পুরনো পেসমেকারে নতুন জীবন!

ভারতের টেঙ্টাইল মিল শ্রমিক চন্দ্রকান পাওয়ারের (৬১) হৃদস্পন্দন প্রতি মিনিটে ছিল মাত্র ২০-৩০। মৃত্যুর খুব কাছে চলে গিয়েছিলেন তিনি। তবে গত সেপ্টেম্বরে তাঁর হার্টে পেসমেকার লাগানোর পর থেকে আবারও সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিনি। হার্টের অস্বাভাবিক গতি ঠিক করতে পেসমেকারের ব্যবহার পৃথিবীতে এখন সাধারণ ঘটনায় পরিণত হলেও চন্দ্রকানের ঘটনাটা চমকপ্রদ। কারণ তাঁর দেহে লাগানো হয়েছে আগে একবার ব্যবহৃত পেসকেমার।


চন্দ্রকানের দেহে প্রতিস্থাপনের আগে ওই পেসমেকারটি যুক্তরাষ্ট্রের এক ব্যক্তির দেহে ব্যবহৃত হয়েছিল। ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পর পেসমেকারটি খুলে নেওয়া হয় এবং কার্যকর থাকায় যন্ত্রটি দান করে দেওয়া হয়। পরে বিনা মূল্যে সেটি চন্দ্রকানের দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়। চন্দ্রকান বলেন, 'এখন বেশ ভালো লাগছে। এখন আর মাথা ঘোরা ভাব হয় না। মনে হচ্ছে নতুন জীবন পেয়েছি।' ভারতে নতুন একটি পেসমেকার লাগাতে দেড় লাখ রুপির মতো খরচ হয়।
মুম্বাইয়ের ব্যক্তিমালিকানাধীন হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে চন্দ্রকানের চিকিৎসা হয়েছে। গত এক দশক ধরে হাসপাতালটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে 'সেকেন্ড হ্যান্ড' পেসমেকার সংগ্রহ করছে। কোনো ব্যক্তির দেহ থেকে অপসারণ করা হয়েছে বা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেলেও অব্যবহৃত রয়েছে, এমনসব পেসমেকার সংগ্রহ করে তারা। প্রথমে জীবাণুমুক্ত ও পরে সংস্কার করা হয় যন্ত্রগুলোর। ভারতে যেসব গরিব রোগীর নতুন পেসমেকার লাগানোর সামর্থ্য নেই তাঁদের বিনা মূল্যে এসব যন্ত্র সরবরাহ করছে হাসপাতালটি।
যুক্তরাষ্ট্রে মরদেহ সংরক্ষণ ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করে (ফিউনারেল হোম)_ এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তায় ৫৩টি পেসমেকার সংগ্রহ করেছে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল। ৩৭ ব্যক্তিকে প্রথমবারের মতো পেসমেকার লাগিয়ে দেওয়া এবং আগের পেসমেকার অকেজো হয়ে গেছে এমন ব্যক্তিদের বাকি ১৬টি দেওয়া হয়েছে।
এ উদ্যোগের পেছনে যিনি রয়েছেন তাঁর নাম ড্যানিয়েল মাসকারেনহাস। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় কাজ করছেন। পেসমেকার ছাড়াও তিনি করোনারি স্টেন্টস (টিউব) ও ডিফাইব্রিলেটর প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এসব যন্ত্র আগে একবার ব্যবহৃত হয়েছে। গত অক্টোবরে আমেরিকান জার্নাল অব কার্ডিওলজি সাময়িকীর প্রতিবেদনে মাসকারেনহাস ও টেঙ্াস হেলথকেয়ার সেন্টারে তাঁর সহকর্মী ভারত কাঠারিয়া তাঁদের কর্মপরিকল্পনার বর্ণনা করেন। রিকন্ডিশন্ড যন্ত্র ব্যবহারের উদ্যোগটিকে 'নিরাপদ ও কার্যকর' বলে উল্লেখ করেছেন তাঁরা।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাসকারেনহাস বলেন, 'অনেক চিকিৎসকই যখন গলফ খেলে সময় কাটান তখন আমি ফিউনারেল হোমগুলোতে যাই। পাঁচ বছরের মতো মেয়াদ আছে, এমন কোনো পেসমেকার খুঁজে পেলে কোটি টাকা পাওয়ার মতো আনন্দ হয়। আমি খুশি হই, কারণ ভারতে এমন কেউ সেটি পাবে যাঁর চিকিৎসা করানোর আর্থিক সঙ্গতি নেই।' পুরোনো যন্ত্র ব্যবহার করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সংক্রমণ বা যন্ত্র অকেজো হয়ে যাওয়ার অভিযোগ আসেনি বলেও জানান তিনি। সূত্র : এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.