ইলিয়াস আলী নিখোঁজ রহস্য-হতাশায় ডুবে আছে ইলিয়াস-পরিবার by এস এম আজাদ

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হয়েছেন প্রায় তিন মাস। কিন্তু এখনো তাঁর 'নিখোঁজ রহস্য' উদঘাটিত হয়নি। ৮৮ দিনেও দেশব্যাপী আলোচিত এ ঘটনায় কোনো মামলা দায়ের হয়নি। মামলা না হওয়ার ব্যাপারে ইলিয়াস পরিবার ও পুলিশ একে অন্য পক্ষকে দোষারোপ করছে।


স্বজনরা দাবি করছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাটির কার্যকর তদন্তই করেনি। বর্তমানে নেই তদন্ত কার্যক্রম। থানায় মামলার ব্যাপারেও তাঁদের কখনোই বলেনি পুলিশ। অন্যদিকে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এ ঘটনায় মামলা না হলেও বিভিন্নভাবে তদন্ত চলছে। তাঁর পরিবারের কেউ মামলা করতে চাইছে না। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পুলিশের পক্ষ থেকেই মামলা দায়েরের ব্যাপারে ভাবছে।
ইলিয়াস নিখোঁজ হওয়ার পর পরিবার এবং বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তাঁকে গুম করা হয়েছে। তিন মাসেও ইলিয়াসের কোনো খোঁজ না পেয়ে স্বজনরা এখন দিশেহারা। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পর ভরসা করছেন বলে জানালেও এখন হতাশা প্রকাশ করেছেন ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। অসুস্থ লুনা বেশির ভাগ সময় জায়নামাজে বসে তসবিহ হাতে আল্লাহকে ডাকেন আর কোরআন তিলাওয়াত করে স্বামীকে ফেরত চান। গতকাল শনিবার তাহসিনা রুশদীর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আর কত দিন দেখব? কোনো কিছু হলো না। প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিলেন, ভেবেছিলাম তিনি আমার স্বামীকে খুঁজে বের করবেন। কিছু হলো না। এখন আল্লাহকে ডাকা ছাড়া আমাদের কী করার আছে?' কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, 'গুম হোক, গ্রেপ্তার হোক, অপহরণ হোক, যা-ই হোক আমরা কেন জানতে পারব না?'
তাহসিনা রুশদীরের বোন দিনারা শারমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁর বোন এখন আগের চেয়ে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। রক্তচাপের সমস্যাটা বেড়েছে। অনিদ্রায় রাত জেগে বসে থাকেন লুনা। খাওয়া কমে যাওয়ায় শুকিয়ে গেছেন তিনি। সারাক্ষণ নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত ও তসবিহ জপেন তিনি। আড়ালে গিয়ে কাঁদেন। সন্তানরাও ভালো নেই। আগামী বুধবার ইলিয়াস আলীর বড় ছেলে আবরার ইলিয়াস অর্ণবের এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হওয়ার কথা। ফল প্রকাশ হওয়া নিয়ে তার কোনো আগ্রহ নেই। অর্ণব এবার নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। আট বছরের সাইয়ারা নাওয়াল ইলিয়াস আলীর একমাত্র মেয়ে। ছোট ছেলে লাবিব শারার রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে দশম শ্রেণীতে পড়ে। এ তিন সন্তানকে নিয়ে হতাশায় কাটছে লুনার সময়।
ইলিয়াস আলীর বনানীর ২/১ নম্বর রোডের বাড়িতে (সিলেট হাউস) এখন সুনসান নীরবতা। আগের মতো খোঁজ রাখছে না লোকজন। বাড়ির ফটকে পুলিশ সিসি ক্যামেরা বসিয়ে মনিটরিং করছে। তবে পুলিশ বা র‌্যাবের পক্ষ থেকে গত এক মাসে যোগাযোগ করা হয়নি বলে জানান তাহসিনা রুশদীর লুনা।
লুনা বলেন, পুলিশ ঘটনার তদন্ত ঠিকভাবে করছে না। ইলিয়াস আলী কোন এলাকা থেকে নিখোঁজ হলেন, তার কোনো ব্যাখ্যাই নেই পুলিশের কাছে। ইলিয়াস নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা না হওয়ার ব্যাপারে লুনা বলেন, 'এ ঘটনার তদন্তে কি মামলা হওয়ার প্রয়োজন আছে। আমি বনানী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলাম। পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থা আমাকে মামলা করার কথা বলেনি।'
বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাঈনুল ইসলাম বলেন, ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় তিনি প্রতি মাসে আদালতকে লিখিতভাবে জানান। এর বাইরে কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না। বনানী থানার ওসি হাসান মাহবুব ভুঁইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ঘটনাটির তদন্ত চলছে। তদন্তের অগ্রগতিও আদালতকে জানানো হয়। পরিবার মামলা করতে চাইছে না। পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করতে পারে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভাবছে।'
গত ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে রাজধানীর মহাখালী এলাকা থেকে এম ইলিয়াস আলীর গাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। এর পর থেকে পাওয়া যাচ্ছে না ইলিয়াস ও তাঁর গাড়িচালক আনসারকে। ইলিয়াসকে গুম করা হয়েছে- এমন অভিযোগ করে দুই দফায় পাঁচ দিন সারা দেশে হরতাল করে বিএনপি। গত ২ মে ছেলেমেয়েদের নিয়ে গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন ইলিয়াসের স্ত্রী লুনা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'তিনি (শেখ হাসিনা) আমার স্বামীকে উদ্ধারে সর্বপ্রকার চেষ্টা করবেন।'

No comments

Powered by Blogger.