বিবেক কি নাড়া দেবে? by মুহাম্মাদ রিয়াজ উদ্দিন

মরা প্রতিনিয়তই শুনছি, কোথাও না কোথাও প্রাণ হারাচ্ছে মেধাবী শিক্ষার্থীরা। আর কত এ রকম সংবাদ প্রকাশ হলে থামবে ওই মানুষ নামক ঘাতকদের কালো থাবা? সচেতন হওয়ার সময় কি এখনও হয়নি? দেশের দুই স্থানে দু'জন মেধাবী হারানোর কথাই আজ লিখছি। মানুষ হিসেবে তাদেরও ছিল স্বপ্ন আমাদের সবার মতো। মনের মাধুরী মেশানো হাজারো রঙ দিয়ে নানা রঙের স্বপ্ন আঁকত। আর এসব নানা স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে বড় হতে চেয়েছিল।


সেভাবেই নিজেদের তৈরি করার লক্ষ্যে লেখাপড়া চালিয়েছে সেঁজুতি আর মুক্তা। সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে, শিক্ষিত হয়ে সমাজের অন্ধকার দূর করবে। আলোকিত করবে পুরো দেশকে। সেঁজুতি ও মুক্তার এ রকম স্বপ্নের কথা যখন সবাই জেনেছে, তখন ওরা নেই কারও কাছে। আর কখনোই বলবে না ওরা স্বপ্নের কথা। দু'জনার আত্মহত্যার ঘটনা ভিন্ন স্থান হলেও ঘটনার প্রেক্ষাপট প্রায় একই রকম। বখাটের উত্ত্যক্ত, লাঞ্ছনা আর অপবাদ। খবরের কাগজে প্রকাশ, গ্রামের স্কুলের দশম শ্রেণী পড়ূয়া সেঁজুতির স্বপ্নগুলো অকালেই চুরমার হয়ে গেল। অধরাই থেকে গেল সবকিছু। বান্ধবীদের আর শোনাবে না ওর নিজের ইচ্ছার কথাগুলো, বড় হয়ে কী হবে_ এ রকম নানা কিছু। ছোট বোনকেও আর কখনও পড়ালেখার জন্য তাগিদ দেবে না। ২১ অক্টোবর বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের চৈতা মাধ্যমিক স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী সেঁজুতি আত্মহত্যা করে। কয়েক দিন আগে অর্থাৎ ১৩ অক্টোবর এলাকার কয়েক বখাটে তাকে অপহরণের চেষ্টা করে বলে থানায় অভিযোগ করেন তার মা হাফিজা বেগম। সেঁজুতির মা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার কিছু বখাটে যুবক তার মেয়েকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। সমাজের কাছে বিচার চেয়েও বিচার না পাওয়ার ক্ষোভে সেঁজুতি নিজ কক্ষে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। ঠিক একইরূপে বিষপানে আত্মহত্যা করে ঠাকুরগাঁও সরকারি মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মুক্তা নাহার বানু। ২৩ অক্টোবর রাতে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার বিরুদ্ধে গর্ভপাতের অভিযোগ তোলায় কয়েক বার মুক্তার বিয়ে ভেঙে যায়। এ মিথ্যা অপবাদ সইতে না পেরে সে আত্মহত্যা করে। মৃত্যুর আগে ডায়েরিতে তার আত্মহত্যার জন্য প্রতিবেশী আফসানা, তাসু ও মোহাম্মদ আলী নামে তিনজনকে দায়ী করে সে। সেঁজুতি আর মুক্তার মতো আরও অনেক মেধাবী ছাত্রীর চলে যাওয়াটা বড় কষ্টের, বড় বেদনার। ওদের আত্মাহুতির জন্য কি আমাদের কিছুই করার ছিল না? এ রকম প্রশ্ন কি আমরা কখনও নিজেদের করেছি? একটুও কি ভাবতে পারি না_ কেন সমাজ তাদের বাঁচতে দিল না? আর কারও জীবনই যেন অকালে নিভে না যায়; আত্মাহুতির মাধ্যমে যেন কোনো মেধাবী ছাত্রীর জীবন দিতে না হয় সে ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সমাজের প্রতিটি মানুষই সচেতন হবে_ এমনটি প্রত্যাশা হোক সবার।
শিক্ষার্থী, শাবিপ্রবি, সিলেট
 

No comments

Powered by Blogger.