ছুটির দিনে ক্রেতার ঢল, গোটা রাজধানীই যেন মার্কেট - ঈদ বাজার- যানজটে দুর্ভোগ - ডলারের দাম, নানা ট্যাক্স ভ্যাটে এবার পণ্যমূল্য বেশি by এম শাহজাহান

পুরোদমে শুরু হয়েছে ঈদের কেনাকাটা। রমজানের দ্বিতীয় শুক্রবার সরকারী ছুটির এ দিনটি নগরবাসী উপভোগ করেছে ঈদের কেনাকাটা করে। ঘুরেছে এক মার্কেট থেকে আরেক মার্কেটে। মার্কেটগুলোর সামনে মানুষের উপচেপড়া ভিড়ে জনজটের দৃশ্য ছিল চোখে পড়ার মতো। ছিল যানজটের দুর্ভোগও।


ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে শুরু হয়েছে নানা অপরাধ। মার্কেটের ভিড়ের মধ্যে পকেট ও ব্যাগ থেকে অনায়াসে অনেকের টাকা ও মোবাইল ফোন সেট চুরি হয়ে যাচ্ছে। শপিং শেষে পরিবহন সঙ্কটের কারণে বেশির ভাগ ক্রেতাকে দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। রিকশা ও ট্যাক্সি ভাড়া তিনগুণ চারগুণ বেশি গুণতে হচ্ছে। তারপরও ঈদ বলে কথা। থেমে নেই ঈদের কেনাকাটা। কোথায় সাশ্রয়ী দামে ঈদের কেনাকাটা করা যায় তাও খুঁজে বেরিয়েছে নিম্নমধ্যবিত্তরা। কিন্তু ঈদ পণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় করতে পারছে না নির্দিষ্ট আয়ের সাধারণ মানুষ। ঈদ পণ্যের দাম বাড়ার কথা স্বীকার করলেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির মহাসচিব এসএ কাদের চৌধুরী কিরণ। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ঈদ সামনে রেখে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করা হয়েছে। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের পরিমাণ যথেষ্ট। ক্রেতাদের আর্থিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন মান ও ডিজাইনের পণ্য আমদানি ও উৎপাদন করা হয়েছে। কিন্তু পণ্য পর্যাপ্ত থাকলেও এ বছর পোশাকসহ যাবতীয় ঈদ পণ্য বাড়তি দামে কিনতে হবে। তিনি বলেন, ডলারের মূল্য বৃদ্ধিসহ বহির্বিশ্ব থেকে বেশি দাম নিয়ে পণ্য আনতে হচ্ছে। একই সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আমদানিকৃত পণ্যের ওপর একাধিক শুল্কারোপ করায় দাম বেড়ে গেছে। দাম বাড়ার যন্ত্রণা সর্বশেষ ভোক্তাকেই বহন করতে হচ্ছে। যদিও গত কয়েক বছরে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে।
তিনি বলেন, কোন কোন ক্ষেত্রে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ১৭২ শতাংশ পর্যন্ত ডিউটি আরোপ করা হচ্ছে। এ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স, রেগুলেটরি ট্যাক্স, সাপ্লিমেনটারি ডিউটি ও এ্যাডভান্স ট্রেড ভ্যাটসহ বিভিন্ন নামের ট্যাক্স কর্তন করার ফলে আমদানিকৃত পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া দোকান ভাড়া ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় অভ্যন্তরীণ খরচ অনেক বেড়ে গেছে। ফলে এ বছর পোশাকসহ যাবতীয় ঈদ পণ্যের দাম বাড়তির দিকে।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটের ক্রেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এবারের পোশাক ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়েছে। পীর ইয়ামেনি মার্কেটে মিরপুর থেকে পাঞ্জাবি কিনতে এসেছেন মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, গত বছর যে পাঞ্জাবি ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে এ বছর তা ৭০০ টাকায়ও দিচ্ছে না। এভাবে পাজামা, গেঞ্জি, টুপিসহ সব জিনিসের দাম দিগুণ বাড়ানো হয়েছে।
এছাড়া মহিলাদের শাড়ি, থ্রিপিস, লেহেঙ্গা, স্যান্ডেল, কসমেটিক্স, ইমিটেশনের গহনা ও পুরুষদের শার্ট-প্যান্ট ও টি-শার্টের দাম বেড়েছে। এ বছর ঈদের পোশাক গত বছরের বাজারমূল্য থেকে ২৫-৩০ শতাংশ বেড়েছে।
এ প্রসঙ্গে পাইকারি মাকের্ট হিসেবে খ্যাত পলওয়েল সুপার মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এ কাইয়ুম তালুকদার মণি জনকণ্ঠকে বলেন, আমদানিকৃত পণ্যের ওপর বিভিন্ন ধরনের শুল্কারোপ করার কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে। তারপরও এ বছর পর্যাপ্ত ঈদ পণ্য আমদানি হয়েছে। পলওয়েল মার্কেটের পাইকারি দোকানগুলোতে বেচাবিক্রি ভাল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আশা করছি শেষ মুহূর্তে খুচরা পর্যায়েও ভাল বিকিকিনি হবে।
এদিকে ঈদ পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ার কারণে নিম্ন মধ্যবিত্তদের বাজেট কাটছাঁট করতে হচ্ছে। এ নিয়ে অনেকের অসন্তুষ্টিও রয়েছে। মোহাম্মদপুর থেকে গাউছিয়ায় শপিং করতে এসেছেন ফারহানা রুমা। তিনি অনেকটা অভিযোগের সুরে জানালেন, ‘এ বছর পোশাকের দাম অনেক বেশি রাখা হচ্ছে। দোকানদারদের কাছে আমরা অসহায় হয়ে পড়ছি। পোশাকের দাম কমানো না হলে অনেককেই বাজেট কাটছাঁট করে ঈদ শপিং করতে হবে।’
সরেজমিনে রাজধানীর গাউছিয়া, চাঁদনী চক, নিউমার্কেট ও ধানম-ি হকার্স, বসুন্ধরা সিটি ও মিরপুর রোডের রাপা প্লাজা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি মার্কেটে ক্রেতার ঢল নেমেছে। অনেক মার্কেটে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। গোটা রাজধানী রূপ নিয়েছে ঈদ মার্কেটে।
ওদিকে গুলশান-বনানী, উত্তরা ও বারিধারার বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসও জমজমাট হয়ে উঠছে। পশ্চিমা বিশ্বের হাল আমলের অনেক ফ্যাশনের তৈরি পোশাক থরে থরে সাজানো হয়েছে দোকানগুলোতে। লাখ লাখ টাকা দামের ওই পোশাক কিনছেন বিত্তশালীরা। গাড়ি হাঁকিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে আসছেন শপিং করতে। ব্যবসায়ীদের মতে, বিত্তবানরা এখনও পুরোদমে কেনাকাটা শুরু করেননি। তাঁরা বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে সবচেয়ে ভাল জিনিসটি পছন্দ করে রাখছেন। কেনাকাটা শুরু হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এগুলো কিনে নেবেন। আবার কেউবা তৎক্ষণাৎ কিনে নিচ্ছেন তাঁর পছন্দসই পোশাকটি।
ঈদ মার্কেটের বেচাকেনায় পিছিয়ে নেই পাড়ামহল্লার বুটিক-বাটিক দোকানগুলোও। ইতোমধ্যে তারাও বাহারি কালেকশনের পোশাক নিয়ে হাজির হয়েছে। জমে উঠছে একেবারে খেটে খাওয়া সাধারণ নিম্নআয়ের মানুষের কেনাকাটার জায়গা ফুটপাথও।

No comments

Powered by Blogger.