গ্রিন পিসের প্রতিবেদন-ভারতে বাঘের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে কয়লা খনি

বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা উত্তোলন ভারতীয় বাঘের অস্তিত্বের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। এ জন্য নতুন কয়লা খনির অনুমতি দেওয়া বন্ধ করা দরকার। গত বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিন পিস এ দাবি জানায়।
ভারত বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি বাঘের আবাসস্থল। এখানকার বনগুলোতে এক হাজার ৭০৬টি বাঘ আছে বলে জানা যায়।
গত পাঁচ বছরে ভারতে কয়লা খনির সংখ্যা ও কয়লানির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। কয়লা খনিগুলোর অবস্থান প্রায়ই সংরক্ষিত বনাঞ্চলে হওয়ায় এসব বনভূমিতে বসবাসরত অনেক বিরল প্রজাতির প্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে।
পরিস্থিতিকে 'কঠিন' অবহিত করে গ্রিন পিস বলেছে, কয়লা খনি ইতিমধ্যে অনেক এলাকায় বাঘের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে মহারাষ্ট্রের চন্দ্রপুর বনাঞ্চলের কথা উল্লেখ করেছে সংগঠনটি। কয়লা খনির কারণে এ বনের বাঘের আবাসস্থল মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে গ্রিন পিস। গ্রিন পিসের কর্মী আশিষ ফার্নান্দেজ বলেন, 'চন্দ্রপুর ছাড়াও কয়েকটি বনের অবস্থাও ইতিমধ্যে যথেষ্ট মারাত্মক হয়ে উঠেছে বা মারাত্মক হওয়ার পথে রয়েছে।'
চলতি সপ্তাহে ভারতে পর পর দুটি ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান অবলম্বন কয়লা উত্তোলন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করল গ্রিন পিস। আরো কয়লা উত্তোলনের অনুমতি দিয়ে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাতে ভারতীয় সরকারের ওপর চাপ আছে। দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতির পথে থাকা ভারতে বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে না পারলে অর্থনৈতিক উন্নতির গতি শ্লথ হয়ে পড়বে।
প্রসঙ্গত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম কয়লার মজুদ আছে ভারতে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পর সবচেয়ে বেশি কয়লা উত্তোলন করে দেশটি। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য খনিজ কয়লার ওপর দেশটি নির্ভরশীল।
গ্রিন পিসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাতে ভারত কয়লার ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকলে ইতিমধ্যে যেসব ধ্বংস সূচিত হয়েছে সেগুলো কয়েকগুণ বাড়বে।
ভারতের কেন্দ্রীয় রাজ্যগুলোর সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলোই এসবের প্রধান শিকারে পরিণত হবে। ভারতের মোট বাঘের ৩৫ শতাংশের বাস এসব বনাঞ্চলে আর কয়লার ৮০ শতাংশ মজুদ আছে এসব বনভূমিতে।
গত মাসে হুমকির মধ্যে থাকা বিড়াল জাতীয় প্রাণীদের জীবন রক্ষার্থে ভারতের ৪০টিরও বেশি বাঘের অভয়ারণ্যের 'কেন্দ্রীয় এলাকায়' পর্যটন নিষিদ্ধ করে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। কয়েক দশক ধরে চোরা শিকারিদের হাত থেকে বন্য প্রাণী রক্ষার জন্য লড়াই করছে ভারত সরকার। চোরা শিকারিরা বাঘ, গণ্ডারসহ বিভিন্ন প্রাণী হত্যা করে এগুলোর দেহের বিভিন্ন অংশ সীমান্তের বাইরে পাচার করে। এটি একটি রমরমা ব্যবসা। এর ফলে প্রাকৃতিক বনভূমির বিভিন্ন বৈচিত্র্য বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সূত্র : রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.