর হাজার বছরের সংগ্রামী ঐতিহ্যে শ্রেষ্ঠতম, অহঙ্কারদীপ্ত অর্জন জাতিগত সার্বভৌমত্ব এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উজ্জ্বলতম কর্মকীর্তি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে নিরঙ্কুশ নেতৃত্বপ্রদান। বিপ্লব-অর্জিত স্বাধিকারের পথ পেরিয়ে আওয়ামী লীগ তার সংগ্রামী অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে জাতি গঠন ও সংস্কার-কর্মে বরাবরই আত্মনিবেদিত; ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইতিহাস-চিহ্নিত বিজয়ের পূর্বে 'দিনবদলের' অবিস্মরণীয় ঘোষণাপত্র পেশ করেছে।
ইতিহাসের সুদীর্ঘ ধারাপাতে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালে, সেই ১৯৪৯ সালে দলীয় সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত শামসুল হক উপস্থাপিত ইশতেহার, ১৯৬৬ সালের বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ৬ দফা ইশতেহার, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনী ইশতেহার, ১৯৯১ সালের ইশতেহার ও ১৯৯৬ সালের ইশতেহার পেরিয়ে ২০০৮ সালে এসে যে ইশতেহার ঘোষিত হয়েছে তার মধ্যে বিগত ইশতেহারগুলোর সারবত্তা ও সাম্প্রতিক যুগচাহিদা প্রতিফলিত হয়ে আরও পূর্ণাঙ্গ ও কালানুবর্তী হয়ে উঠেছে, কালপ্রগতির অমোঘ সূত্রে যা নিতান্ত স্বাভাবিক।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা স্বাধীনতার স্বপ্নরূপায়ণ ও সার্বভৌমত্বের সুরায় নির্বাচন-পূর্ববর্তী যে প্রবৃদ্ধি-চ্যালেঞ্জ বা ইশতেহার ঘোষণা করেন তাকে 'দিনবদলের সনদ' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আওয়ামী লীগ ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারটি প্রথাগত রাজনৈতিক ইশতেহার থেকে এ অর্থে স্বতন্ত্র, এর কালগত যে পরিসর, সরকারের গণতান্ত্রিক মেয়াদকালের সীমারেখা ভেঙে ফেলার স্পর্ধা তাতে অন্তর্নিহিত। এটা প্রমাণ করতে চায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্মুখে উত্তরকালের বাংলাদেশের একটি সৌন্দর্যসুষম স্বপ্নচিত্র প্রজ্বলিত আছে এবং তার নিরিখেই তারা পথ চলতে পছন্দ করে; একই সঙ্গে আত্মবিশ্বাস ও গণআস্থার প্রশ্নটিও এর মধ্যে আভাসিত। উন্নয়নের ধারাবাহিকতার সঙ্কেতও এতে সুস্পষ্ট। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ঘোষণাপত্রে কখনও কখনও দীর্ঘমেয়াদী অঙ্গীকারের আভাস থাকলেও তা এতটা সুনির্দিষ্টভাবে সময়-চিহ্নিত বা কাল-নির্দেশিত নয়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি এবং অন্তদর্ৃষ্টির যুগ্ম প্রোকোণে ১৩ বছর মেয়াদী যে উন্নয়ন-রূপকল্প যা 'ভিশন ২০২১' হিসেবে খ্যাত, তাতে ২০০৯-২০২১ কাল-পরিসরে বাংলাদেশকে একটি মাঝারি আয়ের দেশরূপে প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় ব্যক্ত হয়েছে।
২০২০ সালে উদ্যাপিত হবে জাতিরাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী এবং পরের বছর ২০২১-এর রয়েছে অন্য তাৎপর্য। এ বছরে মুক্তিযুদ্ধের পঞ্চাশ বর্ষ পূর্ণ হওয়ায় এটাকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তি রূপে পালন করা হবে। অনাগত সেই স্বর্ণপ্রহরে আমরা দেশমাতৃকার যে মুখচ্ছবি কল্পনা করি তা-ই মূলত মূর্ত হয় ভিশন ২০২১ প্রস্তাবনায়। নতুন প্রজন্মের যেসব তরুণ-তরুণী প্রথমবারের মতো ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছেন 'ভিশন ২০২১' তাদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিকাশমান যুবশক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছেন।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার যেটাকে দিনবদলের সনদ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে তার অন্যতম আকর্ষণীয় অন্তভর্ুক্তি 'ভিশন ২০২১' এবং 'ডিজিটাল বাংলাদেশ'। পাঁচ বছরের নির্ধারিত মেয়াদকালের অতিরিক্ত সময়সীমায় সমাপনযোগ্য উদ্বৃত্তমূলক, পরিপূরক কর্মসূচী সংযুক্ত করে উন্নয়নধারার অবিচ্ছিন্নতা রাকল্পে স্বপ্নকে বাস্তবের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন আকাঙ্া প্রকাশ করা হয়েছে। বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে আওয়ামী লীগ যে সত্য উপলব্ধি করতে পেরেছে তা এই যে পাঁচ বছরের গণ্ডির মধ্যে থেকেও পরিধি-বহিভর্ূত দূরকল্পনার আশ্রয় না নিলে উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে অধিকতর টেকসই ও খাতসই করে তোলা সম্ভব নয়। সময়-নির্দিষ্ট বিধিবদ্ধ অগ্রকল্পনার অনুসরণে স্বপ্নলোকের বাংলাদেশকে বাস্তবের জমিনে সুপ্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব বলেই ইশতেহারে কালগত উল্লম্ফনের সুযোগ রাখা হয়। মন্ত্রিত্বের এক বছর পুরো সময়জুড়ে আওয়ামী লীগ ঘোষিত স্পর্ধিত ইশতেহার বাস্তবায়নের কর্মপ্রচেষ্টা আমি যথাসাধ্য অব্যাহত রেখেছি।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে, ২০০৮ সালের ৮ ডিসেম্বর ইশতেহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে জাতীয় অগ্রগতি প্রশ্নে সুনির্দিষ্ট কর্মকাণ্ড পরিচালনার অঙ্গীকার ঘোষণা করেন। এর অন্তভর্ুক্ত প্রধান বিষয়গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য_ মূল্যসন্ত্রাসী সিন্ডিকেট ভেঙ্গে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, বিশ্বমন্দা মোকাবেলায় টাস্কফোর্স গঠন ও তথ্যবিশ্লেষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, সুনীতিবান্ধব প্রশাসন নির্মাণ, গ্রামকৃষি উন্নয়নের ভিত্তিতে দারিদ্র্য নিরসন, বয়স্ক-বিধবা-দুস্থ নারী ভাতা, আশ্রয়ণ, গৃহায়ন ও খামারবাড়ির মতো আওয়ামী লীগ আমলের উদ্ভাবনী প্রকল্পসমূহ পুন-উদ্বোধন, সর্বজনীন কর্মসংস্থান নীতিমালা প্রণয়ন, জ্বালানি নিরাপত্তা, বিদু্যত উৎপাদন বৃদ্ধি ও পল্লী-বিদু্যতায়ন, যুদ্ধাপরাধীর দণ্ডবিধান, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার, মেধাভিত্তিক নিয়োগ-পদোন্নতি, স্থায়ী বেতন কমিশন গঠন, মজবুত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নীতি গ্রহণে সংসদ-নির্ভরতা, শিল্পায়নে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, পোশাক শিল্প ও টেক্সটাইল খাত সম্প্রসারণ, তাঁতশিল্প বিস্তার ও তাঁতী পুনর্বাসন, ২০১৩ সাল নাগাদ প্রবৃদ্ধি হার ১৩-তে উন্নীতকরণ, রেশনপ্রথা চালুকরণ, কৃষি উপকরণে ভতর্ুকি, শিা-বিজ্ঞান-তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ, ২০১০ সালের মধ্যে প্রাথমিক শিায় শতভাগ ভর্তি ও ২০১৪ সালের মধ্যে নিররতামুক্তি, নতুন শিানীতি প্রণয়ন, ১৮ হাজার কমিউনিটি কিনিক প্রতিষ্ঠা, আর্সেনিকমুক্ত সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন, ২০২১ সালের মধ্যে মানসম্পন্ন পুষ্টি যোগান, শিশুমৃতু্য হার হ্রাস, নারীর মতায়ন ও সমঅধিকার, জাতিসংঘ শিশুসনদ বাস্তবায়ন, ২০১১ সালের মধ্যে পরিবারপ্রতি ১ যুবকের কর্মসংস্থান গ্যারান্টি, সড়ক নেটওয়ার্কে গ্রাম-ইউনিয়ন-উপজেলা-জেলা সংযুক্তি, ঢাকা শহরে পরিবহন যানজট সমস্যা দূরীকরণ, সমুদ্র ও স্থলবন্দর আধুনিকায়ন, পদ্মা সেতু নির্মাণ, রেলপথ সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন, বাংলাদেশকে এশীয় হাইওয়ে ও এশীয় রেলওয়ের সঙ্গে সংযুক্তি, মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক আইন বাতিল, পার্বত্য শান্তিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন, বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব রোধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্যপ্রবাহ, সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে 'জাতীয় প্রতিরানীতি' প্রণয়ন, ভাষা-সংস্কৃতির ঐতিহ্য সংরণ, জঙ্গীবাদ নিমর্ূলকরণ, জবাবদিহিতার ব্যবস্থাপনায় এনজিও সেবার সুযোগ সম্প্রসারণ, সর্বধর্মীয় স্বার্থরা, সার্ক-বিমসটেকসহ আঞ্চলিক সহযোগিতা দৃঢ়করণ, বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্যভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতি প্রতিষ্ঠা।
পরিবেশগত বৈরিতা, আর্থিক সীমাবদ্ধতা ও অন্যান্য প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বর্তমান সরকার তার সাধ্য ও সামর্থ্যের অনুপাতে উপরোলি্লখিত অঙ্গীকারসমূহ গুরুত্বের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন শুরু করেছে। মন্ত্রী হিসেবে আমিও এ ঐতিহাসিক অগ্রাভিযানে স্বতঃস্ফূর্ততার সঙ্গে সক্রিয়।
জাতিসংঘ ঘোষিত ুধফফণভভধলব ঊণশণফমযবণর্ভ ঐমটফ্র (ুঊঐ) বা সহস্রাব্দ উন্নয়ন ল্যপুঞ্জে যেমন ২০১৫ সালের মধ্যে সময়-নির্দিষ্ট মৌল উদ্দেশ্যের আওতায় বিশেষ ল্যমাত্রা অর্জনের অভী্#৮৭৭৬;া প্রকাশিত, তেমনি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের রূপকল্প বা 'ভিশন ২০২১'-এও সুনির্দিষ্ট কতকগুলো অর্জন-সম্ভব অভিপে সনি্নবেশিত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকারের দৈশিক অনুধ্যানের পাশাপাশি বহির্মনস্কতার বিষয়টিও প্রতিপাদিত।
প্রযুক্তি-শিহরিত আধুনিক বিশ্বমণ্ডলে কম্পিউটার ব্যবস্থাপনা ছাড়া যুগছন্দের মুক্তগতি ধরতে না পারা স্বাভাবিক। তাই আকর্ষণীয় অভিনবত্বের হাতছানিতে ডিজিটাল প্রকল্প কাছে ডাকবে জাতির সবচেয়ে সৃজনশীল অংশ তরুণগোষ্ঠীকে। এতে অন্তভর্ুক্ত হতে পারে ই-গবর্নেন্স, ই-কমার্স, আইটি শিা, সাইবার ক্যাফে, হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার পার্ক ও কম্পিউটার ভিলেজ। যুবপ্রজন্মের গ্রহণশীল মস্তিষ্কে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নবীজ রোপণ করতে চাইলে প্রথমেই ডিজিটাল পরিবার, ডিজিটাল সমাজ ও ডিজিটাল গ্রামব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। জীবনের প্রতি েেত্র কম্পিউটার ব্যবস্থা কীভাবে সমস্যা নিরসনে যুক্ত হতে পারে সে প্রশিণের সূতিকাগার হিসেবে ডিজিটালাইজেশনের প্রশ্নটিকে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। তাই সরকারের প থেকে কম্পিউটার সংস্কৃতি বিকাশের উদ্দেশ্যে প্রযুক্তিব্যয় স্বল্পতর করার প্রচেষ্টা চলছে। তবে এেেত্র একটি কথা মনে রাখতে হবে তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পাশ্চাত্যের প্রযুক্তি-পর্যায় আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠার সময় এখনও আসেনি। চেষ্টা অব্যাহত থাকলে একদিন তাও অবশ্যই সম্ভবপর হবে।
লেখক : মাননীয় মন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

No comments

Powered by Blogger.