এভারেস্ট জয়ের পর by আনোয়ার হোসেন

এমএ মুহিতের এভারেস্ট শৃঙ্গ জয়ের খবর নিয়ে আলোচনা চলছিল এক আড্ডায়। সেখানে সবজান্তা ধরনের একজন বললেন, হিলারি ও তেনজিং মে মাসে এভারেস্ট শৃঙ্গে উঠেছিলেন। বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্টজয়ী মুসা ইব্রাহীম এ সাফল্য পেয়েছিলেন মে মাসে।


এমএ মুহিতও এ মাসেই হিমালয় পর্বতমালার চূড়ায় উঠলেন। অতএব, অলৌকিকত্ব আরোপ করা যেতেই পারে। জয় হোক মে মাসের!
তবে সবাই কি আর এমন মে-মাহাত্ম্য মানতে চায়? জ্ঞানরাজ্যে নিজের বিচরণের বিষয়টি অবগত করানোর জন্যই একজন বলে উঠলেন, এভারেস্টে যত লোক আরোহণ করেছে বা করার চেষ্টা করেছে তার বেশিরভাগই ঘটেছে মে মাসে।
কেন মে মাসে এ অভিযান ঘটে? শীতে এভারেস্ট পর্বতমালা বরফে ঢাকা থাকে। পর্বতচূড়া তো দূরের কথা, তার ধারেকাছেও এ সময়ে যাওয়ার কথা ভাবা যায় না। মে মাসের শুরুর দিকে বরফের দাপট কমতে থাকে, তবে শীত থেকেই যায়। আবার জুনে শুরু হয় মৌসুমি বায়ু। তখনও ওপরে ওঠায় সমস্যা। অতএব, মে মাসের জয়জয়কার। যারা এর মধ্যে অলৌকিকতা খুঁজতে যায় তারা হয় অজ্ঞ অথবা কুসংস্কার জিইয়ে রাখতে চায় সচেতনভাবে।
এভারেস্ট জয়ের দৌড়ে বাংলাদেশ শামিল হয়েছে অনেক পরে। এ পর্যন্ত সাড়ে চার হাজারের বেশি সাহসী নারী-পুরুষ-কিশোর এ শৃঙ্গে আরোহণ করেছেন। এ চেষ্টা করতে গিয়ে মৃত্যু ঘটেছে অন্তত দুইশ' লোকের। সুখবর যে, এ অভিযানে গিয়ে এখন পর্যন্ত আমাদের কেউ বড় ধরনের বিপদে পড়েনি।
মুসা ইব্রাহীম দেশে বিপুল সংবর্ধনা পেয়েছিলেন। এমএ মুহিতও পাবেন। তবে হৈচৈ হয়তো একটু কম হবে। তাতে দুঃসাহসী অভিযানের কৃতিত্ব ম্লান হবে না। রোববার দেশে ফিরে তিনি বিমানবন্দরে কথা বলেছেন সাংবাদিক ও নিকটজনদের সঙ্গে। এর কিছু কিছু এসেছে সংবাদপত্রে। তার সংকল্প ধূমপান ও মাদকের নেশা থেকে যুবসমাজকে মুক্ত করার। এ ধরনের মনোভাব প্রশংসনীয়। যাদের দেখে সব বয়সের মানুষ অনুপ্রাণিত হয় তারা সামাজিক কর্মকাণ্ডে উদ্যোগী হলে সুফল মেলে বেশি।
এভারেস্টজয়ী এমএ মুহিত অবশ্য হিমালয় থেকে সুন্দরবনের দেশে নেমে এসে একটি বিষয়ে কষ্ট পেয়েছেন : আমাদের ক্ষমতাসীন বা বিরোধীদলীয় প্রধান রাজনীতিবিদদের কেউ তাকে অভিনন্দন জানাননি। এমনকি যোগাযোগও করেননি। এতে কষ্ট পাওয়া স্বাভাবিক। তাকে দিয়ে যদি দলীয় স্বার্থ হাসিলের বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা থাকে তাহলে অবশ্যই তারা যোগাযোগ করবেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারেন।
এ যোগাযোগ না করার পরও কিন্তু বলা চলে, 'আমাদের সবকিছুই ভালো। শুধু রাজনীতিটাই ভালো নয়। অভদ্র রাজনীতি চলছে। সুস্থ রাজনীতি থাকলে দেশের অনেক উন্নতি হতো।'
এমএ মুহিতের এ মন্তব্যে যন্ত্রণা ও হতাশার ছাপ স্পষ্ট। রাজনীতিকদের আচরণ বড়ই অদ্ভুত। ক্ষমতায় থেকে বৃহত্তর স্বার্থ ভুলে যাওয়ার ঘটনা তাদের অনেকের ক্ষেত্রে ঘটে। তবে ঢালাওভাবে রাজনীতিকে দোষারোপ করা চলে না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য অনেক রাজনীতিক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। অনেকের জীবন গেছে। দেশ পরিচালনার কাজ গত চার দশকে যথাযথভাবে হয়নি। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতার চার দশকের মধ্যে প্রায় ১৫ বছর দেশ ছিল দু'জন সেনাশাসকের অধীনে। রাজনীতিতে ক্যান্টনমেন্টের প্রভাবও বরাবরই ছিল। রাজনীতিকদের তারা নানাভাবে হেয় করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু একটু খোঁজখবর করলেই এভারেস্টজয়ী এমএ মুহিত বুঝতে পারবেন, ক্ষমতাকে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থে ব্যবহার করতে সেনাবাহিনীর ব্যক্তিরা রাজনীতিকদের চেয়েও এককাঠি সরেস। রাজনীতিকদের ক্ষমতায় আসতে হলে ভোটারদের কাছে যেতে হয়। কিন্তু ডাণ্ডার জোরে যারা গদিতে বসেন তাদের এসবের বালাই থাকে না। রাজনীতিকদের সমালোচনা করুন, কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, রাজনীতির দরকার আছে।
 

No comments

Powered by Blogger.