রাজি সৈয়দ-টেক্সটাইল ইউনিট বাংলাদেশের দিকে ধাবমান

মূলত দুটি কারণ। ১. শিল্প খাতে বিদ্যুৎ ও আয়করের প্রভাব, ২. বাজারে প্রবেশের সুবিধা।পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি টেঙ্টাইল প্রোডাক্ট ইউনিট তাদের ব্যবসা বাংলাদেশে স্থানান্তরের চিন্তাভাবনা করছে। এর কারণ হলো_বাংলাদেশ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, প্রথম ১০ বছর আয়করমুক্ত সুবিধা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে ট্যারিফমুক্ত প্রবেশের সুবিধাসহ বেশ কিছু ইনসেনটিভ দিচ্ছে।


এই সুবিধাগুলো ধরতে পাকিস্তানের অনেক ব্যবসায়ী ইতিমধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছেন। সাবেক টেঙ্টাইলমন্ত্রী মুশতাক আলী চিমা বলেছেন, 'বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অপেক্ষাকৃত সস্তা এবং সুনিশ্চিত, শ্রমিক মজুরি কম এবং সেখানকার শ্রমিকরা অধিক দক্ষ। সে তুলনায় পাকিস্তানে খরচ অনেক বেশি। পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশে লাভের পরিমাণ ৩০ শতাংশ বেশি।' ফয়সালাবাদের টেঙ্টাইল ইউনিট সে কথাই মনে করে বলে উল্লেখ করেছেন চিমা। তিনি আরো বলেছেন, 'আন্তর্জাতিক ক্রেতারা দিনে দিনে পাকিস্তানকে অর্ডার দেওয়ার ব্যাপারে নারাজ হয়ে পড়ছে। কারণ বিদ্যুতের ঘাটতির দরুন অর্ডারের সরবরাহ দিতে বিলম্ব হতে পারে। সময়মতো সরবরাহ করার বিষয়ে এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঝুঁকি খুচরা ব্যবসায়ীদের জন্য।
বাংলাদেশের প্রতি আকর্ষণের আরো একটি বড় কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশের ট্যারিফ সুবিধা। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় নাম থাকায় বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বে বিশেষ ট্যারিফমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে, যা পরোক্ষভাবে এক ধরনের সাহায্য। এ ক্ষেত্রে চিমা মনে করেন, সরকারের টেঙ্টাইল খাতকে বাঁচাতে একটি কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কারণ রপ্তানিকারক ও কারখানা মালিকরা পাকিস্তান সরকারের বর্তমান শিল্প খাত নিয়ে যথেষ্ট হতাশ।
একজন সংশ্লিষ্ট টেঙ্টাইল উৎপাদনকারী বলেছেন, ট্যারিফমুক্ত প্রবেশ একটি বড় বিষয়, যে কারণে তাঁর বাংলাদেশে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া। তিনি বলেন, 'তাঁর কারখানা বাংলাদেশে সরিয়ে নেওয়ার অন্যতম কারণ হলো, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খরচ পাকিস্তানের তুলনায় ৩৫ শতাংশ কম।'
বাংলাদেশের টেঙ্টাইল খাত বিশ্ব মানচিত্রে এতটাই প্রভাব ফেলেছে যে আন্তর্জাতিক বায়িং হাউসগুলো সেখানে তাদের অফিস খুলে বসেছে। ফলে বাধ্য হয়ে পাকিস্তানের ব্যবসায়ীরা ঢাকা সফর করছেন সেখান থেকে বিশ্ববাজারের অর্ডার ধরার জন্য। অনেক শিল্প মালিক তাঁদের ফ্যাক্টরি বাংলাদেশে স্থানান্তর করছেন। অনেকেই বাংলাদেশে অতিরিক্ত একটি তৈরি কারখানা খুলেছেন। এই অব্যাহত ধারা পরিষ্কারভাবেই পাকিস্তানের অনেক পর্যবেক্ষককে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। তাঁরা ভয় পাচ্ছেন ব্যাপকভাবে এ শিল্প পাকিস্তান থেকে বিদায় নিতে যাচ্ছে বলে। এমনটি পুরোপুরি হলে এই খাতে যে লাখ লাখ পাকিস্তানি শ্রমিক নিযুক্ত আছেন, তাঁদের জন্য ধ্বংস নেমে আসবে।
এটি পাকিস্তানের ডেইলি টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন। ভাষান্তর : মহসীন হাবিব

No comments

Powered by Blogger.