র‌্যাবের মাদক মামলা-৭৯ বছর জেল ইয়াবা সম্রাট আমিন হুদার

ইয়াবা তৈরি ও বিক্রির অভিযোগে দায়ের করা পৃথক দুটি মামলায় ইয়াবা সম্রাটখ্যাত আমিন হুদা ও তার প্রতিষ্ঠানের এক কর্মচারীকে ৭৯ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সাজাপ্রাপ্ত কর্মচারী হলো আমিন হুদার সহযোগী আহসানুল হক ওরফে হাসান।


গতকাল রবিবার ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোতাহার হোসেন এ রায় দেন। এ দেশে কোনো মাদক মামলায় এটিই সর্বোচ্চ সাজার নজির। আমিন হুদা আলোচিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ভাগ্নে।
উভয় আসামিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের পৃথক ছয়টি ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে বিভিন্ন মেয়াদে সর্বমোট ৭৯ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া উভয়কে সশ্রম কারাদণ্ডের অতিরিক্ত সাত কোটি ৫৫ লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়। পাশাপাশি জরিমানা অনাদায়ে আরো ছয় বছর অতিরিক্ত সশ্রম কারাদণ্ড প্রদানেরও নির্দেশ দেন বিচারক। তবে বিচারক জানান, দুটি মামলার একসঙ্গে রায় এবং শাস্তি একসঙ্গে কার্যকর হওয়ায় প্রতিটি মামলায় আইন অনুযায়ী উভয়কে সর্বোচ্চ ১৪ বছর করে সাজা ভোগ করতে হবে। মামলা-সংশ্লিষ্ট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এস এম রফিকুল ইসলাম সরকার বলেন, এ রায় দৃষ্টান্তমূলক। এ দেশে কোনো মাদক মামলায় এটিই সর্বোচ্চ শাস্তির নজির।
রফিকুল ইসলাম জানান, এর আগে গত ১ জুলাই যুক্তিতর্ক শেষে ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোতাহার হোসেন ইয়াবা ব্যবসায়ী আমিন হুদা ও তার সহকারী আহসানুল হক ওরফে হাসানকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। গতকাল রায়ের সময় আমিন হুদা ও তার সহযোগীকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। তিনি জানান, ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দুটি মামলায় আমিন হুদা ও তার সহযোগী হাসানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। বিচার চলাকালে দুটি মামলার একটিতে ৩০ সাক্ষীর মধ্যে ২৫ জন ও অপর মামলার ২৪ সাক্ষীর ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন কারাভোগের পর ২০০৯ সালের শেষের দিকে মুক্তি পায় আমিন হুদা। গত ১ জুলাই মামলার যুক্তিতর্ক শেষে তাকে আবার কারাগারে নেওয়া হয়। তবে তার কারামুক্তির আগেই ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসের দিকে নিম্ন আদালতে দুই মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এরপর চলতি বছরের প্রথম দিকে হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করলে মামলার কার্যক্রম আবার শুরু হয়।
প্রসঙ্গত, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ২৫ অক্টোবর গুলশানের দুটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আমিন হুদা ও তার সহযোগী আহসানুল হক হাসানকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ওইদিন তাদের হেফাজত থেকে ৪২ ধরনের ১৩৮ বোতল বিদেশি মদ, এক লাখ ৩০ হাজার আইস পিল (ইয়াবার বিকল্প), ভায়াগ্রা ট্যাবলেট, নিষিদ্ধ ওষুধ তৈরির সরঞ্জাম, ফেনসিডিল, বিভিন্ন দেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও ১২টি মোবাইল ফোনসেট উদ্ধার করা হয়। পরে ২৬ অক্টোবর তাদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি মামলা করা হয়। ওই বছরের ২৭ নভেম্বর র‌্যাবের উপপরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম আদালতে ৩ ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দুই মামলার একটিতে ২০০৮ সালের ১৬ জানুয়ারি এবং অন্যটিতে ৩০ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.