টিকাদান কর্মসূচি-স্বাস্থ্যোজ্জ্বল বাংলাদেশের প্রেরণা হোক

স্বাস্থ্যবান শিশুই স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যৎ_ সারাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী ১ কোটি ৯০ লাখ শিশুকে ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানো কর্মসূচির উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ বক্তব্যে দ্বিমতের অবকাশ নেই। এও স্বীকার করতে হবে, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশ্বব্যাপী গৃহীত এ ধরনের কর্মসূচিতে বাংলাদেশে সাফল্য উল্লেখযোগ্য।


এটা প্রতিষ্ঠিত যে, শিশুদের রাতকানা রোগ রোধ ও অন্যান্য সংক্রমণ কমাতে ভিটামিন-এ কর্মসূচি কার্যকর ভূমিকা রেখে চলছে। দুই দশক আগেও যেখানে শিশুর রাতকানার হার ছিল প্রায় সাড়ে তিন শতাংশ, বর্তমানে তা শূন্য দশমিক শূন্য দুই শতাংশে নেমে এসেছে। প্রাণঘাতী ছয়টি রোগের টিকা প্রদান কর্মসূচির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ একটি সাফল্যের নাম। বিশেষ করে পোলিও পরিস্থিতি। গত পাঁচ বছরে দেশে পোলিও রোগী পাওয়া যায়নি বলে বিশেষজ্ঞরা যে দাবি করে থাকেন, তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। আমরা দেখছি, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার সবচেয়ে কম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আবাসিক প্রতিনিধি সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের কাছে সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন, টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের মতো সাফল্য অন্যান্য সূচকে এগিয়ে থাকা থাইল্যান্ডেও অর্জন সম্ভব হয়নি। সরকারি উদ্যোগে শিশুদের ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর প্রথম কিস্তির সাফল্য কামনা করছি আমরা। এবারের কর্মসূচিতে ভিটামিন-এ ক্যাপসুলের সঙ্গে কৃমিনাশক ট্যাবলেট দেওয়ার কারণে শিশুদের অপুষ্টিও কমে আসবে বলে প্রত্যাশা। একই সঙ্গে টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে ইতিমধ্যে যেসব প্রশ্ন উঠেছে, তা নিরসনে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানাই আমরা। ইপিআই (এক্সপান্ডেড প্রোগ্রাম অন ইম্যুনাইজেশন) কাভারেজ মূল্যায়ন জরিপে জানা যাচ্ছে, উপকূলীয় অঞ্চল ও চরসহ দুর্গম এলাকায় টিকাদান কর্মসূচি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। যে কারণে দেশে গড়ে ২০ শতাংশ শিশু এই কর্মসূচি থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। আবার কর্মসূচির আওতায় থেকেও একটি বা দুটি টিকা নেওয়ার পর বাদপড়া শিশুর সংখ্যাও ৬ শতাংশ। ঢাকাসহ শহরাঞ্চলে সময় মেনে শিশুকে টিকা দেওয়ার হার কম বলে ওই জরিপে দেখা যাচ্ছে। শহরাঞ্চলের অভিভাবকদের অনেকে যেমন সময় হওয়ার আগেই, তেমনি নির্ধারিত সময়ের পর শিশুকে টিকা দেন। আমরা মনে করি, অভিভাবকসহ সবাই আন্তরিক হলে এসব বাধা অতিক্রম করা কঠিন নয়। বিশেষ করে সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও উন্নয়ন সংগঠনগুলো দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসতে পারে। শিশুদের টিকাদান কিংবা ভিটামিন খাওয়ানো কর্মসূচি যে সাফল্য অর্জন করেছে, সে জন্য সংশ্লিষ্টরা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখেন। কিন্তু শতভাগ সাফল্য যেখানে অর্জন করা সম্ভব, সেখানে অবহেলার সুযোগ নেই। স্বাস্থ্যবান ও রোগমুক্ত জাতি গঠনে এর বিকল্পও নেই। নীতিনির্ধারকদের আমরা এও ভেবে দেখার আহ্বান জানাই, টিকাদান ও ভিটামিন খাওয়ানো কর্মসূচির সাফল্য সত্ত্বেও জন্মনিয়ন্ত্রণমূলক কার্যক্রম কেন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না। সামগ্রিক স্বাস্থ্যচিত্রের ক্ষেত্রেও একই প্রশ্ন উঠতে পারে। বিলম্বে হলেও এসব বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে চিন্তা-ভাবনা করা হোক। টিকাদান ও ভিটামিন খাওয়ানো কর্মসূচির প্রেরণাকে কাজে লাগিয়ে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব বলে আমরা বিশ্বাস করি।
 

No comments

Powered by Blogger.