ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ-৩৭ জেলায় নতুন লাইসেন্স দেবে এমআরএ by শেখ আবদুল্লাহ

দেশের ৩৭টি জেলায় ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নতুন করে লাইসেন্স দেবে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ)। এমআরএ মনে করে, এ ৩৭টি জেলায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর তুলনায় ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম পর্যাপ্ত বিস্তার লাভ করেনি। এ জন্য এসব জেলায় এরই মধ্যে সরকারের বিভিন্ন আইনের অধীনে নিবন্ধন নিয়ে কাজ করছে অথবা কাজ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে_ এরকম প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়ার জন্য আবেদন চেয়েছে


এমআরএ। সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে এমআরএ এই আবেদন আহ্বান করে। এমআরএ নতুন করে যে ৩৭টি জেলায় ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য লাইসেন্স দিতে চাচ্ছে সেগুলো হলো_ বরিশাল, জামালপুর, খাগড়াছড়ি, ভোলা, ময়মনসিংহ, বরগুনা, খুলনা, শেরপুর, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, হবিগঞ্জ, বান্দরবান, সিরাজগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, রাঙামাটি, লালমনিরহাট, যশোর, কুড়িগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রংপুর, চুয়াডাঙ্গা, নীলফামারী, নাটোর, কক্সবাজার, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জ, রাজবাড়ী, বগুড়া, নোয়াখালী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মাদারীপুর ও ঠাকুরগাঁও।
এ ৩৭ জেলার দরিদ্র জনসাধারণের ৬০ শতাংশের কম মানুষ ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে সমকালকে জানান এমআরএর পরিচালক মোঃ সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বলেন, দেশের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অনেক জেলায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অনুপাতে প্রয়োজনীয় ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ হচ্ছে না। সেখানে প্রয়োজনীয়সংখ্যক প্রতিষ্ঠান নেই। এ জন্য এসব জেলায় নতুন করে লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এমআরএ কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, সম্পূর্ণ নতুন এবং যেসব ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান এখনও এমআরএর লাইসেন্স পায়নি তারা আবেদন করতে পারবে। এমনকি এসব জেলার যেসব প্রতিষ্ঠান এমআরএর কাছে আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে তারা আবেদন করতে পারবে। আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত এসব জেলার প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নেওয়ার আবেদন নেবে এমআরএ। তবে যেসব প্রতিষ্ঠান আবেদন করবে তাদের অবশ্যই সোসাইটিজ রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট-১৮৬০, ট্রাস্ট অ্যাক্ট-১৮৮২, ভলেন্টারি সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার এজেন্সিস অর্ডিন্যান্স-১৯৬১ এবং কোম্পানি আইন ১৯৯৪-এর যে কোনো একটির অধীনে নিবন্ধিত হতে হবে। আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্ভাব্য কর্মপরিকল্পনা বিশ্লেষণ করে এমআরএ লাইসেন্স দেবে।
পিকেএসএফের তথ্যমতে, দেশে এ পর্যন্ত আড়াই থেকে পৌনে ৩ লাখ কোটি টাকা ক্ষুদ্রঋণ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। আর বর্তমানে গ্রাহকদের হাতে রয়েছে ২২ হাজার কোটি টাকার ঋণ। দেশে বর্তমানে ঋণগ্রহীতার সংখ্যা সোয়া ২ কোটির মতো। বর্তমানে এমআরএর লাইসেন্স নিয়ে ৬০০ প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
দেশের ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম তদারক ও মনিটরের মাধ্যমে এদের কার্যক্রমের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা ও তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার ২০০৬ সালের আগস্টে এমআরএ প্রতিষ্ঠা করে। দেশের ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে সনদ প্রদান এবং আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে কি-না তা দেখা এমআরএর অন্যতম প্রধান কাজ। এমআরএর লাইসেন্স ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান দেশে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে না। শুরু থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত এমআরএ ৫৯৯টি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দিয়েছে। সর্বশেষ প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র এমআরএর লাইসেন্স পেয়েছে। এমআরএর লাইসেন্সের জন্য নূ্যনতম যোগ্যতা হিসেবে কমপক্ষে এক হাজার সদস্য অথবা ৪০ লাখ টাকা ঋণ স্থিতিকে বিবেচনা করা হয়। যদিও এমআরএ পরিস্থিতি বিবেচনায় এ যোগ্যতা শিথিল করতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.