প্রকৃতি-ছাতিমের মাতাল গন্ধে শীতের বারতা by ফখরে আলম,

প্তপর্ণী, সপ্তপর্ণ, সপ্তচ্ছদ, ছাতিয়ান, ছাতিবন_অনেক নামেই পরিচিত ছাতিম। সুঘ্রাণ আর রোগ প্রতিরোধে সম্ভবত ছাতিমের শক্তিই সবচেয়ে বেশি। ঋতুচক্রের ডানায় চড়ে ছাতিম এখন এসে পেঁৗছেছে এর বিশেষ এক মৌসুমে। এখনকার সন্ধ্যা মানে ছাতিমের মাতালতার সন্ধ্যা। আঁধার যত নামে, ছাতিম হয়ে ওঠে মাতাল। রাত যত দীর্ঘ হয়, ততই বাড়ে এর মাতালতা। ফুলের ঘ্রাণ ছড়িয়ে দেয় কয়েক শ গজ পর্যন্ত। আর সে ফুলের ঘ্রাণ সবাইকে বলে দেয়, শীত আসছে।


ফুল সুদৃশ্য না হলেও গাছটি খুবই সুন্দর। শাখার অগ্রভাগ ছত্রাকার, অনেকটা ছাতার মতো। এ কারণেই এর নাম হয়েছে ছাতিম। বৈজ্ঞানিক নাম অষংঃড়হরধ ঝপযড়ষধৎরং. ১০টি ছাতিমগাছ যশোর শহরকে সুঘ্রাণে ভরে তুলেছে। অনাদর-অবহেলায় থাকলেও কার্তিকে এগুলোর জোরালো উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। ছাতিমের পাতা হচ্ছে উচ্চশিক্ষার সনদ। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরের প্রমাণপত্র হিসেবে দেওয়া হয় ছাতিমের পাতা।
চিরসবুজ ছাতিমগাছ ৪০-৫০ ফুট লম্বা হয়। ডাল ভাঙলেই বের হয় দুধের মতো সাদা আঠা। ডালের প্রতিটি আগায় ছত্রাকার সাতটি পাতা সাজানো থাকে। ফুলের শেষে চিকন বরবটির মতো ফল হয়। বাংলাদেশের সর্বত্রই ছাতিমগাছ জন্মে। দক্ষিণ ও উত্তর ভারতে সাড়ে তিন হাজার ফুট উঁচু পর্বতেও ছাতিমের দেখা মেলে। এর ছাল খেলে ও শরীরে লাগালে কুষ্ঠ ভালো হয়ে যায়। ছাতিমের ছাল পুরনো জ্বরও তাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া হাঁপানি, গাঁটের ব্যথা, সর্দি, শ্বাসকষ্ট, রক্তগুলমি, পাইওরিয়া, ব্রণ, দাঁতের ব্যথাসহ অনেক কিছুই এই ছাতিম সারিয়ে তোলে। বীজ থেকে এর চারা হয়। আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী চট্টাচার্য 'চিরঞ্জীব বনৌষধি' গ্রন্থে লিখেছেন, দেহের গঠন সাতটি ধাতু রস, রক্ত, মাংস, মেদ, অস্থি, মজ্জা ও শুক্রকে ছাতিমের সাতটি পাতা রক্ষা করে। এ কারণে আমরা বলতে পারি, 'ছাতিম প্রাণ রক্ষাকারী'।

No comments

Powered by Blogger.