কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া রেলপথ-কাদার ওপর রেললাইন by পান্না বালা

কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্পের ৮৫৭ কোটি টাকার কাজে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোয়া ও বালুর মিশ্রণ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা সংস্কার করার পর এর ওপর রেললাইনের পাত ও স্লিপার বসানোর কথা।


কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন রাস্তা সংস্কার না করেই কাদামাটির ওপর স্লিপার ও রেলের পাত বসিয়েছেন। এতে এই লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে এলাকাবাসী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
পুনর্বাসন কাজের অনিয়মের প্রতিবাদে এলাকাবাসী গত বুধবার ৫১ সদস্যের ‘কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া রেলের কাজের অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধে নাগরিক কমিটি’ গঠন করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৩৫ সালে স্থাপিত ৭৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রেলপথটি ১৯৯৩ সালে পরিত্যক্ত এবং ১৯৯৭ সালে বাতিল ঘোষণা করা হয়। ১৪ বছর ধরে রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার মানুষ অনেক আন্দোলন করার পর রেলপথটি পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এখন এই পথটি গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া থেকে বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এই রেলপথের উন্নয়নের জন্য বর্তমানে দুটি পর্যায়ে পুনর্বাসন ও নির্মাণ প্রকল্পে মোট ১১ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে পুনর্বাসন প্রকল্পের ৮৫৭ কোটি টাকার কাজ পায় ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কল্পতরু। গত বছরের মে মাসে এ কাজ শুরু হয়। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে কাজ শেষ হওয়ার কথা।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, দরপত্র অনুযায়ী ৭৫ কিলোমিটার রেলপথ পুনর্বাসনের কাজে প্রথমে পুরোনো লাইনের ক্ষতিগ্রস্ত ৬৫ কিলোমিটার সংস্কার করার কথা। সে অনুযায়ী ৬৫ শতাংশ খোয়া ও ৩৫ শতাংশ বালুর মিশ্রণ দিয়ে ছয় ইঞ্চি উঁচু মেকাডাম করার পর রোলার দিয়ে তা সমান (কম্পাকশন) করার কথা। এ কাজ শেষ হওয়ার পর রাস্তার ওপর স্লিপার ও লাইনের লোহার পাত বসানোর কথা। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরা তা না করে আগের পরিত্যক্ত রাস্তার ওপর স্লিপার বসান। ইতিমধ্যে রাজবাড়ীর কালুখালী থেকে মধুখালীর ঘোড়াঘাট পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার অংশে স্লিপার বসানো হয়েছে। অভিযোগ ওঠার পর এখন এই অংশের স্লিপার ও পাত উঁচু করে বালু ও খোয়ার মিশ্রণ ঢোকানো হচ্ছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কল্পতরুর তত্ত্বাবধায়ক রাজেশ দাবি করেন, ‘কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি। আমাদের প্রতিষ্ঠান শিডিউল অনুযায়ী কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া রেলপথের কাজ করছে।’
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে মধুখালী রেলস্টেশনসংলগ্ন এলাকায় দেখা যায়, সেখানে কিছু শ্রমিক খোয়ার সঙ্গে বালু মেশাচ্ছেন। কয়েকজন সেই মিশ্রণ রেললাইনের পাশে আনার কাজ করছেন। কিছু শ্রমিক রেলের পাতের নিচে জ্যাকলেবার (উঁচু করার যন্ত্র) স্থাপন করে রেলের পাত উঁচু করছেন। পরে স্লিপার ও পাতের নিচে বালু ও খোয়ার মিশ্রণের মেকাডাম ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। ওই কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের সর্দার বাদশা খান বলেন, ‘বুধবার থেকে আমরা স্লিপারের নিচে ছয় ইঞ্চি উঁচু করে বালু ও খোয়ার মিশ্রণের মেকাডাম দিচ্ছি।’
এ কাজ তদারকি করছেন ঠিকাদারের প্রতিনিধি সোবাহান বিশ্বাস। তিনি দাবি করেন, আগের ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেকাডাম ও কম্পাকশন করে ঠিক করার পর ওই পথ দিয়ে প্রচুর ট্রাক চলাচল করেছিল। এতে ওই রাস্তায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। ফলে রাস্তার ফিটনেস নষ্ট হয়ে যায়। ওই স্থানে স্লিপার ফেলার পর দেখা যায়, সেগুলো কাদার নিচে তলিয়ে গেছে।
পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজের তদারকি দায়িত্ব পাওয়া রেলওয়ের কুষ্টিয়া কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মিহির কুমার ঘোষ জানান, বালু ও খোয়া দিয়ে মেকাডাম ও কম্পাকশন না করেই স্লিপার বসানো হয়েছে। বিষয়টি জেনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাজ পর্যবেক্ষণ ও তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.