পরিবহন ভাড়া-যৌক্তিক করা অপরিহার্য

জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিক্রিয়া হয়েছে বাজারে। লঞ্চ, বাস, ট্রাক মালিকদের পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়েছে, পরিবহন ভাড়া বাড়াতে হবে। সরকার বাড়িয়েছে জ্বালানির দাম, মালিকরা বাড়াচ্ছেন পরিবহন ভাড়া, সাধারণ মানুষের উপায় হবে কী? কেউ ভাবছে না সাধারণ মানুষের দিকটা। এমনই প্রতিক্রিয়া সাধারণ মানুষের।


জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর যোগাযোগমন্ত্রী, নৌপরিবহনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন পরিবহন মালিকদের প্রতিনিধিরা। সেই বৈঠকে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে তাঁরা পেঁৗছাতে পারেননি। কিন্তু যেটুকু হয়েছে তাতেও সাধারণ মানুষের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে_এমন কথা পত্রিকান্তরে সংবাদে প্রকাশ হয়েছে। কারণ হিসেবে পরিবহন মালিকদের দাবি ও সরকারের আশ্বাস কিংবা বিবেচনার ইঙ্গিত উল্লেখ করা যায়। জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে লিটারপ্রতি পাঁচ টাকা। সেই হিসাবে ভাড়া বাড়ার কথা কিলোমিটার প্রতি পাঁচ পয়সা। কিন্তু মালিকপক্ষের দাবি কি সেখানেই থেমে থাকবে? অবশ্যই না। তাঁরা এর সঙ্গে যোগ করেছেন, আনুষঙ্গিক বিষয়ও। বিশেষ করে খুচরা যন্ত্রাংশের দাম বৃদ্ধিসহ অন্যান্য বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত করেছেন তাঁরা। এমন পরিস্থিতিতে সরকারও সেদিকেই ঝুঁকছে বলে সংবাদ পড়ে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়। সরকার যদি আনুষঙ্গিক ব্যয়বৃদ্ধিকে আমলে আনে এবং ভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনায় বসে, তাহলে এটা নিশ্চিত যে এবারও কিলোমিটারপ্রতি শুধু পাঁচ পয়সা নয়, এর চেয়ে বেশি বাড়াবে মালিকপক্ষ।
মালিকদের দাবি অনুযায়ী সরকার সিদ্ধান্ত নেবে, এমনটা ধরে নেওয়া যায়। যাত্রীদের দাবি কিন্তু অপ্রকাশ্য। তাদের বিষয় শোনার কথা সরকারের। তাদের স্বার্থ দেখার কথাও সরকারের। এখন সরকার যদি একতরফা মালিকদের স্বার্থই দেখে, তাহলে সাধারণ মানুষের আস্থা কমে যেতে বাধ্য।
এখনো বাসভাড়া সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে অনেক বেশি আদায় করা হচ্ছে। বাসমালিকরা এতটুকু হার মানছেন না। কোথাও কোথাও দ্বিগুণ ভাড়াও আদায় করা হচ্ছে। যে স্টপেজ থেকে যাত্রী তোলা হয়, তার চেয়ে এক-দুই কিলোমিটার পেছন থেকে ভাড়া আদায় ও টিকিটও দেওয়া হচ্ছে যাত্রীদের। আবার যেখানে যাত্রী নামবে তার জন্যও অতিরিক্ত দূরত্বের ভাড়া আদায় করা হচ্ছে যাত্রীর কাছ থেকে। দুরবস্থা চলছে লঞ্চেও। লঞ্চ মালিকদের সংগঠন যাত্রী পরিবহন সংস্থা নৌপরিবহনমন্ত্রী ও বিআইডবি্লউটিএকে চিঠি দিয়েছে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে তাদের যাত্রীভাড়া বাড়াতে হবে, এই দাবি জানিয়ে। শুধু তা-ই নয়, তারা ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকারকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য।
এদিকে এ মুহূর্তে জ্বালানির দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন উত্থাপন করছেন। এর ফলে বাজারে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে, তা কি ভেবে দেখা হয়েছে? আবার জ্বালানির ওপর সরকারকে যে বিশাল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, তা কিভাবে সামাল দিতে হবে_সেদিকটিও বিবেচনা করতে হবে। তবে সরকারকে সবার আগে বিবেচনা করতে হবে, সাধারণ মানুষের সুবিধা-অসুবিধার দিকটি। জ্বালানির দাম বাড়ানোর ফলে সাধারণ মানুষের যে ভোগান্তি হবে, দ্রব্যমূল্য যেভাবে বেড়ে যাবে, তা নিশ্চয়ই ভেবে দেখা দরকার। পরিবহন ভাড়া বাড়ানোর সময় সাধারণ মানুষের দিকটি যেন অবশ্যই বিবেচনায় আনা হয়।

No comments

Powered by Blogger.