পরিবহন খাতে নৈরাজ্য-ভাড়া বাড়ানোর অযৌক্তিক দাবি

ভাড়া নির্ধারণ কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া বাসভাড়া বাড়বে না_ যোগাযোগমন্ত্রীর এমন ঘোষণায় এমনকি সাময়িক স্বস্তিরও অবকাশ নেই। যানবাহনের নিত্যদিনের যাত্রীদের কাছে এ ঘোষণা পরিহাসতুল্য। ভাড়া বাড়ালে মন্ত্রীর তরফে এমনকি কঠোর শাস্তিরও হুমকি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সরকারি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই পরিবহন মালিকরা বাস-মিনিবাসের ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন এবং তা কার্যকরকরণে কোথাও কোথাও জোরজবরদস্তির খবর রয়েছে।


এমনকি সিএনজিচালিত যানবাহনেও আদায় করা হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। এ তো রীতিমতো নৈরাজ্য। কে তা রুখবে? যাত্রীরা যদি 'বাসভাড়া বাড়বে না'_ এমন সরকারি ঘোষণা কার্যকর করার জন্য চাপ সৃষ্টি করে এবং বাসের কনডাক্টর-হেলপাররা বর্ধিত ভাড়া আদায়ে অনড় থাকে, তাহলেও নৈরাজ্য সৃষ্টি হতে পারে এবং অনেক রুটে সেটা হচ্ছে বলে সংবাদপত্রে খবর রয়েছে। এটা ঠিক, ডিজেলের দাম বাড়লে বাস-মিনিবাস-ট্রাকের ভাড়া বাড়তে পারে। কিন্তু যাত্রীদের বাড়তি ভাড়ার বোঝা লাঘব করতে পরিবহন মালিকরা আগ্রহী_ রোববার ভাড়া নির্ধারণ কমিটির সভায় এমন আশ্বাস মেলেনি। যানবাহনের জন্য প্রয়োজনীয় টায়ার-টিউবসহ যন্ত্রাংশের ওপর কর ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১২ শতাংশ করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। পরিবহন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এ ধরনের পদক্ষেপের কারণে ডিজেলের দাম প্রতি লিটারে পাঁচ টাকা বাড়ানোর পরও বাস-মিনিবাস-ট্রাকের ভাড়া বাড়ানোর দরকার পড়ে না। বিআরটিএর দায়িত্বশীল সূত্র সরকারকে জানিয়েছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়তে পারে মাত্র পাঁচ পয়সা। কিন্তু সরকার মালিকদের যন্ত্রাংশের আমদানি ক্ষেত্রে যে সুবিধা দিয়েছে তাতে তাদের সার্বিক ব্যয় অন্তত তিন শতাংশ কম পড়বে এবং এর ফলে প্রতি কিলোমিটার ভাড়া সাড়ে চার পয়সা কমানো সম্ভব। এ অবস্থায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে কেন ভাড়া বাড়ানোর পাঁয়তারা, সেটা বোধগম্য নয়। সোমবার সমকালে 'টায়ার-টিউবসহ যন্ত্রাংশের কর হ্রাস_ সুফল পাবে কি সাধারণ মানুষ' শিরোনামের প্রতিবেদনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, 'বিভিন্ন সময়ে জনস্বার্থের কথা ভেবে শুল্ককর কমানো হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ সুফল পায়নি।' সরকারি পদক্ষেপের কারণে পণ্যমূল্য ও যানবাহনের ভাড়া বাড়ানো গেলে তা কমাতেও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। পরিবহন মালিকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা দিয়েছে সরকার এবং এতে রাজস্ব আয় কমে যাবে। কিন্তু মালিকরা যদি যাত্রীদের স্বার্থ উপেক্ষা করে এ সুযোগকে নিজেদের লাভ বাড়িয়ে নেওয়ার কাজে লাগান, সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ক্ষেত্রে মালিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা সরকারের জন্য বাধ্যবাধকতার পর্যায়ে পড়ে। কিন্তু মন্ত্রিসভার একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য যদি মালিকদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে অন্যায়ভাবে বাসের ভাড়া বাড়ানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন এবং সরকার এ অযৌক্তিক দাবির জোরালো প্রতিবাদ না করে 'আপাতত ভাড়া বাড়ানো হবে না' বলে সুখে দিবানিদ্রায় চলে যায় তাহলে বলতে হয়, সুশাসনের বড়ই অভাব। জনসাধারণের জন্য এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কিছুই হতে পারে না। আমজনতার স্বার্থের পক্ষে অবিচল থাকার কথা সরকারের। তারা কাজ করবে যুক্তি ও বিচারবুদ্ধি দিয়ে। অন্যায়ের সঙ্গে করা হবে না আপস। কিন্তু এমন লক্ষণ যে মোটেই দৃশ্যমান নয়।

No comments

Powered by Blogger.