আমি কি ভাবছি-আবার তোরা মানুষ হ

খবরের কাগজ পড়তে পড়তে হঠাৎ একটি খবর চোখে পড়ল। ‘একজন স্কুলপড়ুয়া ছাত্রীকে বখাটে নৃশংসভাবে কুপিয়েছে’। সংবাদটা পড়ে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। এ মেয়েটি যে আমার শহর যশোরের। মেয়েটির নাম মোমেনা খাতুন। তিন ভাইবোনের মধ্যে সে সবচেয়ে ছোট। দশম শ্রেণীতে পড়ে।


স্বপ্ন তার বড় হয়ে চিকিৎসক হবে। মেধাবী এই ছাত্রীকে প্রায় প্রতিদিনই স্কুল থেকে আসার পথে কিছু বখাটে ছেলে উত্ত্যক্ত করত। হঠাৎ করে একদিন এক বখাটে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। এই প্রস্তাবে মোমেনা সাড়া দেয়নি। আর এটাই বুঝি ওর বড় দোষ হয়ে গেল। বখাটের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে তাকে নৃশংসভাবে কুপিয়েছিল।
পত্রিকায় খবরটি পড়ার পর আমরা অর্থাৎ যশোর বন্ধুসভার বন্ধুরা ঠিক করলাম মানববন্ধন করব। কারণ, এভাবে চুপ থাকলে ঘটনাটি শুধু খবরের কাগজ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে। মানববন্ধনের দিন সত্যিই অবাক হয়েছিলাম। বিপুলসংখ্যক মানুষ এসে দাঁড়িয়েছিল আমাদের সঙ্গে। নানা সংগঠন থেকে মানুষেরা আমাদের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন। সেদিন যেন আশার আলো দেখেছিলাম। আমাদের যশোর বন্ধুসভার উদ্যোগে ল্যাবএইড হাসপাতাল সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় মোমেনার জন্য। যশোর প্রেসক্লাবে একটি ছোট্ট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মোমেনার হাতে তুলে দেওয়া হয় এক লাখ টাকা।
সামান্য হলেও তাকে সাহায্য করতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছিল। কিন্তু সেদিন যখন মোমেনাকে দেখলাম, মনের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠল। মেয়েটা তার বাঁ হাতের দুটি আঙুল হারিয়েছে। মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন। তবে ঘটনাস্থলে থাকা মোমেনার সহপাঠীর কাছ থেকে সেদিনের ঘটনা জানতে পেরে সত্যিই অবাক হয়েছিলাম। যখন বখাটে মোমেনাকে আঘাত করতে আসে, সে সময় ওর সহপাঠীরা সাহায্য চাইছিল রাস্তার পথচারীদের। কিন্তু কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি। আমরা এমন সমাজে বসবাস করছি, যেখানে মানুষ থেকেও নেই। যদি ওই সময় পথচারীরা সাহায্যে এগিয়ে আসত, তাহলে হয়তো মোমেনার এমন অবস্থা হতো না।
মোমেনা মেধাবী, ক্লাসে তার অবস্থান দ্বিতীয়। স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়ার। এই স্বপ্নগুলো কি পূরণ হবে? সে কি পারবে তার হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে? আমরা আশা করি, সে ফিরে পাবে তার আত্মবিশ্বাস, সে আবারও পারবে তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে। ওর স্বপ্ন পূরণ করতে যদি আমরা ওর পাশে এসে দাঁড়াই, ওকে একটু সাহস জোগাই, তাহলে শুধু মোমেনা কেন, মোমেনার মতো হাজারো মেয়ে পারবে ইভ টিজিং নামের এই সন্ত্রাস প্রতিরোধ করতে। মানুষেরাই পারবে অমানুষদের রুখতে।
আফসারা আলভী, যশোর

No comments

Powered by Blogger.