অনিশ্চয়তায় কাওয়াদীঘি হাওরাঞ্চলের আমন ফসল

অনিশ্চয়তায় মৌলভীবাজারের কাওয়াদীঘি হাওর অঞ্চলের আমন ফসল। বৃষ্টি হলেই হাওর এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এরই মধ্যে বোনা আমন ফসল পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। পানি কিছুটা কমায় তলিয়ে যাওয়ার ভয় নিয়েই এখন কৃষকেরা রোপা আমন চাষ করছেন।


কাওয়াদীঘি হাওরের জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে কাশিমপুরে স্থাপিত পাম্প হাউস সময় মতো কাজ না করায় এই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এলাকাবাসী জানিয়েছে, কাওয়াদীঘি হাওর অঞ্চলে জলাবদ্ধতার কারণে আমন ফসল অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এক দিনের বৃষ্টিতে হাওরে চার-পাঁচ ফুট পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে হাওরের অনেক স্থানের তুলনামূলক নিচু এলাকার ফসলের খেত, রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। এ বছর কাওয়াদীঘি হাওরাঞ্চলে কয়েক দফা পানি বৃদ্ধি পেয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার একাটুনা, রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও, মুন্সীবাজার, ফতেহপুর ও মনসুরনগর ইউনিয়নের স্থানীয়ভাবে ‘কাতারি’ নাম পরিচিত বোনা আমন ফসল পানির নিচে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টি বন্ধ হলে পানি কিছু কমে। বৃষ্টি হলে আবার পানি বৃদ্ধি পেয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিহির কান্তি দাশ মঞ্জু গতকাল বৃহস্পতিবার (২ আগস্ট) প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক দিনে হাওরে চার-পাঁচ ফুট পানি হয়ে গেছে। পানি বাড়তে বাড়তে আমন ফসল শেষ। পানির নিচে সব চারা পচে নষ্ট হয়ে গেছে। অন্তত ৭০ শতাংশ আমন ফসল নষ্ট হয়েছে। মনু নদী প্রকল্প এখন কৃষকের মরণ প্রকল্প হয়ে গেছে। হাওরে ইচ্ছাকৃত জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।’ রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মইন উদ্দিন গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা হচ্ছে। বোনা আমন নষ্ট হয়ে গেছে। পানি কিছুটা কমেছে। অনিশ্চয়তার মধ্যেই এখন কৃষকরা রোপা আমন রোপণ করছে।’ কৃষি কর্মকর্তা জানান, বিলম্বিত জাত ব্রি-ধান ২২ ও ব্রি-ধান ২৩ রোপণ করতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক আবদুল জলিল মিয়া গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘হাওরে মাছ চাষের সাথে বড় বড় লোকজন জড়িত। তারা পানি ধরে রাখে। এ নিয়ে আলাপ হচ্ছে। এখনো আমন চাষের সময় আছে। দেখি কী করা যায়।’ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল বলেন, ‘পানি বের করার জন্য কয়েকটি রেগুলেটর ও পাম্প স্টেশন আছে। এগুলোতে সমস্যা ছিল। ঠিক করা হয়েছে। এখন সমস্যা নেই। আর মূলত বোরো ফসলের সময় পানি নিষ্কাশনের জন্য এই পাম্প স্টেশন স্থাপন করা হয়েছিল।’
নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, তার পরও পানি বের করার চেষ্টা হয়ে থাকে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে কয়েক বছর ধরে কুশিয়ারা নদীর পানি হাওরের পানি থেকে ওপরে থাকে। ফলে রেগুলেটর দিয়ে স্বাভাবিকভাবে পানি বের করা যায় না। অপরদিকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকে না। অনেক সময় লো-ভোল্টেজ থাকে। যেখানে প্রয়োজন দুই হাজার ৪০০ কিলোভোল্ট সেখানে থাকে দুই হাজার কিলোভোল্ট। এতে সব পাম্প চালানো যায় না।

No comments

Powered by Blogger.