সিপিডির হুঁশিয়ারি : বাংলাদেশ সাবধান by শহিদুল ইসলাম

ক. বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সুরে সুর মিলিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বাংলাদেশের মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, সামনে খারাপ দিন আসছে। ভালোই করেছে। ঝড় এলে বালির মধ্যে মুখ গুঁজে পড়ে থাকলে ঝড়কে অস্বীকার করা যায় না। বাংলাদেশের অর্থনীতির এক হতাশাজনক ছবি ফুটে উঠেছে ৩ নভেম্বর সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে।
'সামগ্রিক অর্থনীতিতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক ওই সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, 'দেশের অর্থনীতি এক জটিল সময়ের মধ্যে প্রবেশ করেছে।' তাঁদের মতে, 'আর্থিক খাতের অব্যবস্থাপনা, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক লেনদেনের তীব্র চাপ এবং পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে ঘূর্ণায়মান দ্বিতীয় দফার মন্দা দেশের অর্থনীতিকে আরো বেশি ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এ ছাড়াও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ধীরগতি, বৈদেশিক আয় কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না থাকা, রেমিট্যান্স-প্রবাহে নিম্নগামিতা, পুঁজিবাজারে চরম অস্থিরতা, করবহির্ভূত আয়ের নিম্নমুখিতা, সর্বোপরি ভর্তুকির প্রবল চাপ দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বলে তাঁরা মনে করেন। আমি অর্থনীতির ছাত্র নই। অর্থনীতির জটিল অলিগলিতে প্রবেশ করার কোনো যোগ্যতাই আমার নেই। আমি একজন সাধারণ মানুষ। আমার অবস্থান ছিল মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে। খেয়ে-পরে সামাজিকতায়-আতিথেয়তায় নিজের শ্রেণীগত অবস্থানটি ধরে রাখতে আমি প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিভাবে দু-চার বছরের মধ্যে ১৫-২০ কোটি টাকা আয় করতে হয়, তার অলিগলিও আমার জানা নেই। আমি অর্থনীতির কিছু বুঝি না। কিন্তু দেশের আর্থিক অবস্থা এ দেশের ১৬ কোটি মানুষের সঙ্গে আমাকেও আঘাত করে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যদি এক শতাংশ বাড়ে, বাড়তি আয়ের কোনো উপায় না থাকায় তা আমাকে বড় ধরনের চিন্তার মধ্যে ফেলে দেয়। কোথা থেকে সে বাড়তি খরচের সংস্থান হবে, সে চিন্তায় রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। তাই অর্থনীতি না বুঝলে কি হবে, দেশের অর্থনীতি সর্বক্ষণ আমাকে ব্যতিব্যস্ত রাখছে। তাই সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ অশনিসংকেতের পূর্বাভাস দিয়ে ভালোই করেছে। আমি নিজে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের সুযোগ পেলাম। এই মুহূর্তে অর্থনীতির গাড়ি চালানোর দায়িত্বে নিয়োজিত বর্তমান সরকার চিন্তা করার সুযোগ পাবে_সংকট থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খোঁজার সময় ও সুযোগ পাবে।
দুই. বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে আন্তর্জাতিক সংস্থা বলা হলেও মাত্র গুটিকয়েক দেশ এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। এটা অতি পুরনো কথা। সে কয়টি দেশের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই সব কিছুর মালিক। জাতিসংঘও তো একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। তার অধীনে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থাও আন্তর্জাতিক বলেই পরিচিত। কিন্তু আমরা দেখেছি, যুক্তরাষ্ট্র সেগুলো কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। ইউনেস্কোর কথা ধরুন। ৭০-৮০-এর দশকে ইউনেস্কো তৃতীয় বিশ্বের সংস্কৃতি নিয়ে যখন বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছিল, সেই অপরাধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউনেস্কোর চাঁদা বন্ধ করে দিয়েছিল। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রই সবচেয়ে বেশি চাঁদা দেয়, তাই তা বন্ধ হয়ে গেলে ইউনেস্কো অচল হয়ে পড়ে। অবিকল ঘটনা এবার ঘটল। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে ইউনেস্কোর সদস্যপদ দেওয়ায় ক্ষিপ্ত যুক্তরাষ্ট্র চাঁদা বন্ধ করে দিয়েছে। এভাবে সব আন্তর্জাতিক সংস্থা যদি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ না দেখে, তাহলে সবারই এই দশা হবে। পাঠক বলতে পারেন, বাংলাদেশের সিপিডির অশনিসংকেত নিয়ে লিখতে বসে শুধু শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে টানাটানি কেন? কারণ আজ পৃথিবীর প্রায় সবাই জানেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি যেমন গোটা দেশবাসীর জন্য পরিচালিত হয় না, হয় মুষ্টিমেয় শাসক শ্রেণীর শক্তি বৃদ্ধির জন্য; তেমনি বিশ্বের অর্থনীতি পরিচালিত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের শক্তি বৃদ্ধির জন্য। একটু ভুল হয়ে গেল_মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক শতাংশ মানুষের সুখ-শান্তি ও সম্পদ বৃদ্ধির জন্য। আশা করি, এর জন্য আজ আর কোনো প্রমাণ বা পরিসংখ্যানের উল্লেখ করতে হবে না। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ খোদ আমেরিকার ওয়াল স্ট্রিট দখলের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা আজ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। সে আন্দোলন ৯৯ শতাংশ মানুষের আন্দোলন_এক শতাংশ মানুষের বিরুদ্ধে। করপোরেটতান্ত্রিক অর্থনীতি 'গণতন্ত্রকে' খেয়ে হজম করে পৃথিবীর সব সম্পদের ৫০ শতাংশ মাত্র দুই শতাংশ মানুষের জিম্মায় পেঁৗছে দিয়েছে। যে করপোরেটতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন খোদ যুক্তরাষ্ট্রে এমন এক পর্যায়ে পেঁৗছে গেছে যে ক্যালিফোর্নিয়ার অকল্যান্ড বন্দর বন্ধ করে দিতে হয়েছে। পৃথিবীর আর্থিক ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও উচ্চবিত্তরাই শুধু লাভবান হচ্ছে। সে সম্পর্কে সেদিন সিপিডি সন্তর্পণে হলেও হঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিল, 'উন্নয়নশীল দেশগুলোর পুঁজি উন্নত দেশগুলোতে চলে যাচ্ছে।' বর্তমানে বিশ্বায়ন ও মুক্তবাজার অর্থনীতির যাঁরা গুণকীর্তন করেন, তাঁরাও স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছেন_ওই অর্থনীতি মুষ্টিমেয় শক্তিশালী দেশের করপোরেটের স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে। তারই ফলে পৃথিবীর অর্ধেক সম্পদের মালিক আজ মাত্র দুই শতাংশ মানুষ। এমন বৈষম্য পৃথিবীতে আর কখনো দেখা যায়নি। অর্থনীতি যখন মাত্র দুই শতাংশের নির্দেশে পরিচালিত হয়, তখন সব কিছুই তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে_এটাই স্বাভাবিক। মানুষের চিন্তা নিয়ন্ত্রণকারী মিডিয়া পুরোপুরি করপোরেটতন্ত্রের দখলে। এ সম্পর্কে বরার্ট ডাবি্লউ ম্যাককেইনের বহুল প্রশংসিত_'জরপয গবফরধ, ঢ়ড়ড়ৎ উবসড়পৎধপু' পড়ুন। তিনি প্রমাণ করেছেন, করপোরেট নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া যত শক্তিশালী ও সম্পদশালী হবে, গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎও তত বেশি দুর্বল হয়ে পড়বে। মিডিয়া আজ যেকোনো দেশের অধিবিদ্যক খবর তৈরি করতে পারে এবং তা জনগণকে বিশ্বাস করানোর ক্ষমতা রাখে।
তিন. যাক সে কথা। কথায় কথায় মূল বিষয় থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বিশ্বজনীন প্রেসক্রিপশন হলো, ভর্তুকি কমাও এবং তেলের দাম বাড়াও। তাদের সে সুরে সুর মিলিয়ে বাংলাদেশের সিপিডিও ভর্তুকি কমাতে ও তেলের দাম বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছে। দেশের ১৬ কোটি মানুষ বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সুপারিশ ও চাপ সম্পর্কে কিছু বলতে পারে না। কিন্তু সে সুপারিশ কার্যকর করতে হয় সরকার নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে। ঝক্কি-ঝামেলা সরকারকেই বহন করতে হয়। আজ মুদ্রাস্ফীতির ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামের নিচে চাপা পড়ে মধ্য ও নিম্নবিত্ত মানুষের জীবন যায় যায়। সিপিডির পরামর্শে সরকার তেলের মূল্য বৃদ্ধি ও ভর্তুকি কমিয়ে আনলে তাদের জীবন আরো বেশি দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। মধ্যবিত্ত ক্রমেই নিম্নবিত্তের সীমায় চলে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল তেলের দাম বৃদ্ধি ও ভর্তুকি কমানোর পরামর্শের সঙ্গে লোক দেখানোর দরিদ্রপ্রীতি দেখিয়েছে। বলেছে, তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও ভর্তুকি কমালে দরিদ্র জনগোষ্ঠী যেন আরো চাপের মধ্যে না পড়ে সে বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে বলেছে। তারা ভালোভাবেই জানে যে এতে মানুষের দুর্ভোগ একধাপ বাড়বে। মানুষ ক্ষুব্ধ হবে। আন্দোলন-হরতাল করবে। সেসব সামাল দেওয়ার জন্য ওই বাক্যটি উচ্চারণ করেছে। তেলের দাম বাড়িয়ে ভারত সরকার কেমন চাপের মধ্যে পড়েছে, সে খবর ইতিমধ্যে বিশ্ববাসী জেনে গেছে। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের অস্তিত্ব নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে। কেরালার কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী উমেন চণ্ডি বলেছেন, 'পেট্রোলের দামের ওপর নিয়ন্ত্রণ আবার সরকারের হাতে নেওয়া উচিত।' অর্থাৎ জ্বালানি তেলসহ বহু কিছুর ওপর আজ সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকার ঠুঁটো জগন্নাথ। করপোরেটতন্ত্রের দাবি, প্রয়োজনীয় সেবা খাতগুলো থেকে রাষ্ট্রের হাত গুটিয়ে নিতে হবে। এগুলো করপোরেটতন্ত্রের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। অর্থাৎ বিশ্বের অর্থনীতি আজ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ওয়াল স্ট্রিট থেকে। তাই বৈষম্যে জর্জরিত আমেরিকাবাসী গত দুই মাস তা দখল করার আন্দোলনে রত। বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিলে মানুষের জীবন ক্রমেই দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। একটি ছোট উদাহরণ_'উচ্চ ঋণগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য প্রণীত ঋণ মওকুফ কর্মসূচির আওতায় তানজানিয়ায় দারুসসালাম পানি ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এতকাল নিরাপদ পানি কিছুটা হলেও অন্তত দরিদ্র মানুষের সামর্থ্যের মধ্যে ছিল। বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্তের ফলে দরিদ্র জনগণ নিরাপদ পানির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।' (কাভালজিৎ সিং-১০৯)।
চার. তাই বলেছিলাম, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সঙ্গে তাল মেলানোর আগে সিপিডির দেশের ১৬ কোটি মানুষের কথা ভাবা দরকার ছিল। কারণ মানুষ ছাড়া তো আর রাষ্ট্র হয় না। আগে মানুষ, তারপর রাষ্ট্র। মানুষ কিভাবে আরেকটু ভালোভাবে বাঁচবে, সে কথাটিই সিপিডির প্রথমে চিন্তা করা দরকার ছিল। আগামীতে যে ঝড় ধেয়ে আসছে, তা ঠেকানোর জন্য আর কোনো দাওয়াই ছিল না? সিপিডি যে অশনিসংকেতের পূর্বাভাস দিল, তার পেছনে কি বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের কোনোই ভূমিকা নেই। সিপিডির প্রতিবেদনে তার উল্লেখ থাকলে ভালো হতো। আইএমএফ মূল্য সংযোজন ট্যাঙ্ (ভ্যাট) ও ব্যাংকিং কম্পানি আইনে যে পরিবর্তনের সুপারিশ (চাপ) দিয়েছিল, সরকার তা সংসদে উত্থাপন করেনি। সেই অপরাধে এক বিলিয়ন ডলার ঋণ আটকে দেয় আইএমএফ। সাহায্য ও ঋণ যে আজ একটা রাজনৈতিক হাতিয়ার তা জানতে কারো বাকি নেই। '৭৪-এর দুর্ভিক্ষ ছিল তাদেরই সৃষ্টি। বেশি দামে কিউবার কাছে পাট বিক্রির প্রতিশোধ নিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাদের চাপে আদমজি জুট মিল বন্ধ ঘোষণা করলে বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট তৎকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। লাতিন আমেরিকার বাজার হারানোর পর আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক এশিয়া ও আফ্রিকার গরিব এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর চড়াও হয়েছে জোরেশোরে। দারিদ্র্য বিমোচনের নামে তারা ঋণের বস্তাভরা ডলার নিয়ে এসব দেশে চরে বেড়ায়। যারা সেই ঋণের জালে আটকে যায়, তারা অচিরেই তাদের কুমতলব বুঝে ফেলে। তাই বাংলাদেশের প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ড. জামাল নজরুল ইসলাম ভিক্ষাকেন্দ্রিক সংস্কৃতি থেকে মুক্তি চান। (শিলালিপি, কালের কণ্ঠ ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১০)। বাংলাদেশে মাত্র সেদিন তেল-গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। সিপিডি, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের সুপারিশক্রমে যদি সরকার তেল-গ্যাসের দাম বাড়ায় এবং সেবা ও উৎপাদন খাতে ভর্তুকি কমায়, তাহলে বর্তমান সরকারকেও মনমোহন সিংয়ের মতো কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হবে। করপোরেটতন্ত্রের বিরুদ্ধে পৃথিবীর ৯৯ শতাংশ মানুষের আন্দোলনের সঙ্গে বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ যোগ দিতে চলেছে। সিপিডির বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ ও সরকারকে বুঝতে হবে, মাত্র এক বা দুই শতাংশ মানুষের জন্য একটি অর্থনীতি বেশি দিন চালু থাকতে পারে না। অতীতের অনেক শোষণমূলক অর্থনীতির মৃত্যু ঘটেছে। করপোরেটতন্ত্র অমর_এমন ভাবার কোনো কারণ নেই।
তেলের দাম বাড়লে পরিবহন ও যাতায়াত ভাড়া বাড়বে। ভাড়া বাড়লে মানুষের নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম বাড়বে। কৃষিতে ভর্তুকি কমালে কী হবে_আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও সিপিডি তা ভালোভাবেই জানে। দেশে আগুন জ্বলে উঠবে। বর্তমান সরকার কেন, কোনো সরকারের পক্ষেই তা রোধ করা সম্ভব হবে না। উন্নত বিশ্ব 'ওয়াল স্ট্রিট দখল' আন্দোলন স্তিমিতও করতে পারছে না। দিন দিন সে আন্দোলনের পরিসরের বিস্তৃতি ঘটছে। যে অশনিসংকেতের কথা সিপিডি ঘোষণা করেছে, এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; ওয়াল স্ট্রিট দখলের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। পৃথিবীর এক শতাংশ মানুষ সব কিছু দখল করতে চায়_সব কিছু নিজেরাই খেতে চায়। সেটা যে সম্ভব নয়, পৃথিবীর ইতিহাস তা বারবার প্রমাণ করেছে। সিপিডির প্রস্তাব বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নয়া সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের পূর্বাভাস।

লেখক : শিক্ষাবিদ ও সমাজ বিশ্লেষক

No comments

Powered by Blogger.