ভারতে রড রপ্তানির বিরাট সম্ভাবনা-ব্যবসায়িরা বলছেন, অশুল্ক বাধা দূর করা না হলে শুল্কমুক্ত সুবিধার পরও রড রপ্তানি করা যাবে না by রাজীব আহমেদ

শুল্কমুক্ত সুবিধার কারণে ভারতে রড ও রড-জাতীয় পণ্য রপ্তানির বিরাট সুযোগ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের জন্য। বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা ভারতের সাতটি রাজ্যে বছরে প্রায় ৩০ লাখ টন রডের চাহিদা রয়েছে। ওইসব রাজ্যে ভারতের অন্য রাজ্য থেকে রড নিয়ে আসতে বিপুল খরচ হয়। তুলনামূলক কম খরচে রড রপ্তানি করে এই চাহিদা বাংলাদেশ মেটাতে পারে। তবে শুল্কমুক্ত সুবিধার পর ব্যবসায়ীরা এখন চিন্তিত অশুল্ক বাধা নিয়ে। তাঁরা বলছেন, অশুল্ক বাধা দূর করা না হলে শুল্কমুক্ত সুবিধার পরও রড রপ্তানি করা যাবে না।


বাংলাদেশের ইস্পাত শিল্পমালিকরা জানান, ভারতের আসাম, মেঘায়ল, ত্রিপুরা, মনিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম ও অরুনাচল_এই সাতটি রাজ্যে বাংলাদেশের রডের চাহিদা রয়েছে। এসব রাজ্যে রডের বাজারের আকার বাংলাদেশের বাজারের সমান। বাংলাদেশে বছরে ৩০ লাখ টন রড ও রড-জাতীয় পণ্যের চাহিদা আছে।
ওইসব রাজ্যে ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকে পণ্য নিয়ে যেতে অনেক খরচ পড়ে; কিন্তু বাংলাদেশ থেকে যেতে খরচ পড়ে কম। ওই সাতটি রাজ্যের সঙ্গে অতীতে বাংলাদেশের রডের কিছু অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য ছিল। কিন্তু কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণের ফলে ওই বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে।
শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার আগে শুল্ক দিয়ে রপ্তানির সুযোগ ছিল; কিন্তু রডের মান সনদ-সংক্রান্ত জটিলতায় এক টন রডও রপ্তানি সম্ভব হয়নি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের পক্ষে। ব্যবসায়ীরা জানান, ওইসব রাজ্যে পণ্য নিয়ে গেলে দিলি্ল থেকে মানের সনদ আনতে হয়। ওই সনদ আনতে তিন মাস লাগে! ভারত বাংলাদেশের মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থার সনদ গ্রহণ করে না! বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা চান, ভারত বাংলাদেশের বিএসটিআইর মান সদন গ্রহণ করুক। মিলমালিকরা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের ওই রাজ্যগুলোয় শুল্কমুক্ত রপ্তানি ও অশুল্ক বাধা দূর করার দাবি জানিয়ে আসছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বিষয়টি ভারতীয় প্রতিনিধিদলের সামনে তুলে ধরার আশ্বাস দিয়েছিলেন। ভারতের কাছে বাংলাদেশের দাবি করা ৬১টি পণ্যের শুল্কমুক্ত রপ্তানির সুবিধার তালিকায় স্টিল পণ্যও ছিল। কিন্তু সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় বিনাশুল্কে রপ্তানির অনুমতি পাওয়া ৪৬টি পণ্যের মধ্যে স্টিল পণ্য ছিল না! কিন্তু গত রবিবার ভারতের দেওয়া শুল্কমুক্ত সুবিধার ১৫টি পণ্যের তালিকায় রড ও রড-জাতীয় পণ্য আছে। বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, বর্তমানে বাংলাদেশের ইস্পাত শিল্পের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৮০ লাখ টন। কিন্তু গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটসহ নানা কারণে উৎপাদন হচ্ছে ৪০ লাখ টন। এর মধ্যে দেশে ৩০ লাখ টনের চাহিদা রয়েছে। বাকি ১০ লাখ টন উদ্বৃত্ত থাকছে। শিল্পমালিকরা বলছেন, ভারতে রপ্তানি শুরু হলে তাদের উদ্বৃত্ত রডের ব্যবহার নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা হবে।
বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ মাসাদুল আলম মাসুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ভারতের সাত রাজ্যে অন্য রাজ্য থেকে রড পরিবহনে এক হাজার ৮০০ থেকে ২০০০ রুপি বেশি খরচ হয়। কিন্তু বাংলাদেশের সীমান্ত জেলাগুলোয় রড পাঠাতে যে খরচ হয় তার চেয়ে টনপ্রতি ২০০-৩০০ টাকা বেশি খরচ করলেই ভারতে রপ্তানি সম্ভব হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রডের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ভারতের রডের চেয়ে বেশি হবে।
তিনি বলেন, ভারতের অন্য রাজ্যগুলোয় বাংলাদেশ হয়তো প্রতিযোগিতায় পারবে না। কারণ সেখানে প্রচুর স্টিল মিল গড়ে উঠেছে; কিন্তু ওই সাত রাজ্যে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকবে। কারণ সেখানে স্টিল শিল্প তেমনভাবে গড়ে ওঠেনি। একটি স্টিল মিল পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে বলে আমরা শুনেছি।
অশুল্ক বাধা দূর করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের রড রপ্তানিতে শুল্কের চেয়ে বড় বাধা মান সনদ। ওই বাধার কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে এক টন রডও রপ্তানি হয়নি। সনদের বাধা থেকে গেলে শুল্কমুক্ত সুবিধার সুফল পাওয়া যাবে না। এ ছাড়া শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়ে ভারত মূল্য সংযোজন কর আরোপ করতে পারে বলেও আশঙ্কা করেন তিনি।
বাংলাদেশ স্টিল মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল মো. শাহজাহান কালের কণ্ঠকে বলেন, ভারত শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়ে অন্য কোনো শর্ত আরোপ করেছে কি-না, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তারা অনেক সময় এমন সব শর্ত দেয়, যা আমাদের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব হয় না। তবে ভারত সৎভাবে কোনো শর্ত ছাড়া বাংলাদেশকে এ সুবিধা দিলে রপ্তানি বাড়ানোর বিরাট সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশের রড-জাতীয় পণ্য রপ্তানির সক্ষমতা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের রড এখন ইউরোপেও রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানি বাড়াতে তিনি আন্তর্জাতিকভাবে বিএসটিআইয়ের মান সদন গ্রহণ করার আহ্বান জানান। ভারতের মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশের মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে পারে বলেও মত
দেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.