এটা মোটেই কাম্য নয়! এ তথ্য বেরিয়ে আসার আগেই তাঁদের পদত্যাগ করা উচিত ছিল by ড. শাহ্দীন মালিক

সংবিধান বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক স্কুল অব ল'র পরিচালকসংসদের কার্যপ্রণালি বিধি সংবিধানের একটি অংশ। সংবিধানের ৭৫(১)ক অনুচ্ছেদে বলা আছে, 'সংসদ কর্তৃক প্রণীত কার্যপ্রণালী বিধি দ্বারা এবং অনুরূপ বিধি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রণীত কার্যপ্রণালী বিধি দ্বারা সংসদের কার্যপ্রণালী নিয়ন্ত্রিত হইবে।' অন্যদিকে সংবিধানের ৭৬(১) গ-তে বলা হয়েছে, 'সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে নির্দিষ্ট সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে অন্যান্য স্থায়ী কমিটি গঠিত হইবে।'


কিন্তু সেই কার্যপ্রণালি ভঙ্গ করে সংসদীয় কমিটিতে বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট কমিটিতে রয়েছেন। গায়ের চামড়ার রং, ধর্ম, গোত্র ইত্যাকার সব উদ্ভট মাপকাঠিতে মানুষকে বিচার করার প্রায় তিন হাজার বছরের মানবজাতির লিখিত আইনের যে ইতিহাস, তা থেকে সম্পূর্ণভাবে সুস্পষ্টভাবে সরে এসে এখন যেসব মাপকাঠিকে আমরা মনুষ্যত্বের মাপকাঠি বলি, তার প্রথম দিককার বা সূচনালগ্নের পূর্ণ সংবিধান আমাদের বাংলাদেশের সংবিধান। এই সংবিধানবিরোধী কাজ এত বেড়ে গেছে যে, সংসদ সদস্যরাও এখন এর জন্য দায়ী। স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটিতে থাকা সংসদ সদস্যদের বাদ নিয়ে কমিটিগুলো পুনর্গঠিত করে সরকার তাদের গণতান্ত্রিক মনোভাবের পরিচয় দিতে পারত। কিন্তু সরকার তা করেনি। কিন্তু সরকার করেনি বলে নিজ ইচ্ছায় ওই সব সদস্য পদত্যাগ করতে পারতেন। তাও তাঁরা করেননি। দূরে না গিয়ে আশপাশের দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর দিকে তাকালে আমরা সহজেই দেখব, নেপালে এখন কোনো সংবিধান নেই। শ্রীলঙ্কার সংবিধানে রাষ্ট্রপতির যে ভীষণ ক্ষমতা, তাতে ভুটানের রাজাও লজ্জা পেতে পারেন। ভুটানে রাজতন্ত্র, অতএব সংবিধান নিয়ে মাথাব্যথা কম। পাকিস্তানের সংবিধানে যা-ই থাকুক না কেন, দেশ তো আসলে চালায় সেনাবাহিনী, কট্টর মোল্লারা আর তাদের মার্কিন বন্ধুবান্ধব। কিন্তু আমরা একটি যুগপোযোগী আধুনিক সংবিধান পেয়েছি। তবে বিভিন্ন সময় এই সংবিধান সংশোধনের নামে এটিকে কাটাছেঁড়া করা হয়েছে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর জন্য একটি সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু যত দূর জানি সেই কমিটির সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। এভাবেই আমাদের সংসদীয় কমিটির ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। মহাজোট ক্ষমতায় এসেছে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে। এবারই বেশিসংখ্যক নারী সরাসরি নির্বাচন করে জয়ী হয়ে এসেছেন। অন্যদিকে সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর পরও সংসদীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে মাত্র একজন নারী রয়েছেন। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য আরো বেশি নারীকে সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। ফলে নারীরা রাজনীতিতে আসতে আরো বেশি উৎসাহী হবেন। নারীদের ক্ষমতায়ন করা হলে সমাজে নারী নির্যাতন কমে যাবে। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবেও দেশ সমৃদ্ধিশালী হবে। পুরুষদের তুলনায় নারীরা দুর্নীতিপরায়ণ কম হয়। তাই তাদের রাজনীতিতে এসে রাষ্ট্র পরিচালনায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দিতে হবে। সংসদীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার পালন করার জন্য বর্তমান সরকারের অনেক সংসদ সদস্য রয়েছেন। কেউ কেউ আবার সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি ভঙ্গ করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে ঠাঁই করে নিয়েছেন। এটা মোটেই কাম্য নয়। এ তথ্য বেরিয়ে আসার আগেই তাঁদের পদত্যাগ করা উচিত ছিল।

No comments

Powered by Blogger.