কেরানীগঞ্জে জড়ো করা হয়েছে ৩০০ লোকঃ পদ্মা সেতুতে কাজ দেওয়ার কথা বলে টাকা আদায়! by ইকবাল হোসেন

দ্মা সেতুতে কাজ দেওয়ার কথা বলে তিন শতাধিক ব্যক্তিকে বিভিন্ন এলাকা থেকে এনে ঢাকার কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর ভাওয়ারভিটি এলাকায় রাখা হয়েছে। তাঁদের কাজ ভেদে ১২ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা মাসিক বেতন দেওয়ার লোভ দেখানো হয়েছে। আর সেতুতে দীর্ঘ সময়ের জন্য কাজ দেওয়ার কথা বলে তাঁদের কাছ থেকে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার করে টাকা নেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভাওয়ারভিটি এলাকায় গিয়ে জানা যায়, জমি ভাড়া নিয়ে মাস খানেক আগে বড় দুটি টিনের ঘর তোলে তিতাস আর্কিটেক লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। দিন দশেক আগে তারা সেখানে প্রায় ৩০০ লোক নিয়ে আসে। ওই দুই ঘরেই লোকগুলো থাকছেন এবং রান্নাবান্না, খাওয়াদাওয়া করছেন। বাইরে আছেন নিরাপত্তাপ্রহরী।
সেখানে অবস্থানকারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিজ নিজ এলাকার ‘লোকজনের’ মাধ্যমে তাঁরা তিতাস আর্কিটেক নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অফিসে যান। পদ্মা সেতুতে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিভিন্ন রকম কাজ দেওয়ার কথা বলে তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা করে নিয়েছে তিতাস আর্কিটেক। কিন্তু দুই মাস পেরিয়ে গেলেও কাজ দেওয়া হচ্ছে না। প্রদান করা হচ্ছে না কোনো বেতন-ভাতাও।
মো. রব্বানী নামের এক যুবক জানান, লোকমুখে খবর পেয়ে তিনি ঢাকার পুরানা পল্টনের নূরজাহান শরিফ প্লাজার তৃতীয় তলায় তিতাস আর্কিটেক লিমিটেডের কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন। তাঁকে ড্রাইভার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। বেতন ধরা হয় ২৩ হাজার টাকা। দুই মাস পেরিয়ে গেলেও তাঁকে কোনো কাজ দেওয়া হয়নি।
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের মুসাপুর গ্রামের মো. শামীম জানান, তিনি রংমিস্ত্রির কাজ করেন। চার দিন আগে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে তিনি কাজ নিয়েছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতুতে রং করার কাজ দেওয়া হবে তাঁকে।
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থানার বাসিন্দা মো. জলিল জানান, পদ্মা সেতুতে শ্রমিকের কাজ পাওয়ার জন্য গত মাসে তিনি তিতাস আর্কিটেক লিমিটেডকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন। এরপর তাঁকে এখানে এনে রাখা হয়েছে। জলিল আরও জানান, তাঁর এলাকার ৬০-৭০ জন বেকার যুবক তাঁর মতো এখানে এসেছেন। তবে তাঁদের কাউকেই কোনো কাজ দেওয়া হয়নি।
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানার সুগোনা গ্রামের মো. আবুল কালাম বলেন, ‘কাজ দেওয়ার কথা বলে আমার সঙ্গে এলাকার সাতজনকে এখানে নিয়ে এসেছে কোম্পানির লোকজন। আমাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০ হাজার করে টাকা নিয়েছে কোম্পানি। কিন্তু আমাদের এখনো কোনো কাজ দেয়নি।’
এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিতাস আর্কিটেক লিমিটেডের পরিচালক দাবিদার মো. কামরুজ্জামান তাঁদের কোম্পানির চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
সিরাজুল ইসলাম মুঠোফোনে গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতুতে কাজ করার লোক সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁর কোম্পানির চুক্তি আছে। সে অনুযায়ী তাঁরা লোকজন সংগ্রহ করেছেন। শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। সিরাজুল বলেন, এখন পদ্মা সেতুর কাজ ঝুলে যাওয়ায় তাঁদের ঢাকার যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজে লাগানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
পদ্মা সেতুসংশ্লিষ্ট কোন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁর চুক্তি হয়েছে জানতে চাইলে সিরাজুল ইসলাম কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার নাম বলতে পারেননি।
যোগাযোগ করা হলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুনর্বাসন) মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, কারও সঙ্গে এ ধরনের কোনো চুক্তি করার সুযোগই নেই। কারণ, মূল সেতুর ঠিকাদারই নিয়োগ হয়নি, কাজও শুরু হয়নি। তা ছাড়া পুনর্বাসন-প্রক্রিয়াও শেষ পর্যায়ে। তাই শ্রমিক নিয়োগের চুক্তি করার প্রশ্ন আসে না।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (প্রশাসন) সাখাওয়াত হোসেন জানান, ওই সব লোককে কেন এখানে এনে রাখা হয়েছে, তাঁরা তা জানেন না। তবে বিষয়টি পুলিশ খতিয়ে দেখবে।

No comments

Powered by Blogger.