সবুজে ছেয়ে আছে মাঠ তবে কুয়াশায় শঙ্কিত কৃষক- সবজির ব্যাপক ফলন by সৈয়দ সোহরাব

বাংলার দিগনত্ম ছুঁয়ে থাকা মাঠ এখন ভরে আছে সর্ষে ফুলে। কাঁচা হলুদ রঙে রাঙানো শিশির ভেজা মাঠে ভোরের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে নির্মল দু্যতি। শুধু সর্ষেই নয়, শীতের সকল সবজিও গ্রামের শানত্ম সি্নগ্ধ প্রকৃতিকে রঙে রঙে রাঙিয়ে তুলেছে। কৃষকের বাড়ির উঠোনে পাকা (ধান) ফসলের প্রীতিকর স্মৃতি নিয়ে স্ফীত হয়ে উঠেছে খড়ের পালা।


মাটির কলস ভরা খেজুরের রস এসে জড়ো হচ্ছে উঠোনের কোনায়। নতুন চালের আটা তৈরি হচ্ছে গেরসত্ম বাড়ির ঢেঁকিতে। নাতিপুতি নিয়ে মেয়ে জামাই, দূরের আত্মীয়স্বজন আসবে। তাঁদের জন্য পিঠা পায়েস, নতুন ধানের চিড়া মুড়ির ব্যবস্থা করা তাই। আবার ধান সেদ্ধ শুকানোর তাড়া, জমিতে শীতের সবজির চাষ, তা ঘরে তুলে আনা ইত্যাদি কাজে ফুরসত নেই কৃষক-কৃষাণীর। তার ওপর শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশা শঙ্কিত করে তুলেছে কৃষকদের। কারণ, কঠিন পরিশ্রমের পর ঘরে উঠে আসা আনন্দ শেষ সময়ে যেন বিষাদে পরিণত না হয়।
দিন দিনই শৈত্যপ্রবাহ ও কুয়াশার মাত্রা বাড়ায় জমিতে এখন যে শস্য আছে তা নিয়ে চিনত্মিত হয়ে পড়েছে কৃষক-কৃষাণীরা। অনেকের ঘুম হচ্ছে না রাতে। কৃষকের এ উদ্বেগ শুধু ধান নিয়ে নয়, ধানের পাশাপাশি শীতের সবজি লাউ, কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম, গাজর, এমনকি ডাল, সরিষাতেও পড়বে এর প্রভাব।
এ প্রসঙ্গে সাভারের ভকুুর্তা গ্রামের কৃষক রমিজ বলেন, শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার যে লৰণ দেখা যাচ্ছে, তা যদি বেশিদিন অব্যাহত থাকে তাহলে আমর লাগানা সব সবজির ফলন কমে যাবে। বেশ ৰতি হয়ে যাবে আমার। তিনি আরও বলেন, আমার জমিতে আমি বাঁধাকপি, শালগম, গাজর ও লাউয়ের চাষ করছি। আমি ও আমার পরিবার দিনরাত খেটে চাষাবাদ করেছি। দেখেন (আমাকে দেখিয়ে বলে) ফলন কত ভাল হইছে। লক লক কইরা বাড়তেছে লাউ গাছ। কত লাউ ধরছে, এর চেয়ে বেশি ছাড়ছে লাউয়ের পুঁথি। বাঁধাকপি, শালগম, গাজরও হইছে বেশ ভাল। ফসলের দিকে তাকালে পরান (প্রাণ) জুড়াইয়া যায়। শুধু আমি না, ভাকুর্তা গ্রামের সব কৃষকই বছরের অধিকাংশ সময় সবজি চাষ করে। এবার সবার ফলনই ভাল হইছে। তবে শীত যেভাবে বাড়তেছে, যদি শৈত্যপ্রবাহ ও ঘনকুয়াশা শুরম্ন হয়ে যায়, তাহলে মাঠেমারা যাব আমরা। কৃষি অফিসের স্যারগো সঙ্গে কথা বলছিলাম, তাঁরা বলছে, এত চিনত্মা করবা না। পরিস্থিতি অতটা খারাপ হয় নাই। শীত বাড়তেছে, কুয়াশাও বাড়তেছে, তবে মাঝেমধ্যে সূর্যের আলোও দেখা যাচ্ছে। তাই চিনত্মা করতে না করছে। তবে তিনি (কৃষি অফিসার) আরও বলছেন, শীতের মাত্রা যেভাবে বাড়ছে যদি শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং সূর্যের আলো যদি দেখা না যায়, তাহলে ফলন খারাপ হবে। কারণ গাছগুলো সূর্যের আলো পর্যাপ্ত না পেলে, তারা খাদ্য তৈরি (সালেক সংশেস্নষণ প্রক্রিয়া) করতে পারবে না, তখন সবজির আকার ছোট হয়ে যাবে। এমনকি আকৃতিরও পরিবর্তন হতে পারে। তাই বেশ চিনত্মায় আছি। যদি ফলন খারাপ হয়, তাহলে অনেক ৰতি হয়ে যাবে। আর শীতটা যদি তাড়াতাড়ি চলে যায় এবং কুয়াশা যদি না থাকে, তাহলে যেভাবে জমিতে ফসল তনতনায়া উঠছে, এতে লাখ টাকা আয় হইব।
এদিকে গ্রামাঞ্চলের ঘরে ঘরে পিঠা-পায়েস খাওয়ার ধুম পড়েছে। নতুন চাল দিয়ে তৈরি পিঠা, আর খেজুরের রস দিয়ে তৈরি পায়েসের ম ম ঘ্রাণে গ্রামের বাড়িগুলোতে বইছে ভিন্ন আবেশ। অনেকে আবার পিঠা-পায়েস তৈরি করে শহরে থাকা ছেলেমেয়েদের বাসায় পাঠিয়ে দিচ্ছেন।

No comments

Powered by Blogger.