রাবিতে ছাত্রলীগকর্মী খুন

পদ্মা সেতু নিয়ে চাঁদাবাজির এই পরিণতি কাম্য নয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আবারও এক মায়ের বুক খালি হলো। আবদুল্লাহ আল হাসান সোহেল নামের এক ছাত্রলীগকর্মী গত রবিবার রাতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন এবং সোমবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।


পত্রপত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের খবরে প্রকাশ, দুই গ্রুপের মধ্যে এবারের বিরোধ ও সংঘর্ষের কারণ ছিল, পদ্মা সেতু নিয়ে চাঁদা আদায়ের ব্যবস্থাপনা। ১২ জুলাই থেকে সেখানে শিক্ষক, কর্মচারী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা হচ্ছিল এবং উপাচার্য এম আবদুস সোবহান ৫০০ টাকা দিয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করেছিলেন। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, সেই অর্থ ঠিকভাবে জমা হচ্ছিল না এবং তা নিয়েই শুরু হয় বিবাদ। জীবন দিতে হয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সোহেলকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এভাবে চাঁদা আদায় কর্মসূচি চলছে বলে জানা গেছে। সেসব স্থানেও একই ধরনের পরিণতি অপেক্ষা করছে কি না, তা আমাদের জানা নেই। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, এখন হাটবাজারেও একটি বহুল আলোচিত বিষয় হচ্ছে পদ্মা সেতুর চাঁদাবাজি। ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। বর্ধিত দামের কারণ জানতে চাইলে বলা হচ্ছে, পথে পথে পদ্মা সেতুর জন্য চাঁদা দিতে হচ্ছে। অতএব দাম তো বাড়বেই। পত্রিকায় দেখা গেল, বিমানবন্দরেও এখন যাত্রীদের কাছ থেকে পদ্মা সেতুর নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। আদায় করা অর্থের মধ্যে কয় শতাংশ পদ্মা সেতুর তহবিলে যোগ হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। কিন্তু সংশয় নেই যে সরকারের এ উদ্যোগ সম্পর্কে জনমনে প্রবল বিতৃষ্ণার জন্ম দেবে। কাজেই বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের জরুরিভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন।
এদিকে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে পদ্মা সেতুর অর্থ সংগ্রহের জন্য সরকার দুটি ব্যাংক হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর একটি দেশীয় মুদ্রার, অন্যটি হবে বিদেশি মুদ্রার। আমরা মনে করি, সেটিই হচ্ছে সঠিক পদক্ষেপ। স্বেচ্ছায় যাঁরা পদ্মা সেতুতে অবদান রাখতে চান, তাঁরা সেই হিসাবে অর্থ জমা করে দেবেন। ছাত্রলীগ, যুবলীগ কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন এ দায়িত্ব নিলে তা কেবল নানা ধরনের অঘটনই ঘটাবে। জনমনে পদ্মা সেতুর উদ্যোগ এবং এর ইতিবাচকতা সম্পর্কে কেবল ভুল ধারণা জন্মাবে। সংশয়, সন্দেহ ও সমালোচনা বাড়বে। উদ্যোগের স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় প্রাথমিকভাবে আট ছাত্রলীগকর্মী বহিষ্কার এবং পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা পর্যন্ত পদক্ষেপ ঠিকই আছে। কিন্তু অতীতের মতো সব কিছু এখানেই থেমে গেলে তা দেশবাসীকে আরো বেশি হতাশ করবে। হলে তল্লাশি চালিয়ে কিছু লাঠি ছাড়া কোনো মারাত্মক অস্ত্র বা আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া যায়নি। অথচ প্রায়ই ক্যাম্পাসে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। তাহলে এই আগ্নেয়াস্ত্র কোথা থেকে আসে এবং কোথায় যায়? ক্যাম্পাসে থাকা পুলিশ সদস্যরা কী পাহারা দেন? গোয়েন্দা সংস্থা কী করে? প্রশাসনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের মদদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এটি সত্য হলে তা হবে জাতির জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা সোহেল হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমরা আশা করি, সরকার দ্রুত এমন ব্যবস্থা নেবে, যাতে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কোনো সোহেলকে প্রাণ দিতে না হয়।

No comments

Powered by Blogger.